বাংলার ডাকাতদের কালীপুজোর সঙ্গে যে একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে সেটা নতুন নয়। বিশেষ করে হুগলী এবং তদ সংলগ্ন জায়গার ডাকাতদের পুজো বেশ নাম করা।
গগন ডাকাত থেকে রঘু ডাকাত, রয়েছে ডাকাত সর্দার সনাতন ডাকাতের নাম। সিঙ্গুরের ডাকাত কালী হোক বা জিরাটের কেলো ডাকাতের কালীপুজো সব পুজোতেই রয়েছে নিজস্ব বিশেষত্ব। আজও সেই সব পুজোর গল্প শুনলে কাঁটা দেয় গায়ে।
তেমনি এক শিহরণ জাগানো গল্প প্রচলিত রয়েছে মানিকোরা গ্রামের কালী পুজো নিয়েও। আজও নাকি পুজোর সময় মায়ের পায়ে পরিয়ে রাখা হয় শিকল।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে পুনর্ভবা নদীর তীরে রয়েছে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলে ডাকাতরা এক সময় করত মায়ের আরাধনা।
প্রচলন ছিল বলি প্রথার। প্রায় নিয়মিত হতো নর বলিও। তবে সেখানেই ছিল গোলমাল।
বলির সময় নাকি নড়ে উঠতো মায়ের পা। মানুষের বিশ্বাস মা নাকি বলির সময় আর থাকতে চান না বেদীতে। বিচলিত হয়ে নেমে আসতে চান বেদী থেকে। তাই মায়ের পায়ে পরিয়ে রাখা হতো শিকল।
সেই বিশ্বাস আজও বিদ্যমান মানুষের মধ্যে। তাই আজও বলির সময় ঢেকে দেওয়া হয় মায়ের মুখ। কারণ মানুষের বিশ্বাস যদি দেবী বলি দেখতে না পান তাহলে আর নামার চেষ্টাও করবেন না।
আজও পুরোনো রীতি মেনেই হয় কালী পুজো। বলি হয় প্রায় নিয়মিত। এমনকি আজও কালী পুজোর দিন প্রায় হাজার খানেক ছাগ বলি হয়।
কথিত আছে ডাকাতরা পুজো করতো চুপি চুপি। তাই দেবীও পছন্দ করেন না বেশী আওয়াজ। তবে জন বসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পুজো থেকে সরে যায় ডাকাতরা।
তখন এই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন এলাকার জমিদার ভৌরবেন্দ্র নারায়ণ রায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে আসে জমিদারদের প্রভাব। তাই গত ১০০ বছর ধরে এই পুজোর দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন গ্রামবাসীরাই।
মালদা জেলার এই পুজোকে ঘিরে বেশ গমগম করে ওঠে হবিবপুর ও তার আশেপাশের এলাকা। ভক্ত সমাগম হয় বহু দূর দূর থেকেও। মেলা চলে সাত দিন ধরে।