ছবি: সংগৃহীত।
দক্ষিণাঞ্চল কি কোনও দাক্ষিণ্যই পাবে না। চিরটা কাল কি অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকবে। অপলকে দেখবে বাংলাদেশের বাকি দিকের অবর্ণনীয় উন্নয়ন। গভীর অভিমান নিয়ে প্রতীক্ষা করবে দক্ষিণীবার্তার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন দক্ষিণের মনের কথা। তাঁর চোখে কেউ কম-বেশি নয়, সবাই সমান, প্রমাণ দিলেন। দক্ষিণের দরজা খুললেন প্রবল আঘাতে। এগোনোর আহ্বান প্রগতির পথ ধরে। চলার সূচনা ২০১৩-র ১৮ নভেম্বর, পায়রা সমুদ্রবন্দর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে। এটাই তৃতীয় বন্দর। চট্টগ্রাম, মংলা ছিলই। পায়রা ডানা মেলতেই দক্ষিণের ছবিটা পাল্টালো। বন্দর মানেই আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। দেওয়া নেওয়া বিশ্ব জুড়ে। চিনের জাহাজ যখন পায়রা বন্দরে এসে ভিড়ল, উৎসবের উল্লাস। পণ্য ওঠানো নামানোর উৎসাহ। কর্মসংস্থান হল মানুষের। স্থানীয় লোকজন বন্দর ছেড়ে নড়তেই চায় না। এমন কাণ্ড যে দেখেইনি কখনও। পাশের পায়রা নদীতে নৌকা ভাসতে দেখেছে। বিদেশ থেকে বিশাল জাহাজ এসে নোঙর করেছে পায়রা বন্দরে, ভাবতেই পারে না। বন্দরের নামটা হাসিনারই দেওয়া। তিনি অন্য কোনও নামও দিতে পারতেন। দেননি। তাঁর যুক্তি, পায়রা শান্তির প্রতীক। এই বন্দর থেকে দুনিয়ায় শান্তির বার্তাই দেবে দক্ষিণাঞ্চল।
আরও পড়ুন
আতঙ্কে শুরু, স্বস্তিতে শেষ, গুলশন হামলাই বাংলাদেশের টার্নিং পয়েন্ট
বন্দর হল আর দায় মিটল, এমনটা নয়। পায়রা ঘিরে একের পর এক প্রকল্প। প্রথম কাজটাই হল, পায়রাকে ঢাকার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া। সড়ক আছে। তেমন সুগম নয়। রেলপথ হলে আর কথাই চলে না। নিশ্চিন্তে পায়রা-ঢাকা সফর। দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। হাইফেনের মতো জুড়ে দেবে দুটি অঞ্চল। সময়টা যত কমানো যায় তত ভাল। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটলে, চার ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। স্পিড আরও বাড়ালে তো কথাই নেই। যতটা সম্ভব উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ।
সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত ব্রিটেনের ডিপি রেলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের। রেললাইন নির্মাণে ডিপি রেলের আন্তর্জাতিক সুনাম। রেলের কাজ করার ডাক পায় অন্য দেশ থেকে। সব দিক ভেবে তাদেরই বরাত দেওয়া। নকশা তৈরি থেকে লাইন বসানোর সব কাজই তারা করবে। আর্থিক সাহায্যের হাতও বাড়াবে। তাদের সহযোগিতার জন্য থাকবে চিনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন। তারা পদ্মা সেতুতে রেললাইন নির্মাণের কাজও করছে। অভিজ্ঞতা অনেক। বাংলাদেশে রেলপথ কম, সড়ক যোগাযোগই বেশি। যে টুকু আছে তার অনেকটাই মিটার গেজ। তাতে রেক পাওয়ার অসুবিধে। ভারত-ইন্দোনেশিয়ায় যে রেক তৈরি হয় সবই ব্রডগেজের। বাংলাদেশের নতুন রেললাইন হবে ব্রডগেজের।
ঢাকা-পায়রা বন্দর রেললাইন তৈরির ব্যয় ৬০ হাজার কোটি টাকা। অনেকটা পথ। লাইন বসাতে সময় লাগবে। একসঙ্গে পুরোটা না হলেও কিছুটা কিছুটা করে শেষ করা যাবে। প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে ২০২৪-এ। এই লাইনে জুড়ে যাবে বরিশালে। এখন নদীপথে সেখানে যাওয়াই সহজ। ঢাকার বুড়িগঙ্গার সদরঘাট থেকে রাত্রে লঞ্চে উঠলে প্রত্যূষেই বরিশাল। চমৎকার জার্নি। মুরগির ঝোল ভাত খেয়ে নদীর কালো জলের দিকে তাকিয়ে নিশিযাপন। ট্রেনের সফর হবে অন্য রকম। সময় লাগবে অনেক কম।