দীপাবলির রাতে প্রত্যেক বাড়িরই আনাচ-কানাচ জুড়ে থাকে আলোর রোশনাই। সমস্ত আঁধার দূর করে আলোয় ভেসে যাওয়ার একটা রাত। আর তার জন্য কত না তোড়জোড়! বাজারেও বসে গিয়েছে হরেক আলোর পসরা। কিন্তু এ বার যদি নিজের বাড়ির আলো নিজেই তৈরি করে ফেলেন? মন্দ হবে না, বলুন! করোনা আবহে মনও ভাল হবে। নিজের ঘরও সাজবে নিজেরই তৈরি আলোতে।
আলোর যথাযথ ব্যবহার বদলে দিতে পারে বাড়ির অভ্যন্তরীণ একঘেয়েমি। বিবর্ণ হয়ে আসা দিনযাপনে এনে দিতে পারে রঙের ছোঁয়া। তাই আসন্ন দীপাবলি উপলক্ষে হাতে তৈরি আলোর সুলুকসন্ধান রইল পাঠকদের জন্য।
বোতল-বাতি: খাবার টেবিল বা ঘরের কোণ আলোকিত করতে বোতল-বাতির চেয়ে ভাল আর কিছু নেই। এর জন্য সবচেয়ে আদর্শ পুরনো কাচের বোতল। কোনও মিস্ত্রিকে দিয়ে বোতলের তলার গোল চাকতি কেটে বাদ দিয়ে দিন। খেতে বসার আগে টেবিলে বেশ কয়েকটা রঙিন কাঠের টুকরো রাখতে হবে। এর উপরে সাদা মোমবাতি বসিয়ে উপর থেকে কাচের বোতল বসিয়ে দিন। বোতলের ছিপি খুলতে ভুলবেন না যেন। এ ছাড়াও যদি ঝক্কি না চান, তা হলে বোতলের মুখে ছিপি লাগিয়ে তার উপরেই মোমবাতি বসান। মোম গলে গলে কাচের উপরে পড়ে তৈরি হবে জ্যামিতিক নকশাহীন সুন্দর বাতিদান।
বোতল-বাতির জন্য আদর্শ কাঁচের বোতল।
সুতোর লণ্ঠন: পাড়ার দোকানে নিশ্চয়ই বেলুন মিলবে। সেই বেলুন ফুলিয়ে নিতে হবে। বাটিতে সম পরিমাণে আঠা, জল মিশিয়ে পাতলা করে নিন। বেলুনের গায়ে আঠা লাগিয়ে পাটের দড়ি, উল অথবা নারকেল দড়ি তার উপরে ভাল করে পাকিয়ে নিন। কয়েক ঘণ্টা রেখে আঠা শুকিয়ে ফেলুন। এ বার পিন দিয়ে বেলুনের গায়ে ফুটো করে বেলুন বার করে নিন। দেখবেন সুতো, দড়ি বা উলের একটা শক্তপোক্ত খাঁচা তৈরি হয়েছে। এর পরে পছন্দ মতো রং করে একটা বাল্ব লাগিয়ে ঝুলিয়ে দিলেই হল। তৈরি হয়ে যাবে রঙিন সুতোর লণ্ঠন। বারান্দায় লম্বা দড়ি দিয়ে সারি সারি সুতোর লণ্ঠন ঝুলিয়ে দিন। আপনার চিরচেনা অন্দরমহলও নতুন লাগবে।
আরও পড়ুন: দরকারি হোক বা অদরকারি, জিনিস রাখতে বিকল্প নেই দেরাজের
কুইল্ড দিয়া: ঠাকুরঘরে কিংবা আয়নার সামনে মোমবাতির বদলে রাখুন কুইল্ড দিয়া। একটা পুরনো সিডি পরিষ্কার করে মাঝখানে টি-লাইট ক্যান্ডেল বসানোর মতো জায়গা ছেড়ে গোল আঁকুন। কুইলিং নিডলের সাহায্যে হ্যান্ডমেড পেপার দিয়ে বুনে নিন গোলাপ, টিয়ার ড্রপ, পাপড়ি জাতীয় মোটিফ। আলপনা দেওয়ার মতোই কুইলিং ডিজাইন তৈরি করতে হবে। ভিডিয়ো মিলবে ইউটিউবেই। এ বার মাঝে একটা টি-লাইট ক্যান্ডেল বসিয়ে দিলেই জমে যাবে মোমবাতির সাজ!
মোমবাতির বদলে ঠাকুরঘরে রাখুন কুইল্ড দিয়া।
নিউজপেপার টিউব ল্যাম্প: বাড়ির জমে থাকা পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি না করে বরং বানিয়ে ফেলুন হরেক রঙা বাতি। বেশ কয়েকটি খবরের কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে শক্ত করে নিন। এ বার কাগজের স্ট্রিপ মুড়ে মুড়ে সরু সরু চোঙের আকার বানিয়ে আঠা লাগান। চকের মতো দেখতে এই টিউবগুলোয় রং করুন মনের আনন্দে। একটা বড় কাগজে ষড়ভুজ এঁকে নিন। প্রতিটা বাহুর উপরে একটা করে টিউব লাগিয়ে লাগিয়ে ল্যাম্পের খাঁচা (পাশের ছবির মতো) বানান। সবশেষে ইচ্ছে মতো একটা আলো লাগিয়ে দিলেই ব্যস, আপনার ঘরেই আলোর রোশনাই!
আরও পড়ুন: সময়ে থমকে যাক দেওয়ালে-টেবিলে, বাড়িই এ বার ঘড়ি-ঘর
কাপকেক লাইনার লাইট: বাড়িতে মাফিন বা কাপকেক বানানোর জন্য নিশ্চয়ই রাখা থাকে রঙিন লাইনার্স? এ বার একটা বেলুন ফুলিয়ে তার গায়ে আঠা দিয়ে পুরনো খবরের কাগজ লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। পিন ফুটিয়ে বেলুন বার করে নিন। কাগজের খাঁচার উপরে রংচঙে মাফিন লাইনার্স কোলাজ করে লাগিয়ে আলো ঝুলিয়ে দিন।
রংচঙে মাফিন লাইনার্স কোলাজ করে বানিয়ে ফেলুন কাপকেক লাইনার লাইট।
এ তো গেল হাতে তৈরি আলোর কথা। এই সমস্ত আলো ছাড়াও জারের ভিতরে টুনি বাল্বের গোছা কিংবা সদর দরজার পাশে বড় কালো পাথরের পাত্রে জল ঢেলে রঙিন ফুল আর ভাসমান মোমবাতির সজ্জা বদলে দিতে পারে আপনার বাড়ির সাজ। কেউ যদি নিজের হাতে আলো না-ও তৈরি করেন, কিনে আনা আলো দিয়েই বাড়ি সাজাতে পারেন নানা ভাবে। শুধুমাত্র রেলিংয়ে নয়, বরং বুক শেল্ফের ধার ধরে অথবা আয়নার চারপাশে লাগান আলো। সিঁড়িতে ওঠা-নামার রেলিঙে পাকিয়ে পাকিয়ে অথবা গাছের টবেও আলগোছে আলো সাজিয়ে রাখতে পারেন।