এই গ্রামে কালী পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় ৬০০ বছর আগে। কী ভাবে এই পুজোর শুরু, তা নিয়ে রয়েছে অজস্র গল্প। এই পুজোর সঙ্গে কী ভাবে যুক্ত হল মুসলিম সম্প্রদায়, তা নিয়েই সবচেয়ে চমকপ্রদ কাহিনি।
কথিত, এক মুসলিম আখের গুড় বিক্রেতা সারাদিন কাজের পরে এক বট গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময়ে এক কিশোরী তাঁর কাছে এসে গুড় খেতে চায়। এমন নির্জন জায়গায় এমন পরমা সুন্দরী কন্যাকে দেখে অবাক হয়ে যান ওই বিক্রেতা। এই মেয়েকে তো আগে কখনও দেখা যায়নি!
খিদেয় সুন্দর মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটি করুণ স্বরে ওই বিক্রেতার কাছে গুড় চায়। গুড় হাতে দিতেই মেয়েটি মুহূর্তে মিলিয়ে যায়। ওই রাতেই ওই মুসলিম গুড় বিক্রেতা স্বপ্ন দেখেন স্বয়ং বড়মা তাঁর গুড় খাচ্ছেন। সেই থেকেই এই গ্রামে বড়মার পুজো মুসলিম সম্প্রদায়ের গুড় ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না।
আজও ওই পরিবারের সদস্যরা কালীপুজোর সময়ে গুড় পাঠান। বড়মার পুজোকে ঘিরে উভয় সম্প্রদায়ই আনন্দে মেতে ওঠে।
এই পুজোকে ঘিরে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু লোককথা। শোনা যায়, ছ’শো বছর আগে এই জায়গা এবং গভীর জঙ্গলে ঘেরা। তাতে ডাকাতদের বাস। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে তারাই তৈরি করত কালী মূর্তি। সেই মূর্তি পুজো করে বিসর্জন দিয়ে তবেই ডাকাতি করতে বেরোত।
কেউ আবার মনে করেন, এই জঙ্গলে মন্দিরে ছিল মা কালীর মূর্তি। মন্দিরের সামনে ছিল বিশাল এক বিল। জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার আগে মা কালীর পুজো করত।
সেই পুজোর এক বিশেষ রীতি ছিল। সেই রীতি মেনে এক রাতের মধ্যে কালী মূর্তি গড়ে পুজো করা হত, গা ভর্তি অলঙ্কার-সহ সেই রাতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত বিলের জলে। সকলের সামনেই চোখের নিমেষে নিলিয়ে যেত মাতৃ মূর্তি।
এক বার নাকি মায়ের গা থেকে এক পুরোহিত গয়না খুলে নেন। সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায় বিগ্রহে। কালী পুজোর এই বিশেষ রীতি আজও মেনে চলেন ঋষিপুরের বাসিন্দারা।