ছায়ানট মিলনায়তনে চারশো শিল্পীর শেষ মহড়ায় বারবার গাওয়া হচ্ছিল গানটি- আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও। ১৪২৪ বঙ্গাব্দে রাজধানীর রমনা ছায়াতল প্রথম প্রভাতের আলো মাখবে ছায়ানট পরিবেশিত এই গানে। কেন এই গান? সভাপতি সনজীদা খাতুন বললেন, ৫০ বছর আগে ১৯৬৭ সালে এই পঞ্চবটী তলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানেও গাওয়া হয়েছিল গানটি। প্রতিষ্ঠানটির বর্ষবরণের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রথম আয়োজনের অনেক গানই গাওয়া হবে। ২০০১ সালে ছায়ানটের বর্ষ বরণের সময়ে বোমা হামলা হয়েছিল যে গানটি চলাকালীন- গাওয়া হবে সেই গানটিও। এমনই গানে আর পাঠে মুখর থাকবে রাজধানীর পয়লা বৈশাখের ভোর। আহ্বান থাকবে শান্তি আর মানবতার।
পয়লা বৈশাখ সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকার আর এক আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গত নভেম্বরে স্থান পাওয়া এই শোভযাত্রার প্রস্তুতিতে তাই এবার বাড়তি রঙ।
১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া 'আনন্দ শোভাযাত্রা' পরের বছরই নাম বদলে হয় 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'। আর এ বছর এটি পরিণত হয়েছে জাতীয় উৎসবে। সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলের দিকে যাত্রার এই উৎসব।
চারুকলা অনুষদের এবারের শোভাযাত্রা থিম 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর'।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনে এবারের শোভাযাত্রায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে গেল শোভাযাত্রার থিম মোটিভগুলোই। আর এবারের থিমকে ফুটিয়ে তুলতে সূর্য তো থাকছেই।
শোভাযাত্রা সফল করতে ফুরসত নেই শিক্ষার্থীদের। তাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন প্রাক্তনরাও। এই শোভাযাত্রার ঐতিহ্যও এটা। সবার সহযোগিতা আর শিল্পকর্ম বিক্রির অর্থেই যে এই শোভাযাত্রা। অহংকারের এ আয়োজন যে ভাল চোখে দেখে না দেশের উগ্র মৌলবাদী শক্তি সেটা কার না জানা। তবে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বলছেন, “লোকজ সম্ভারের এই শোভাযাত্রা বাংলার শেকড়। কারও চোখ রাঙানিতে তা বন্ধ হবে না। এই বাংলায় অন্ধকারের স্থান নেই।”
রাজধানীতে বর্ষবরণের বড় এই দুই আয়োজনের পাশাপাশি থাকছে আরও শত আয়োজন। সারা দেশই তো রঙিন হচ্ছে নতুন বছরের আবাহনে। উৎসবমুখর দিনটির সব আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থাই নিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও ছাড় নয়, জানিয়ে দিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। নিরাপত্তা ইস্যুতে রাজধানীতে সব আয়োজন সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করতে বলা হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: কৃষকদের বাঁচাতে জাপানি নৈপুণ্যে বিশাল শস্যাগার বাংলাদেশের বগুড়ায়
সব প্রস্তুতিই শেষ। এখন শুধু নতুন প্রভাতের অপেক্ষা। উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় বাঙালি। এটাই যে বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব!