বুধবার শেষ দিন ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার। বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা পড়েছে প্রায় ৩০০০। তবে আসন সমঝোতা না হওয়ায় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী— কোনও জোটই তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। তার ফলে একই দলের একাধিক করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়ে রেখেছেন। প্রার্থী কে ফয়সালা হলে বাকিরা তাঁর সমর্থনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন, এমনটাই আশা করছেন জোটের নেতারা।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বহু দিন ধরেই জামাতে ইসলামি-সহ ১৯টি দলের জোট রয়েছে। আবার নির্বাচনের আগে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে মিলে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৭টি দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে এখনও কোনও ঐকমত্য হয়নি। এর মধ্যেই গোল বেধেছে রেজিস্ট্রেশন খারিজ হয়ে নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে লড়ার অধিকার হারানো মৌলবাদী দল জামাতে ইসলামিকে নিয়ে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে কামাল হোসেন, আসম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের জোট-শর্ত ছিল, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া জামাতের সঙ্গে বিএনপি আসন সমঝোতা করতে পারবে না। কিন্তু দফায় দফায় আলোচনার পরে জামাতকে ২৫টি আসন ছেড়েছে বিএনপি। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে আরও ২২টি আসনে নির্দল হিসাবে লড়ছে জামাত। তার চেয়েও বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উত্তরাধিকারী বলে নিজেদের দাবি করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে লড়বে, বিএনপির সেই প্রতীক নিয়ে লড়বে জামাতও— যাদের প্রার্থী তালিকায় দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনরা রয়েছে।
শুধু শরিকি কাঁটা নয়, বিএনপিকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে মঙ্গলবারের হাইকোর্টের রায়ও। দু’বছরের বেশি দণ্ডিত কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না, বলা হয়েছে সেই রায়ে। এর ফলে নেত্রী খালেদা জিয়াই শুধু নয়, দলের প্রথম সারির অন্তত এক ডজন নেতা প্রার্থী হতে পারছেন না। বুধবার দক্ষিণের সাতক্ষীরার একটি আসনে তড়িঘড়ি বিকল্প প্রার্থী বাছাই করে তাঁর হাতে মনোনয়নের চিঠি পৌঁছে দিতে হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হয় বিএনপি নেতৃত্বকে। আবার নিজেদের ১৪ দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি মোটামুটি সেরে ফেলতে পারলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ আটকে গিয়েছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতায়। শেখ হাসিনার দল ৪৭টি আসন তাদের ছাড়তে রাজি হলেও অন্তত ১৫০টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে হুসেইন মহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির অনেক নেতা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, প্রার্থী করার জন্য তাঁদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়েছেন নেতৃত্ব। সে অভিযোগের জবাব মেলেনি, কারণ ‘অসুস্থ হয়ে’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এরশাদ ও তাঁর স্ত্রী রওশন।