একশো কুড়ি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলেন এক মহাপুরুষ। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস নামেই তিনি বিখ্যাত মানুষের কাছে। আসল নাম গদাধর চট্টোপাধ্যায়। জন্ম হুগলি জেলার কামারপুকুরে।
শৈশব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিলেন গদাধর। পরবর্তীতে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে কলকাতার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে পুরোহিত হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু।
শ্রীরামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধর্মীয় অনুশীলন সে যুগে আলোড়ন ফেলেছিল বঙ্গীয় সমাজে।
‘যত মত তত পথ’- এই বাণীর প্রবর্তক ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। চরম অরাজকতা ও নৈরাজ্যের পরিবেশে ধর্মের সারকথা অত্যন্ত সহজ ভাবে বলে গিয়েছেন তিনি।
বর্তমানের অস্থির সময়ে দাঁড়িয়েও শ্রীরামকৃষ্ণ-চর্চায় মেলে মুক্তির পথ। ধর্মে ধর্মে বিভেদের মাঝে কুসংস্কার ও সামাজিক ভেদাভেদকে অগ্রাহ্য করে মানুষের ও সমাজের ত্রাতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন হুগলির এই প্রত্যন্ত গ্রামের যুবক।
সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রচলিত ধ্যানধারণাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। নিজের জীবন দিয়ে সত্যের সন্ধান দিয়ে গিয়েছিলেন সমাজকে।
বিভিন্ন ধর্মমতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভের চেষ্টায় মগ্ন হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। হিন্দু হয়েও একদা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ডের মধ্যে দর্ম পরিবর্তনের দিকটি তুলনায় স্বল্পালোচিত।
জানা যায়, ১৮৮৬-৮৭ সাল নাগাদ ইসলাম সাধনায় মনোনিবেশ করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। গুরু হিসেবে বেছে নেন গোবিন্দ রায়কে। গোবিন্দ রায় হিন্দু বাঙালি। কিন্তু ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে তাঁর নাম হয় ওয়াজেদ আলি খান।
এই গোবিন্দ রায়ের কাছেই ইসলাম মতে দীক্ষা নেন শ্রীরামকৃষ্ণ। গোবিন্দ রায় ছিলেন সুফি মতের সাধক, যা অনেকটাই হিন্দু বেদান্তের আদর্শের কাছাকাছি। সেই সময় মন্দিরে পূজার্চনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনকী হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বা ছবির দিকেও নাকি তাকাতেন না শ্রীরামকৃষ্ণ। সে সময়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের বাইরে থাকতেন তিনি। ভিতরে প্রবেশ করতেন না।
নিয়মিত নমাজ পড়তেন শ্রীরামকৃষ্ণ। মসজিদে যেতেন। কথামৃতে রয়েছে তাঁর নানা কাহিনি। সেখানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি বলছেন, ‘গোবিন্দ রায়ের কাছে আল্লা মন্ত্র নিলাম। কুঠিতে প্যাঁজ দিয়ে রান্না ভাত হলো। খানিক খেলুম।’
গোভক্ষণের ইচ্ছা জাগলেও মথুর বাবুর অনুরোধে তা তিনি খান। তিন দিন ইসলাম ধর্মে গভীর সাধনা করেন শ্রীরামকৃষ্ণ। সে সময়ে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনও চিন্তা তিনি মাথায় রাখেননি। এবং অচিরেই এ পথে সিদ্ধিলাভ করেন।
শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, খ্রিস্ট ও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেও সিদ্ধিলাভ করেন শ্রীরামকৃষ্ণ। সর্বস্তরের মানুষের কাছে ধর্মজীবনের নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।