খিদিরপুর অঞ্চলের 'উদয়ন' বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় এত বছর যা ঘটেনি, এ বার তাদের ৭৭তম বর্ষে তাই হয়েছে! কী না, খিদিরপুরে যেখানে কলকাতা পুলিশের কোয়ার্টার, তার পাশে পদ্মপুকুরের গায়ে এই পুজো কমিটির শীর্ষ পদকর্তারা কয়েক মাস আগে বসে আলোচনা করছিলেন এবারের পুজোর থিম কী করা যায় তা নিয়ে। ওই অঞ্চলটার নামই খিদিরপুর পদ্মপুকুর। হঠাৎ সেখানে একটি তরুণ ছেলে এসে নিজে উপযাজক হয়ে উদয়নের সদস্যদের জানান, তাঁর কাছে দুর্গাপুজোর একটা ভালো থিম আছে। যদি এই পুজো কমিটি রাজি থাকে, তাহলে তিনি কাজের দায়িত্ব নিতে পারেন। জানা যায়, ছেলেটি সদ্য আর্ট কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়েছে। হাওড়ায় থাকে। এবং তাঁর থিম অর্থাৎ ভাবনাটা হচ্ছে 'মোবাইল'!
ব্যাপারটা কী? না, বাচ্চাদের বিশেষ করে পাঁচ বছরের নীচের বয়সে মোবাইল দেখা, মোবাইল নিয়ে অনেকক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করা চিকিৎসকদের মতেই ভীষণ খারাপ। এর কুফলে শিশুদের মস্তিষ্কের পর্যন্ত ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে বিকাশ না ঘটার ভয়াবহ আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এখন বেশিরভাগ 'সিঙ্গল ফ্যামিলি'র চল। ফ্ল্যাট বা ছোট বাড়িতে মা-বাবা আর তাঁদের বাচ্চা।
বাবা প্রায় দিনভর অফিসে। মা রান্নাবান্না আর সংসারের আরও নানা কাজে ব্যস্ত। বাচ্চাকে মোবাইল দিয়ে বিছানায় বসিয়ে রেখে সেসব কাজ সারেন। আর বাবা-মা, দুজনেই চাকরি করলে তো আরওই হল! কাজের লোকের দায়িত্বে থাকা বাচ্চাকে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল দিয়ে বসিয়ে রেখে নিজের মতো কাজ সারে সেই মাইনে করা লোক।
এ সবই এবং এর কুফল, প্রতিকারের উপায়— সব কিছু কৃত্রিম ভাবে বানানো অসংখ্য মোবাইল দিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ফুটিয়ে তুলবেন, খিদিরপুর উদয়ন-এর পুজো কমিটিকে সে দিন বুঝিয়েছিলেন ওই আর্ট কলেজ পাস তরুণ শিল্পী। এবং বিষয়টার মধ্যে অভিনবত্বের সন্ধান পেয়ে এই পুজোর প্রধান সদস্যরা রাজি হন।তারই ফলশ্রুতি এঁদের পুজোর এবারের থিম বা ভাবনা। যার শিরোনাম— মোবাইল।
'উদয়ন'-এর পুজো কমিটির সাধারণ সচিব অমিত সিং, যিনি অবাঙালি এবং আদিবাড়ি উত্তরপ্রদেশে হলেও জন্ম, বড় হওয়া সমস্ত কিছুই কলকাতার খিদিরপুরে, আনন্দবাজার অনলাইন-কে জানাচ্ছেন, তাঁদের মন্ডপ ১০ হাজার মোবাইল দিয়ে সাজানোর কাজ হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির নানা মডেলের আসল মোবাইল কভারের ওপরটা কৃত্রিম ভাবে বানিয়ে সেগুলোকে থিম-সজ্জায় ব্যবহার করছেন, এই ভাবনা যাঁর 'ব্রেনচাইল্ড', সেই তরুণ আর্টিস্ট সুপ্রকাশ গুড়িয়া।
জানা গেল, গোটা মন্ডপ জুড়ে নানা সাইজের প্রচুর মাকড়সার জাল বানিয়ে লাগানো হচ্ছে। তার মধ্যে ১০ হাজার মোবাইল বিভিন্ন আর্ট ফর্মে থাকছে। যার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের বোঝানো হবে, মোবাইলের চক্করে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কী ভাবে মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে যাচ্ছে, যার থেকে এখনই অভিভাবকেরা সাবধান না হলে বেরনো ভীষণ কঠিন!
থিমের সঙ্গে মানানসই করে প্রতিমা থাকছে এঁদের পুজো মন্ডপে। একচালার সাবেকি দুর্গামূর্তি, কিন্তু মোবাইল প্যান্ডেলের সঙ্গে খাপ খেয়ে যাবে বলছেন উদয়নের সেক্রেটারি।
কীভাবে যাবেন : খিদিরপুরে কলকাতা পুলিশ কোয়ার্টার বাস স্টপেজে নেমে পদ্মপুকুরের পাশেই এই পুজো।
ভাবনা : মোবাইল
ভাবনায় : সুপ্রকাশ গুড়িয়া
প্রতিমা শিল্পী : গৌরব পাল
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।