সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এখন বাঘের সংখ্যা ১০৬। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
সোমবার বনমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুন্দরবনের বাঘরক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাঘের আবাসস্থল, জীবনাচরণ ও প্রজনন এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’’
২০১৬-র বিশ্ব বাঘ দিবসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুন্দরবনে গত ১১ বছরে বাঘের সংখ্যা কমে এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। ২০১৫-র ২৬ জুলাই ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৯টি। অথচ ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বনবিভাগ প্রথম বারের মতো বাঘের পায়ের ছাপ গুণে সংখ্যা নির্ধারণ করেছিল ৪৪০টি। দু’বছর পর ২০০৬ সালে ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করে এর সংখ্যা নির্ধারণ করে ২০০টি। রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত ‘প্রথম বিশ্ব বাঘ সম্মেলন’-এ ২০২২ সালের মধ্যে যেখানে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেখানে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমেই চলেছে।
বাঘ কমে যাওয়ার কারণ
সুন্দরবনে বাঘের প্রকৃত আবাস ম্যানগ্রোভ বনে। কিন্তু নদ-নদীর জলে লবণের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার কারণে বন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরী, গোলপাতা-সহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। এ ছাড়া উষ্ণতা, মানুষের উপস্থিতি, জলে লবণের আধিক্য, বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় কারণে করুণ অবস্থা সুন্দরবনের বাঘের। তাপমাত্রার হেরফেরে মৌসুমি বায়ু নির্দিষ্ট সময়ে আসে না। ফলে সময়মতো বৃষ্টিও হচ্ছে না। আবার কখন কখনও অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে পরিমাণের চেয়ে ঢের বেশি। এর প্রভাবে সুন্দরবনে গাছ মরছে। কমছে বাঘের সংখ্যা।
বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। কারণ হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জলবায়ুর পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে এক দিকে বন ধ্বংস হচ্ছে, অন্য দিকে ধ্বংস হওয়া এলাকায় নতুন বসতি গড়ে উঠছে। এতে বনের ওপর নিভর্রশীল মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আর এ কারণে বাঘের স্বাভাবিক চলাচলের স্থান ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে।
বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।—ফাইল চিত্র।
বন বিভাগের তথ্য
বন বিভাগ জানাচ্ছে, গত ১২ বছরে চোরা শিকার-সহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে ১৭টি বাঘ মারা গেছে। পরিবেশবিদদের হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা ৩০টি। ২০০১ থেকে ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৩০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি পূর্ব সুন্দরবনে আর ১৪টি পশ্চিম অঞ্চলে মারা গিয়েছে।
আরও পড়ুন