Arindam Sil

Sera Sarbojanin: ‘সেরা সর্বজনীন’ পুজো বাছার সময়ে অরিন্দম শীল পেলেন ‘পূজাশ্রী’ খেতাব

৩০০-র উপর প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইনের ‘সেরা সর্বজনীন’ প্রতিযোগিতায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১ ১৮:১৬
Share:

আনন্দবাজার অনলাইনের ‘সেরা সর্বজনীন’ পুজোর বিচারে তিন আমন্ত্রিত বিচারক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরি, জুন মালিয়া ও অরিন্দম শীল।

‘আবাসনের সিংহাসনে’-র পরে ‘সেরা সর্বজনীন’-এর লড়াইও জমে গিয়েছে। প্রথম পর্বের বাছাইয়ের পরে ২০টি পুজো উঠে এসেছিল। সেখান থেকে বিচারকমণ্ডলী বেছে নিলেন সেরা ১০টি পুজো, প্রথম তিনটি পুজো পাবে সেরার সম্মান। বিচারকের আসনে ছিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদক অনিন্দ্য জানা, পরিচালক-প্রযোজক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরি এবং অরিন্দম শীল, ও অভিনেত্রী-সাংসদ জুন মালিয়া।

Advertisement

চার জনেই অষ্টমীর মেজাজে। জুন পরে এসেছেন কমলা রঙের শাড়ি, সোনালি ঝুমকো ও বড় টিপ। ও দিকে পুরুষরাও কোনও অংশে কম যান না। তাঁরা সেজেছেন পাঞ্জাবিতে। ঠাকুর দেখতে বেশ ভালইবাসেন অনিরুদ্ধ। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখার মজাই আলাদা।’’ করোনার কল্যাণে আগের বছরের মতোই এ বছরও সে গুড়ে বালি। কিন্তু জুন আশাবাদী। মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা দর্শন না হোক, আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য এ ভাবেও তো ঠাকুর দেখা হল! অতিমারির কথা মাথায় রেখেই বারোয়ারি পুজোর বিচারে কোভিড-বিধি রক্ষার দিকে জোর দিচ্ছেন সব বিচারক। কোন মণ্ডপে আছে হুইল চেয়ার, কোথায় আছে স্যানিটাইজার— সব কিছুই খেয়াল করলেন তাঁরা।

বিচার করার ফাঁকে চলল অষ্টমী-সন্ধ্যার আড্ডার পরিকল্পনা। দুপুরের ভোগ খাওয়া হয়ে গিয়েছে তিন জনেরই। অনিরুদ্ধ বললেন, ‘‘ভোগের পরে ঠাকুর দেখতে আরও বেশি ভাল লাগে।’’ তার মধ্যেই চলল থিম নিয়ে জোর আলোচনাও। ‘‘ঠাকুরের হাতে অস্ত্র নেই কেন?’’ প্রশ্ন তুললেন অনিরুদ্ধ। অরিন্দম শীল ধরিয়ে দিয়ে বললেন মা এখানে শান্তির প্রতীক, তাই অস্ত্র নেই। বিভিন্ন পুজোর থিমের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দিলেন অরিন্দম। ফলস্বরূপ, নিমেষেই বেশ কিছু খেতাব জুটে গেল পরিচালকের। অনিন্দ্য মশকরা করে তাঁকে বললেন ‘চ্যাম্পিয়ন,’ অনিরুদ্ধ বললেন ‘অধ্যাপক।’ আর কিছু ক্ষণ পরে অরিন্দমের নিখুঁত বিশ্লেষণ দেখে অনিরুদ্ধ বলেই ফেললেন, পুজোর বিষয়ে তাঁর ‘ডক্টরেট’ উপাধি প্রাপ্য। তার পর থেকে অরিন্দমকে ‘ডাক্তারবাবু’ বলেই সম্বোধন করলেন অনিরুদ্ধ। অনিন্দ্য আরও এক ধাপ উপরে, বাকি তিন বিচারকের প্রতিনিধি হয়ে তিনি অরিন্দমকে ‘পূজাশ্রী’ খেতাব দেওয়ার প্রস্তাব রাখলেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমি দেখলাম অরিন্দম আমাদের মধ্যে পুজো সম্পর্কে সব চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল। এবং অরিন্দম নিজেই বলল যে স‌ে ছোটবেলা থেকে এই কাজ করে আসছে।’’

Advertisement

বিচারপর্বের ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদক অনিন্দ্য জানার সঙ্গে আড্ডার মেজাজে জুন মালিয়া ও অরিন্দম শীল।

১০টি পুজো দেখার পর সামান্য বিরতি। কিন্তু অর্ধেক পুজো দেখেই অরিন্দম বেশ উত্তেজিত। বললেন, ‘‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বাকি আছে।’’ আবার অনিরুদ্ধর নম্বর দেওয়া নিয়ে ঠাট্টা করলেন জুন। বললেন, ‘‘খুব কড়া নম্বর দিচ্ছেন তুই।’’ উত্তরে পরিচালক বললেন, ‘‘তুই কিছু কম সিরিয়াস নোস। আমাকে শাসন করছিস।’’ হাসি-মজার মধ্যে এই বিচারপর্ব দৃশ্যতই খুব উপভোগ করলেন তিন জন। অরিন্দম জানালেন জুন, অনিরুদ্ধ এবং অনিন্দ্যসকলেই তাঁর খুব প্রিয় মানুষ। তাই তাঁদের সঙ্গে অষ্টমীর দুপুর কাটাতে বেশ ভাল লাগছে তাঁর।

সব কিছুর ঊর্ধ্বে বিচারকদের মুখে বারবার যে কথা ঘুরে ফিরে এল তা হল ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিকতা। অরিন্দম বললেন, ‘‘বেশির ভাগ সর্বজনীন পুজোয় একটা চল দেখা গিয়েছে সেটা হল সামাজিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে থিম। ধর্ম এবং সমাজ যে একত্রিত হয়ে যাচ্ছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঈশ্বর যেন আরও বেশি সহজ হয়ে উঠছেন।’’ অনিন্দ্য সেই বক্তব্যের রেশ ধরেই বললেন, ‘‘ধর্ম এবং সমাজ একত্রিত হয়েই তো উৎসব তৈরি হয়।’’ অনিরুদ্ধ যোগ করলেন, ‘‘আমরা কিন্তু ছোট থেকেই ইদে কোলাকুলি করে বিরিয়ানি খেয়ে এসেছি, বড়দিনে কেক খেয়ে এসেছি, আবার বিজয়ার সময়ে গিয়ে প্রণাম করেছি। আমরা যে ভাবে বড় হয়েছি তাতে ধর্ম ছিল পিছনে, প্রাথমিক ছিল মনুষ্যত্ব।’’ বারবার এই ভাবে তাঁদের মুখে উঠে এল ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে পুজোর সামাজিক গুরুত্বের কথা।

৩০০-র উপর প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিল এই প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকে ঝাড়াই-বাছাই করে ১০টি পুজো বেছে নিতে বেশ মন দিয়ে বিচার করতে হয়েছে তাঁদের। অনিরুদ্ধ মনে করিয়ে দিলেন হার-জিত নয়, অংশগ্রহণই সবচেয়ে বড় কথা। অনুষ্ঠানটি নিবেদন করেছে ‘দ্য বেঙ্গল।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement