Durga Puja 2019 Ananda Utsav 2019 Pujo Porikroma Durga Puja Celebration

চক্ষুদানের বার্তা দিয়ে দুর্গাপুজোর থিম

পুজোর থিম না আন্দোলনের রূপরেখা!

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৫
Share:

এখানে ঠাকুর দেখতে এলে দর্শনার্থীকে বোঝানো হবে মৃত্যুর পরে চক্ষুদান করা কেন জরুরি। সেই বিষয়ে প্রচার চলবে মাইকে। শুধু তাই নয়, মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকারও করা যাবে। সব মিলিয়ে পুজোর থিমে স্রেফ চমক নয়, বরং সামাজিক আন্দোলনের বার্তা দিতে চান পুজোর উদ্যোক্তারা।

Advertisement

হুগলির শ্রীরামপুরের কালীতলা এলাকায় উড়ালপুল সংলগ্ন ব্রজ দত্ত লেনে নিউ বয়েজ ক্লাবের পুজোয় দেখা যাবে এই ছবি। পুজোর বয়স ৩৩ বছর। মাঝারি বাজেট। তবে সামাজিক সচেতনতার নিরিখে এই পুজোর থিম রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। পুজোকর্তারা জানান, মণ্ডপে ঢোকার মুখে আলোর মাধ্যমে আগুনের লেলিহান শিখা, মডেলের মাধ্যমে কবরে শায়িত মানুষ দেখানো হবে। মৃত্যুর পরে মানবদেহের শেষ পরিণতি বোঝাতেই এই ভাবনা। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে থার্মোকলের উপরে আঁকা চোখ। নানা রঙের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের কথা বলতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। প্রতিমার পিছনেও চোখের আদল। মণ্ডপ জুড়ে মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ক স্লোগান।

অন্য দিকে, মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রচারপত্র এবং অঙ্গীকারপত্র নিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে হাজির থাকবেন শ্রীরামপুর সেবাকেন্দ্র ও চক্ষুব্যাঙ্কের সদস্যরা। দাহ করে বা কবর দিয়ে মৃতের চোখদু’টি নষ্ট না করে তা দান করে যাতে কাজে লাগানো
যায়, সে ব্যাপারে দর্শনার্থীদের বোঝাবেন তাঁরা। মাইকেও এই বিষয়ে চলবে প্রচার।

Advertisement

আরও পড়ুন: পুরনো রীতিতে পুজোর ঢাকে কাঠি গাড়ুই গ্রামে

কেন এই ভাবনা?

এর নেপথ্যে ডেঙ্গি! পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ হেমন্তকুমার ভড় জানান, ২০১৭ সালে এই এলাকায় ডেঙ্গি ছেয়ে গিয়েছিল। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ডেঙ্গি-আক্রান্তদের জন্য প্লেটলেট জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল। ওই বছর থেকে ক্লাবে রক্তদান শিবির শুরু হয়। সঙ্গে মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার শিবির। তিন বছরে প্রায় ২০ জন অঙ্গীকার করেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে চক্ষুদান আন্দোলনে যুক্ত লোকজনের থেকে তাঁরা জানতে পারেন, দৃষ্টিহীন বহু মানুষের চোখে আলো ফিরতে পারে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা গেলে। এর পরে, শুধু অঙ্গীকার শিবির করে তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করতে চাননি। গত কিছু দিনে এলাকায় মৃত তিন জনের চক্ষুদানের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। শ্রীরামপুর চক্ষুব্যাঙ্ক তা সংগ্রহ করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় প্রতিস্থাপনের জন্য।

হেমন্তের কথায়, ‘‘এই কাজে আমাদের অনেকেই উদ্বুদ্ধ। সেই কারণেই এমন থিম।’’ পুজো কমিটির অন্যতম সম্পাদক তথা স্থানীয় কাউন্সিলর রাজীব দত্ত বলেন, ‘‘বহু মানুষ উৎসবে সামিল হবেন। অনেকেরই হয়তো মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে ধারণা নেই। আবার কেউ আগ্রহী হলেও কোথায় যোগাযোগ করতে হবে, তা জানেন না। এখানে সবাইকে এই ব্যাপারে অবহিত করা যাবে।’’

আরও পড়ুন: হারিয়ে গেল শহরের সেই পুজোর দর্জিরা

শ্রীরামপুর চক্ষুব্যাঙ্কের সদস্য সিদাম সাহা বলেন, ‘‘পঁয়ত্রিশ বছর ধরে আমরা মরণোত্তর চোখ
সংগ্রহের কাজ করছি। গোটা রাজ্যে এই কাজে গত কয়েক বছর ধরে আমরাই প্রথম। শ্রীরামপুর তথা হুগলি জেলার বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠন এই নিয়ে প্রচার করেন। দুর্গাপুজো-সহ বিভিন্ন উৎসবেও প্রচার চলে। তবে দুর্গাপুজোকে পুরোপুরি এই ভাবে মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রচারের হাতিয়ার করে তোলা আগে দেখিনি। ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement