Kali Puja 2023

মা কালী এখানে গোয়ালিনী রূপে! নবদ্বীপে মায়ের এই কাহিনি বড় শ্রুতিমধুর

নবদ্বীপে এক গোয়ালিনীর বেশে ধরা দেন মা কালী। এর নেপথ্য কাহিনি বড় মায়াময়।

Advertisement

রাজা পোদ্দার

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৯
Share:

ছবি: দেবাশিস নন্দী

কৃতী পণ্ডিত মহেশ্বর গৌড়াচার্যের দুই সন্তান। কৃষ্ণানন্দ ও মাধবনানন্দ।

Advertisement

জ্যেষ্ঠ পুত্র কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্যের আবির্ভাব ষোড়শ শতকের শেষ ভাগে। বাংলার তন্ত্রচর্চার মূলতঃ দুই ধারা। আগম ও নিগম।

আগম পদ্ধতিতে তন্ত্রসাধকরা আগম নবদ্বীপের বাগীশ উপাধি পেতেন।

Advertisement

কৃষ্ণানন্দ আগমপদ্ধতিতে তন্ত্রসাধনা করার ফলে তিনি কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নামে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।

বলা হয বাংলার ঘরে যে কালীমূর্তির পুজো-আচ্চা, প্রচার-প্রসার তার সূত্রপাত নবদ্বীপের তন্ত্রবিশারদ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের হাত ধরেই।

তার আগে সাধারণের গৃহে কালীসাধনার প্রচলন ছিল না। রাজ-রাজা বা জমিদারের পৃষ্ঠপোষকতায় শক্তিপুজো হলেও তা হত মূলত ঘটে এবং যন্ত্রে।

অনেক পণ্ডিতের মতে, দক্ষিণাকালী মূর্তির প্রচলন কৃষ্ণানন্দের আগে ছিল না।

যদিও শাস্ত্র তা বলে না।

বছরের বিভিন্ন সময়ে কালীপুজো হয়ে থাকলেও দেবীপুরাণ মতে, কালীপুজোর শ্রেষ্ঠ সময় দুর্গাপুজার পর অমবস্যা তিথিতে।

এ নিয়ে লোককাহিনি প্রচলিত আছে । সারারাত মা-কালীকে আকুল হয়ে ডেকেও সাড়া পাননি কৃষ্ণানন্দ।

ভোরবেলায় কৃষ্ণানন্দ চলেছেন গঙ্গাস্নানে। পথিমধ্যে এক গরিব প্রায় অর্ধ-উলঙ্গিনী গোয়ালিনী ঘুঁটে দিচ্ছিলেন। কাকভোরে সাধারণত পথে কেউ বেরোন না। তাই সে সময়ে গোয়ালিনী আসতেন ঘুঁটে দিতে। হঠাৎ সামনে আগমবাগীশকে দেখে তিনি লজ্জায় জিভ কেটে ফেলেন। একটি কাঠের পাঠাতনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই গোয়ালিনী। কালো সেই নারীর রূপ দেখে বিমোহিত হয়ে গেলেন কৃষ্ণানন্দ। রূপদান করলেন মাতৃমুর্তির। কাঠের পাঠাতনের কল্পিত রূপ শিব ।

সংক্ষেপে এই কাহিনি অনেকেই জানেন।

কিন্তু, কৃষ্ণানন্দ তখন মাতৃরূপে বিভোর। তিনি ঠিক করলেই সামনের অমবস্যাতেই তিনি মায়ের পুজা করবেন কিন্তু এই রমণীকে দেখার পর অমাবস্যা হতে আর একদিন বাকি ছিল। রাতারাতি কালীমূর্তি তৈরি করে তাতে রং করে চক্ষুদান করে পুজো করেন তিনি। গোটা প্রক্রিয়াটাই হয়েছিল একদিনে। সেই থেকেই এই রীতি প্রচলিত হয়ে আসছে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জন্মস্থান নবদ্বীপের ভিটেতে। নবদ্বীপের আগমেশ্বরী পাড়ায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনস্থলে এখনও এই মূর্তি(সঙ্গের ছবি) পুজো হয়।

সময়ের নিরিখে এই মুর্তি বিশালাকার তৈরি করা হলেও (যেটি আর কোনও মতেই এক দিনে রং করা এবং চক্ষুদান করা সম্ভব নয়) প্রথা অনুযায়ী এখনও একটি ছোট্ট মাটির ঠাকুর তৈরি করে এক দিনের মধ্যেই সেটা রং করে চক্ষুদান করে এই বিশালাকায় মুর্তির সামনে প্রতিষ্ঠা করে সেটিকে পুজো করা হয়।

যদিও এসব মূলতঃ প্রবাদ এবং জনশ্রুতি। সেকালের বিভিন্ন পুঁথিপত্র ঘেঁটেও এমন কোনও ঘটনার সন্ধান মেলে না। কৃষ্ণানন্দ সংস্কৃত শাস্ত্রে সুপণ্ডিত। তিনি শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ। মুর্তি তৈরির ক্ষেত্রে তিনি শাস্ত্র ব্যাতিরেকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে মনে হয় না।

বাম ঊর্ধ্ব হস্তে খড়্গ ও অধোহস্তে অসুর মুণ্ড ধারণ যে মুর্তি আমরা দেখি তাঁর সাথে গ্রামবাংলার গোয়ালিনীর রূপের কোনও মিল নেই। বাংলায় সর্ববহৎ এবং সুপরিচিত বৃহৎ তন্ত্রসার কৃষ্ণানন্দ রচিত হলেও, কৃষ্ণানন্দের বহু পূর্বে রচিত বিশ্বসার তন্ত্র নিরুত্তর তন্ত্র ও কালীতন্ত্রে দক্ষিণা কালীর মূর্তির বর্ণনা আছে। তিনি কালীতন্ত্র হতে বচন উদ্ধৃত করে তন্ত্রসারে কালীমূর্তির পূর্বতন বর্ণনাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন মাত্র।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement