সামনে অনেকটা ফাঁকা জমি। দূর থেকেই দেখা যায় রানাঘাটের সিংহ বাড়ি। পুরনো ঢঙে তৈরি বাড়ির কিছুটা ভাঙা। বাকি অংশ নতুনের ছোঁয়া পেয়েছে। ঠাকুরদালান নতুন করে সেজে উঠছে। রং লেগেছে দেওয়ালগুলিতে। পাড়ার বাচ্চারা মাঝে মধ্যেই উঁকি দিয়ে দেখছে ঠাকুর কতটা হল! পুজোর আর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। ঠাকুরের গায়ে মাটি লেগে, অর্ধেক ঠাকুর তৈরি। চক্ষুদান হবে মহালয়ার পূর্ণ লগ্নে।
রানাঘাটের বিশ্বাস পাড়ার পালবাড়ি অনেকের কাছে পরিচিত সিংহ বাড়ি নামে। লালগোপাল পাল দুর্গাপুজো শুরু করেন। চলতি বছরে এই পুজো ২৬৬ বছরের। আজ জমিদারি না থাকলেও বেশ জাঁকজমক করেই এই পুজো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান সদস্যরা।
বাড়ির ঠাকুরদালানে রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো করে প্রস্তুতি নেওয়া হয় সে বারের দুর্গা পুজোর। দেবী পক্ষের সূচনার দিনে মায়ের চক্ষুদান সম্পন্ন হয় এখানে। প্রায় সব বনেদি বাড়ির মতো এখানেও দেবী এক চালাতেই পূজিতা।
ষষ্ঠীর দিন দেবীর সপ্তমীর বোধন হয় ঠাকুরদালানেই। সপ্তমীর দিন কলা বউ স্নানের কোনও রীতি নেই এখানে। মায়ের ভোগের ক্ষেত্রেও বিশেষত্ব রয়েছে এই বনেদি বাড়ির পুজোয়। চালের ভোগ দেওয়া হয় না। চার গণ্ডায় মোট চৌষট্টিটি লুচির সঙ্গে রসগোল্লা, কাজুবাদাম, ছানা, কিশমিশ, পেস্তা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই ভোগই দেওয়া হয়। এ ছাড়াও কাঁচা ভোগ অর্থাৎ আতপ চাল সিদ্ধচাল-সহ গোটা সবজি, মশলা পুজোর সময় দেওয়া হয়। সেই ভোগ আবার এলাকার ব্রাহ্মণদের বাড়িতে দিয়ে আসা হয়। নবমীর দিন রয়েছে একটি বিশেষ রীতি। বাড়ির কোনও এক বৌমাকে ঠাকুরের সামনে বসিয়ে, একটি সরার মধ্যে মাটি দিয়ে মাথায় বসানো হয়। তাতে ধুনো পোড়ানো হয়। বাড়ির লোকেদের বিশ্বাস, তাঁর উপর মায়ের ভর হয়। আগে এখানে ছাগল বলি হলেও এখন তা বন্ধ। বর্তমানে চালকুমড়ো, আখ, কলা বলি দেওয়া হয়। নবমীর দিন এখানে কাদা খেলা হয়। আগে অন্যান্য বনেদি বাড়ি থেকে এই কাদা খেলায় জন্য অনেকেই আসতেন। আগে হোলির মতো এই খেলা হত। এখন তা বহরে কমেছে। দশমীর দিন নিয়ম মেনে স্থানীয় শর্মা বাড়ির প্রতিমা বির্সজনের পর সিংহ বাড়ির প্রতিমা জলে দেওয়া হয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।