Amritsar Golden Temple

এ মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নেই, নানা ধর্মাবলাম্বীর মিলনক্ষেত্র এটি! এবার পুজোয় চলুন যাই

শিখদের কাছে পঞ্জাবের অমৃতসর এক পবিত্র শহর। কিন্তু এই শহরের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দিরে বহু ধর্ম, বহু জাতির মানুষের মেল বন্ধন ঘটে এখানে প্রতি দিন। অমৃতসর শহরের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে এক জনশ্রুতি। পুজোয় আপনার ঠিকানা হতেই পারে এ শহর।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:১১
Share:

পঞ্জাবের অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির

সারা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পঞ্জাবের অমৃতসর এক পবিত্র শহর। অমৃতসর শহরের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে এক জনশ্রুতি।

Advertisement

একবার গুরু নানক তাঁর শিষ্যদের নিয়ে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। চলতে চলতে এক নির্জন প্রান্তরে পৌঁছে সবাই যখন দীর্ঘ পথশ্রমে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন, তখন নানক এক শিষ্যকে জলের সন্ধান করতে বললেন। সেই শিষ্য কিছু দূরে গিয়ে দেখতে পেলেন এক সায়র বা সরোবরের।

শিষ্য অবশ্য দেখলেন সরোবরটি জলশূন্য। নানককে তা জানানোর পর তিনি শিষ্যকে বললেন, ‘তুমি আরেক বার যাও, এবার জল পাবে।’ শিষ্য গেলেন, আর এ বার সরোবর দেখে তিনি তো অবাক! সরোবর কানায় কানায় ভর্তি জলে। শুধু তাই নয়, অপূর্ব স্বাদ সেই জলের, যেন অমৃত। সেই থেকেই শিষ্য সেই সরোবরের নাম দিলেন, অমৃত সায়র বা অমৃত সরোবর।

Advertisement

চতুর্থ শিখ গুরু রামদাস সেখানে একটি মন্দির গড়ে তোলেন। সম্রাট আকবর সরোবর আর জমির অধিকার দান করেছিলেন রামদাসকে। তা সত্ত্বেও ভারতে সাম্রাজ্যবাদী মোঘল ও আফগানদের আক্রমণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিখদের এই পবিত্র মন্দির। এবং বারবার এর পুনর্নির্মাণ ঘটেছে। শেষে রঞ্জিত সিং শিখ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর স্বর্ণ মন্দিরের বর্তমান নির্মাণসাধন হয়।

তার বহু আগে রামদাসের শিষ্য পঞ্চম গুরু অর্জুন সিং ওই সরোবর সংস্কার করে তার মধ্যিখানে গড়ে তোলেন বিশাল মন্দির। অমৃত সায়র-এর নামে শহরটির নাম হয় অমৃতসর। পঞ্জাব কেশরী রণজিৎ সিং সোনার পাতে মুড়ে দিয়েছিলেন ওই বিরাট মন্দিরের গম্বুজ। সেই থেকে মন্দিরের নাম হয় স্বর্ণ মন্দির। অনেকে অবশ্য একে দরবার সাহিব-ও বলে থাকেন।

স্বর্ণ মন্দিরের দেওয়ালে নানান কারুকার্য। সরোবরের চারদিকে মার্বেল পাথরে মোড়া প্রদক্ষিণ পথ, মন্দিরে প্রবেশ পথ চারটি। যেগুলির অলঙ্কৃত রুপোর দরজার কারুকার্য অপরূপ। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে সোনা-রুপো, হাতির দাঁতের কাজ।

স্বর্ণ মন্দিরের অদূরে সরোবরের ধারে অকাল তখত। যার অর্থ, ‘দেবতার সিংহাসন’ ভবন। এখান থেকেই গোটা পৃথিবী ব্যাপ্ত শিখ ধর্মের যাবতীয় নিয়ম-নীতি নির্ধারিত হয়। অকাল তখত-এ রয়েছে শিখ গুরুদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, মণিমুক্তো। আর মণিমাণিক্য খচিত ‘চন্দ্রতপ’ বিস্ময়ের সৃষ্টি করে!

অমৃতসরকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল শিখ ধর্মের নবজাগরণ। মন্দিরের ‘দরবার সাহিব’-এ রয়েছে শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ ‘শ্রী গুরু গ্রন্থসাহিব’। এখানে কোনও দেবতার বিগ্রহ নেই, নেই কোনও পুজো-পাঠের অনুষ্ঠান। গুরু গোবিন্দ সিংহের সংকলিত হাতে লেখা গ্রন্থসাহিব-কেই এখানে পবিত্র দেবতা জ্ঞানে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিবারাত্র চলে নামগান এবং পাঠ।

শিখদের আদি গ্রন্থটি সংকলনের কাজ শেষ হয়েছিল ষোড়শ শতকের শেষের দিকে। সেটিকে স্বর্ণ মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আদি গ্রন্থটি ‘শ্রী গুরুগ্রন্থ সাহিব’-এ পরিণত হয়। গুরু গ্রন্থসাহিব-কে স্থায়ী গুরুর মর্যাদা দিয়ে ছিলেন গুরু গোবিন্দ সিংহ এবং ‘শিখদের গুরু’ হিসেবে ভূষিত করে ছিলেন। গ্রন্থসাহিব প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় অষ্টাদশ শতকে। যার অনুবাদ করেছিলেন আর্নেস্ট ট্রাম্প।

গ্রন্থসাহিব দিনের বেলায় সর্ব সাধারণের প্রদর্শনের জন্য স্বর্ণ মন্দিরে রাখা হয়। রাতে সেটিকে স্বর্ণখচিত রুপোর পালকিতে শোভা যাত্রা করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অকাল তখতে। পরের দিন সকালে ফের ওই একই ভাবে নিয়ে আসা হয় স্বর্ণমন্দিরে।

অকাল তখতের বিপরীতে রয়েছে জগদ্বিখ্যাত লঙ্গরখানা। বিশাল সেই হল ঘরে জাতিধর্ম নির্বিশেষে হাজারের বেশি মানুষ এক সঙ্গে বসে প্রসাদ খেতে পারেন। সারা দিন ধরে চলে এই বিশাল আয়োজন। আর সেই মহা আয়োজনের কাজে স্বর্ণমন্দির দর্শনার্থীদের যে দিন যে যেমন পারেন, আটা মাখেন, সব্জি কাটেন, বাসন পরিষ্কার করেন, ঝাঁট-মোছ করেন, আরও বিভিন্ন সেবা প্রদান করেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের এও এক আশ্চর্য মেল বন্ধন ঘটে এখানে প্রতিদিন।

আর স্বর্ণমন্দিরে এহেন সেবাকর্মে যুগ-যুগান্ত ধরে সর্বস্তরের মানুষ জনের অংশগ্রহণ আজও এক ঐক্যবদ্ধ ভারতের ছবিকেই তুলে ধরে।

কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে অমৃতসর সরাসরি ট্রেন রয়েছে। দিল্লি হয়েও যাওয়া যায়। সব চেয়ে নিকটবর্তী বিমানবন্দর অমৃতসর এয়ারপোর্ট।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement