গ্রামের মেঠো আঁকা-বাঁকা পথ। যত দূর চোখ যায় চাষের জমি। পথের শেষে একটি বড় মন্দির। তবে আর পাঁচটা মন্দিরের থেকে মন্দির অনেকটাই আলাদা। মার্বেল বা ইমারতের গায়ে কোনও নকশা নেই। ইটের গাঁথনির উপরে টিনের ছাউনি। গায়ে সিমেন্টের প্লাস্টার। ব্যাস! ওইটুকুই।
দেখে কারখানা মনে করাটাও বিচিত্র নয়! সামনে কয়েকটা ঘন্টা ঝোলানো। মন্দিরের ভিতরে পায়রা উড়ছে। ঢুকেই মা কালীর বিশাল মূর্তি। উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। মায়ের চার হাতের মধ্যে উপরের একটিতে পৃথিবীর প্রতিকৃতি। অন্যটিতে খড়্গ, নীচের একটি হাতে সাদা পায়রা। অন্যটিতে নরমুন্ডু।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই গ্রাম। ঝড়-বৃষ্টির-বন্যার সঙ্গে এই গ্রামের মানুষের লড়াই। গ্রামের এক প্রান্তে রয়েছে মা কালীর মন্দির। সবাই ‘বড় মা’ বলেই ডাকেন। এই মন্দিরে পুজো করার জন্য আলাদা করে পুরোহিত নেই। ভক্তরাই সেই ভূমিকা পালন করেন।
মন্দিরের আশেপাশে কোনও দোকানও নেই, যেখান থেকে পুজোর সামগ্রী কেনা যায়। শুধুমাত্র প্রবেশ পথের মুখে একটি জায়গায় রয়েছে প্রণামী বাক্স। সেখানে রাখা রয়েছে ধূপকাঠি। ১০ টাকা সেই প্রণামী বাক্সে দিয়ে ধূপকাঠি নিতে হয়।
না, এটি দেখভালের জন্য কোনও আলাদা লোক রাখা হয়নি।
পুজোর ফল প্রসাদ থেকে দক্ষিণা, কিছুই এখানে দেওয়া যায় না। ইচ্ছা হলে মায়ের জন্য প্রসাদ রেখে, বাকিটা নিয়ে যেতে পারেন ভক্ত। তবে প্রতি অমাবস্যার দিন পুরোহিত এসে এখানে পুজো করে যান। বাকি দিনগুলিতে ভক্তরাই শেষ কথা।
মন্দির চত্বরে আরও একটি ছোট মন্দির রয়েছে। যা ‘ছোট মা’ নামে পরিচিত। সেখানেও মা কালীর আরাধনা করা হয়। তবে এখানে রয়েছে মা কালীর শুধু মাত্র একটি হাত। সেটায় প্রধান মূর্তি হিসাবে পুজো হয়। পাশে একটি দেবী প্রতিমাও রয়েছে।
এই মন্দিরের পাশের একটি জমিতে কালীপুজোর পরের দিন ভক্তদের ভোগ দেওয়া হয়। কালীপুজোর সময় প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় ক্ষীরপাইয়ের বড় মায়ের মন্দিরে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।