কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ হুড়মুড়িযে চলে এল! কিছুদিন বাদেই আমরা এই এ জিনিস সর্বত্র দেখতে পাব আর তখন মানুষের সব চাকরি-বাকরি চলে যাবে, এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে! আবার উল্টো দিকে এটাও শোনা যাচ্ছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য মানুষের জীবন ভীষণ সহজ হয়ে যাবে। আমরা সব কাজই খুব সহজে করে ফেলতে পারব।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে? স্মার্ট ফোনে যখন চার্জ দিচ্ছি, সেটা অ্যাডাপটিভ চার্জিং-এর মাধ্যমে হয়, যা কিনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রিত। তাই সারারাত চার্জ দিলেও ক্ষতি নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বুঝে নেবে আপনি নিয়মিত কী ভাবে চার্জ দেন বা আপনার ফোনের এখন কতটা চার্জ নেওয়ার প্রয়োজন আছে, বা আদৌ আছে কিনা। সে সেই মতো চার্জ দেবে বা বন্ধ রাখবে নিজেই।
আরও উদাহরণ দিই। আপনার অফিসে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি আছে? কিংবা অনলাইন হাজিরা? ফোনে ফেস-রেকগনাইজেশন অপশন রেখেছেন? সব কিছুর পিছনে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণ। সে রোজ মিলিয়ে দেখে আপনার মুখ বা আঙুলের ছাপ, মিললে তবেই পাবেন অফিসে ঢোকার বা ফোন ব্যবহারের ছাড়পত্র।
আমরা গাড়িতে যেতে যেতে গুগল ম্যাপে যে নেভিগেশন ব্যবহার করি, সেখানেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এমনকি আমরা যে অ্যাপ-ক্যাব বুক করছি, ফ্লাইট বা হোটেল বুক করছি অনলাইনে, যা কিছু সার্চ করছি ইন্টারনেটে, সর্বত্র অশরীরী হয়ে বিছিয়ে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আপনাকে আপনার পছন্দ বুঝে ফলাফল দেখাচ্ছে।
তাই খেয়াল করবেন, আজ আপনি আন্দামান ভ্রমণের জন্য সন্ধান করেন, কাল থেকেই আপনার ফোনে আন্দামানের রকমারি বেড়ানোর বিজ্ঞাপন আসতে থাকবে, ফোন করতেই পারে।
আর হ্যাঁ। গেমিং। এ-আই আর ভিডিয়ো গেমস অবিচ্ছেদ্য। আমরা যখন কিছু গেম শুরু করছি, তখন আসলে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই খেলছি। এছাড়া দৌড় বা দাবা খেলা তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আছেই।
অন্য আরও কিছু উদাহরণ বলি। আপনি ওটিটি মাধ্যমে সিনেমা বা সিরিজ দেখেন? স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মিউজিক শোনেন? ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখেন? আপনি খেয়ালও করেন না হয়তো যে আপনার প্লে-লিস্টে স্পটিফাই নতুন গান ঢুকিয়ে দিয়েছে!
অ্যামাজন বা নেটফ্লিক্সে দু’চারটে সিনেমা দেখার পরই তারা বুঝে নেয় কেমন সিনেমা আপনি পছন্দ করেন। আপনাকে তারপর সে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে চলে সেই গোত্রের সিনেমার বা শো-এর। এছাড়া গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা গুগল লেন্স তো রয়েইছে। আপনি যে কোনও অ্যাসিস্ট্যান্টকে কম্যান্ড দিলেন যে, টিভিটা চালিয়ে দাও বা টিভিতে নির্দেশ দিলেন অমুক চ্যানেলটা চালিয়ে দাও, স্মার্ট টিভিতে তো এসব আকছারই হয়। তারপর ধরুন, অ্যামাজন অ্যালেক্সাকে নির্দেশ দিলেন, ঘরের স্মার্ট লাইটটা জ্বালিয়ে দাও। গুগল লেন্সে যখন একটা অজানা ফুলকে ধরি, সে কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়েই বুঝে নেয় যে সেটা কোন ফুল আর কী কী রেফারেন্স দেখাবে আপনাকে। মোবাইলের ক্যামেরাতেও একই ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রসেস করা ছবিই আমরা দেখি। বন্ধুদের আড্ডায় গ্রুপফি তুললে দেখবেন সকলের মুখই বেশ হাসিখুশি সুন্দর এসেছে। আপনার ফোনের ক্যামেরার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই সময়ের মনোভাব ঠিকই বুঝে নেবে।
এ রকমই আপনি কী ভিডিও দেখছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কী পোস্ট দিচ্ছেন, কী সার্চ করছেন, এমনকি কী কী মেডিক্যাল টেস্ট করাচ্ছেন, এই সব কিছুতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢুকে আছে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসছে বলে ভয় পেয়ে লাভ নেই। এটি অনেক আগেই আপনাকে ধরে ফেলেছে, এবার আপনি তাকে ধরুন। এই সম্বন্ধে জানুন। কোনটা ক্ষতি করতে পারে আপনার, কী ব্যবহার করলে হ্যাকড হতে পারেন বা কী করলে আপনি হ্যাকিং ঠেকাতে পারবেন, জানার চেষ্টা করুন, বিভিন্ন ফোরাম থেকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উপভোগ করুন, তবে একটু সাবধানে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।