অন্দরসজ্জায় আলোর ব্যবহার ঠিক যেন মহাকাব্যের মতো। পৌরাণিক চরিত্র সাজিয়ে যেমন মহাকাব্য লেখা হয়। কোনও চরিত্র প্রধান, কেউ আবার আড়ালে থেকেও সবটাই পরিচালনা করেন। আলোর ব্যবহার অনেকটা সেরকমই। ঘর ভর্তি আসবাবপত্র, সাজানোর জিনিস, দেওয়ালে টাঙানো ছবি। অন্দরের সাজগোজ-সহ সব কিছুকে রঙিন করে, সুন্দর করে যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করাই আলোর কাজ। আলো দিয়ে সাজানো না আলো দিয়ে আড়াল? জেনে নেওয়া যাক।
অন্দরসজ্জায় আলোর উৎস আড়ালে রাখা হয়। সারা ঘরে প্রয়োজনীয় আলো থাকবে, লাইট মিটার দিয়ে মেপে আলো ফেলা হবে, কিন্তু আলোর উৎস আড়াল করে রাখতে হবে। যে কোনও অপূর্ব অন্দরসজ্জায় আলোর উৎসকে আড়ালে রাখাই নিয়ম।
বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে যে আলোর আবছায়া থাকে, উজ্জ্বল লাগে, কিন্তু বোঝা যায় না কী ভাবে এমন হচ্ছে, তা আসলে আলোর উৎসকে লুকিয়ে রাখা। পুজোর প্যান্ডেলের শিল্পকলার সঙ্গে বাড়ির নকশা মিলবে না। বাড়ির ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে আলোর উৎস আড়াল করতে হয়, কিন্তু বিষয়টা আপাতভাবে একই।
আরও পড়ুন: ‘ওয়ার্ম’ কিংবা ‘কুল লাইট’, ঘরে এ বার শরতের রোশনাই
আলো যাতে সরাসরি চোখে এসে না লাগে তার জন্য খুব সাধারণ পরিকল্পনা হল ফলস সিলিং। এই ফলস সিলিংয়ের বিভিন্ন ট্রে-র আড়ালে বা সিলিংয়ের মধ্যে স্ট্রিপ লাইট বা বক্স লাইট, স্পট লাইট আটকে থাকে। এতে সরাসরি আলোর উৎস চোখে এসে লাগে না।
দেওয়ালে টিউব লাইট অনেকেই আজকাল ব্যবহার করেন না। এতে সরাসরি আলোর উৎস চোখে এসে লাগে। কখনও ওয়ার্ডরোবের উপর থেকে কিংবা ডিসপ্লে ইউনিটের আড়াল থেকে, ওয়াল প্যানেল টপের উপর থেকে টিউব বা স্পট রিফ্লেক্ট করা হয় ঘরে। এতে সরাসরি আলো চোখে এসে না লাগলেও প্রতিফলিত আলো ছড়িয়ে পড়ে ঘরে।
ঘরের সব জায়গায় আলোর ব্যবহার করা হোক মাপ অনুযায়ী।
রান্নাঘরে ক্যাবিনেটের নীচেও আলো লাগিয়ে নেওয়া যায়। সামনের ক্যাবিনেটের পাল্লা আলোকে আড়াল করে। এখানে আলো লাগালে কিচেন কাউন্টার আলো ঝলমল করে। এলকোব বা কুলুঙ্গির মধ্যে স্পট লাইট রাখা যায়। তার মধ্যে কোনও শো পিস রাখলে ওই জায়গাও আলোকিত হয়ে ওঠে। ঘরে পিকচার লাইট রাখা জরুরি। আলোকচিত্র থেকে ছবি সবটাই পিকচার লাইটে আরও ভাল লাগে। ঘরের সব জায়গায় আলোর ব্যবহার করা হোক মাপ অনুযায়ী। কোনও জায়গায় আলো কিছুটা বেশি হলে ভাল লাগে, কোনও জায়গায় কম হলে।
আরও পড়ুন: টব হোক বা ফুলদানি, ‘ফ্লাওয়ারি ডেকর’-এ ঝলমলে ঘর
আলো যেমন সমস্ত অন্দরসজ্জাকে অসম্ভব সুন্দর করে তোলে, তেমনি সবসময় বেশি আলোর ব্যবহার ভালো লাগে না। পরিমিত এবং যথাযথ আলোর ব্যবহার এবং সরাসরি আলোর প্রয়োগ না করে আলোর উৎসকে আড়ালে রাখা, অন্দরসজ্জার নান্দনিকতা এখানেই।