গুলশন হামলায় আগেই জড়িয়ে গিয়েছিল ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। পুলিশের গুলিতে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র নিবরাস। এ বার গুলশন হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য-সহ চার জনকে। গুলশনের হামলাকারীদের ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগেই এই গ্রেফতার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্তা মাসুদুর রহমান জানান, শনিবার বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট গ্রেফতার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এস এম গিয়াসুদ্দিন আহসানকে। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ভাগ্নে আলম চৌধুরী এবং ফ্ল্যাটের ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান তুহিনকেও। আর শনিবার রাতে ঢাকার পশ্চিম শেওড়াপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে। রবিবার ধৃত চার জনকে আট দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে ঢাকার এক আদালত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন বলেছেন, তদন্তে সকলকে তাজ্জব বানিয়ে দেওয়ার মতো অনেক তথ্য সামনে আসছে। যথাসময়ে সে সব সবাইকে জানানো হবে।
তার আগে গুলশন হামলার ঘটনায় সহ-উপাচার্য আহসান গ্রেফতার হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আহসানের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেটিই আহসান জঙ্গিদের ভাড়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তবে আহসানের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘মূলত ফ্ল্যাটটি দেখভাল করতেন আলম চৌধুরী। মে-র মাঝামাঝি ফ্ল্যাটটি কয়েক জন যুবককে ভাড়া দেওয়া হয়। জুন মাস থেকে তারা ওই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছিল। কাদের ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, তা আলম আর তুহিনই ভাল বলতে পারবে।’’
গোয়েন্দারা নিশ্চিত গুলশনের হামলাকারীদেরই ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সূত্রে খবর, এক সহযোগীর মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি গুলশনের হানাদারেরা ভাড়া নিয়েছিল। ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ছিল ২২ হাজার টাকা। জঙ্গিরা দু’মাসের অগ্রিম ভাড়া হিসেবে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল। ফ্ল্যাটটিতে তল্লাশি চালিয়েও জঙ্গি যোগের প্রমাণ মিলেছে। ফ্ল্যাটটি থেকে বালি ভর্তি কার্টন এবং জঙ্গিদের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের ধারণা, বালি ভর্তি ওই কার্টনগুলিতে গ্রেনেড রাখা হয়েছিল।
প্রশাসনের নির্দেশিকা অনুযায়ী কাউকে বাড়িভাড়া দিলে বাড়ির মালিককে ভাড়াটের সম্পর্কে স্থানীয় থানায় জানাতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এমনকী গুলশনে জঙ্গিহানার পরেও ভাড়াটেদের বিষয়ে কোনও তথ্য আহসান পুলিশকে জানাননি। আর এই সব বিষয়ে আহসানকে তাঁর ভাগ্নে আলম এবং ফ্ল্যাটের ম্যানেজার তুহিন সাহায্য করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জঙ্গি যোগের অভিযোগ উঠেছে আগেও। ২০১৩ সালে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রকে গ্রেফতার করেছিল। তার পর থেকেই পুলিশের নজর রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির উপর। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ- উপাচার্য গ্রেফতার হওয়ায় জঙ্গিদের শিকড় প্রতিষ্ঠানের অনেক গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম।