এখানে দেবীর রূপ ঠিক যেন কঙ্কালের মতো। সেই রূপের জন্যই এখানে দেবী পরিচিতা কঙ্কালেশ্বরী কালী হিসেবেই।
মানুষের দেহের শিরা-উপশিরা, অস্থি-মজ্জা, পেশী যে ভাবে থাকে, ঠিক সেই ভাবেই এখানে দেবীর মুর্তি কষ্টিপাথরে খোদাই করা হয়েছে।
বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর এলাকায় মা কঙ্কালেশ্বরীর এই মন্দিরটি অধিষ্ঠিত রয়েছে। দেবী এখানে অষ্টভূজা। আর সেই কারণেই রীতি রেওয়াজ মেনে চামুণ্ডা রূপে দেবী কঙ্কালেশ্বরীর আরাধনা করা হয়।
দেবীর আরাধনায় বর্ধমান সহ দূর-দূরান্তের মানুষজন ভিড় জমান। কালীপুজোর দিন গোধূলী লগ্নে পুজো শেষ হওয়ার পরে ভোগ খাওয়ানো হয় ভক্তদের।
কথিত, এই মূর্তিটি একাদশ শতকের। অর্থাৎ প্রায় ১০০০ বছরের পুরনো।
কাঞ্চমালার নাম অনুসারে জায়গাটির নাম কাঞ্চননগর। তাঁর দুই ছেলে ছিলেন সত্যেশ্বের ও খর্গেশ্বর। সত্যেশ্বর ছিলেন সাধক। শোনা যায়, কোনও এক কারণে তাঁর বোনও সাধিকা হয়ে হিমালয়ে চলে যান। বোনকে ফেরত আনার জন্য সত্যেশ্বর পাড়ি দেন হিমালয়ে। সেখানেই তাঁকে দেবীরুপে দেখা দেয় বোন।
বর্ধমানে ফিরে এসে সেই রূপকেই কল্পনা করে মূর্তিশিল্পীকে দিয়ে মুর্তি তৈরি করান সত্যেশ্বর। যদিও পরবর্তী কালে মূর্তিটি জলে তলিয়ে যায়।
শোনা যায়, ফের ১৩২৫ বঙ্গাব্দের বন্যায় মূর্তিটি বাঁকা নদীর জলে ভেসে উঠে। খবর পেয়েই ছুটে আসেন বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ।
তাঁর হাতেই কাঞ্চননগরে ফাঁকা বিষ্ণু মন্দিরে দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা পায়। সেই থেকেই নিয়মিত কঙ্কালেশ্বরী দেবী এখানে পূজিত হচ্ছেন।
প্রতিমা শিল্পী কষ্টিপাথরের মূর্তিটি এমন ভাবেই তৈরি করে ছিলেন, যাতে দেহের শিরা-উপশিরা, ধমনী পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় মূর্তিটিতে। বহু ইতিহাসবিদ মনে করেন, শিল্পীর শরীরতত্ত্ব নিয়ে বিশেষ জ্ঞান ছিল।
আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। দেবীর গলায় যেমন মুণ্ডমালা রয়েছে, তেমনই দেবীর এক হাতে ধরা রয়েছে মানুষের মাথা। বর্তমানে এই মন্দির ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র।