বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফাইল ছবি
দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে পৌঁছলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠকে অংশ নিয়েছেন তারা। চামেলি কক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দুপক্ষের স্বার্থ বিষয় নিয়ে বৈঠক শুরু করেছেন। এই বৈঠকের পর দুই রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিতিতে কয়েকটি উন্নয়ন ও ঋণ চুক্তি সই হতে পারে।
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি ঢাকার একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে ২৫টি। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, জ্বালানি-সহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতামূলক চুক্তি ও সমঝোতার আওতায় চিনের কাছ থেকে ২০০০ থেকে ২৫০০ কোটি ডলারের সহায়তার আশা করছে বাংলাদেশ।
দুপক্ষের বৈঠকের পর চিনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ বিবৃতি বলে জানা যাচ্ছে।
আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ চিনা প্রেসিডেন্টের বিমান পৌঁছয় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরে শি জিনপিংকে রেড কার্পেট সংবর্ধনা জানানো হয়।
‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতিতে চলা কমিউনিস্ট চিনের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবেই শি জিনপিংয়ের এই সফর। তিন দশক পর চিনের কোনও সর্বোচ্চ নেতা বাংলাদেশে এলেন। এই সফর ঘিরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন বাতাবরণ দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বঙ্গপোসাগরের কোলের বাংলাদেশে চিনা প্রেসিডেন্টের এই সফর অনেক গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা। জিনপিং-এর সফরে চিন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘একটি নতুন যুগের সূচনা’ করবে বলে মন্তব্য করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা জানান। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, বাংলাদেশ আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবাহিনীর দুটি জেট চিনের প্রেসিডেন্টের বিমানকে এসকর্ট করে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর ২১ বার তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্থলসেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ দল চিনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেয়।
পরে চিনের প্রেসিডেন্ট ডায়াস থেকে সম্বর্ধনা গ্রহণ করবেন। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে সঙ্গে নিয়ে গার্ড পরিদর্শন করবেন। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে চিনা প্রেসিডেন্টকে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় এখানেই থাকবেন চিনের প্রেসিডেন্ট।
হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী হোটেল লা মেরিডিয়ানে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এখানেই আজ চিনা রাষ্ট্রপ্রধান বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন। শি জিনপিং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে চিনা প্রেসিডেন্ট রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর সকাল ১০টায় ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন। গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন শি জিনপিং।
আরও পড়ুন:
চিনা প্রেসিডেন্টের সফর, নতুন যুগের সূচনা দেখছে ঢাকা