হিমাচল প্রদেশের পালমপুর থেকে সড়কপথে আধ ঘণ্টার দূরত্ব বৈজনাথের। এই এলাকা বিখ্যাত বৈজনাথ শিবের মন্দিরের জন্য। যে মন্দির দর্শনে হাজার হাজার মানুষ আসেন বছরভর।
জনশ্রুতি বলে, গোমতী নদী এবং গড়ুর গঙ্গার মিলনস্থলে পার্বতীকে বিয়ে করেন মহাদেব। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সেখানেই থেকে যাবেন আজীবন। পরে সেই সিদ্ধান্ত বদল করে শিব-পার্বতী রাতটুকু সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো নাকি শিব এবং পার্বতী কেউ-ই নিজেদের আসল পরিচয় না দিয়ে ছদ্মবেশ নেন। রাত্রিবাসের জন্য শিব নিয়েছিলেন বৈদ্যের ছদ্মবেশ। সে সময়ে হিমালয়ের ওই এলাকায় কাত্যুরি রাজাদের রাজত্ব। রাজা সে দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মৃত্যু আসন্ন শুনে বৈদ্যের ছদ্মবেশে থাকা শিব ওষুধ দেন রাজাকে। তাতেই রাজা পুনর্জীবন লাভ করেন।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, পরদিন সকালে শিব-পার্বতী এলাকা ছাড়েন। তাঁরা স্থান ত্যাগ করতেই গোমতী নদীর তীরে মাটির নীচ থেকে একটি শিবলিঙ্গ উঠে আসে। কাত্যুরি রাজা এবং রানির কানে সে খবর পৌঁছয়। রানিমা রাজাকে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বুঝতে পারেন রাজাকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন স্বয়ং মহাদেব।
পবিত্র সেই স্থানে যত দ্রুত সম্ভব মন্দির নির্মাণ করার আদেশ দেন রানি। শোনা যায়, এর পরে রাজার নির্দেশে রাজকর্মচারী এবং হিমাচলের দক্ষ শিল্পীরা এক রাতের মধ্যে ওই এলাকা জুড়ে ১৮টি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। মহাদেব যেহেতু বৈদ্যরূপে ধরা দিয়েছিলেন, তাই বৈদ্যনাথ নামে পরিচিতি লাভ তাঁর তিনি। পরে লোকমুখে হয়ে যান বৈজনাথ। আর এলাকার নাম হয় বৈজনাথ ধাম।
এই মন্দির ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে রাবণের নামও। তিনি নাকি এক বার শিবের কাছ থেকে বর লাভের জন্য এই মন্দিরে কঠিন তপস্যা শুরু করেছিলেন।
স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, শিব এখানে বৈদ্য অর্থাৎ চিকিত্সকদের দেবতা। এলাকার এক রাখাল বালক বৈজু তাঁর দেখাশোনা করতেন বলে দেবতা বৈজনাথ নামে পরিচিত। কেউ কেউ অবশ্য বৈজনাথের প্রথম শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার সাথে পঞ্চপাণ্ডবদের নাম জুড়ে দেন। তাঁরাই নাকি প্রথম মন্দির প্রতিষ্ঠা করে শিবপুজোর প্রচলন করেন। সেই মন্দির কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। এর বহু যুগ পর হঠাৎ এই শিবলিঙ্গের সন্ধান পান কাত্যুরি রাজারা। তাঁরা মন্দির উদ্ধার করে সংস্কার করেন।
ঐতিহাসিকদের মতে, বৈজনাথ মন্দির তৈরি হয়েছিল কাত্যুরি রাজাদের আমলেই। মন্দিরের সংস্কার হয় ১১৫০ সালে। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, বৈজনাথ মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু আটশো শতকে। যা শেষ হয়েছিল বারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে। অনেকের মতে, বৈজনাথের আদি নাম ছিল কার্তিকেয়পুরা। আর এখানকার আদি দেবতা নাকি ছিলেন কার্তিকেয়। পরে শৈবদের প্রভাবে কার্তিকেয় ঢাকা পড়ে যান এবং বৈজনাথই প্রধান দেবতা হিসেবে জনপ্রিয় হন।
কী ভাবে যাবেন: কাছের বিমানবন্দর চণ্ডীগড়। পালমপুরের কাছের স্টেশন পাঠানকোট। হিমাচল প্রদেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে বাস এবং গাড়ি চলে বৈজনাথের পথে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।