ঘর সাজানোর আগে বাচ্চাদের পছন্দ জেনে নিন।
কলকাতার পুজোয় আজ থিমের ছড়াছড়ি।এক একটা পুজোয় এক এক রকম ভাবনা। কোথাও পুরনো রাজবাড়ি তো কোথাও অযোধ্যার গুহাচিত্র। কোথাও জলপ্রপাত তো কোথাও আবার পুরো একটা চলন্ত ট্রেন। সব কিছুই থিম-মাফিক। এমনকি, মাতৃপ্রতিমাও তাই। যদিও পুজোয় থিমের প্রভাব আসার আগে থেকেই অন্দরসজ্জায় থিমের ভাবনা চলে এসেছিল। একটা সময় ছিল যখন ভাল অন্দরসজ্জা দেখতে হলে হিন্দি টিভি সিরিয়াল, কিম্বা সিনেমা, কিম্বা আর একটু আধুনিক অন্দরসজ্জা দেখতে হলে ইংরেজি সিনেমা, এই ছিল ভরসা। তখন ছিল দূরদর্শনের যুগ। কিছু ইংরেজি অন্দরসজ্জার বই যদিও পাওয়া যেত নিউ মার্কেটের দোকানগুলোতে, কিন্তু সেগুলোর দাম ছিল খুব বেশি। শিয়ালদহের ফুটপাথের পুরনো বইয়ের দোকানে দু’-একটি অন্দরসজ্জার ম্যাগাজিন পাওয়া যেত বটে কম দামে, এবং সেগুলোই ছিল মধ্যবিত্ত বাঙালির অন্দরসজ্জার আইডিয়ার ভরসা।
তখন থেকে কিম্বা তারও কিছুটা আগে থেকে অন্দরসজ্জায় থিমের ভাবনা চলে এসেছে। একটি বাচ্চাদের ঘর, সে ঘরটিকে বাচ্চাদের খুব প্রিয় করে তুলতে হবে। চারপাশটা সাজানো হবে এমন করে যে ওদের ছোট্ট ছোট্ট মনগুলি খুব ভাল হয়ে ওঠে এবং সেই সঙ্গে নতুন কিছু শিখতেও পারে ওরা। আর প্রাথমিক ভাবে সেই ভাবনা মাথায় নিয়েই শুরু হল থিম-ভিত্তিক অন্দরসজ্জা।
বাচ্চাদের ঘরকে ওদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রের ছবি দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া যায়। কিম্বা প্ল্যানেট বা আন্ডার ওয়াটার কিম্বা রূপকথা, এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোকে ভিত্তি করে থিম তৈরি করে সাজিয়ে তোলা যায় বাচ্চাদের ঘর। দেওয়ালে ছবি আঁকা, কিম্বা ওয়ার্ডরোবে আঁকা কিম্বা বেড কিম্বা স্টাডি টেবিল সে রকম ডিজাইনে বানানো, করে ফেলা যায় সবগুলি।
আরও পড়ুন: মনের মতো বেসিন লাগান, হেসে উঠবে বাড়ি
বাচ্চাদের ঘরের থেকে কিছুটা পরিবর্তন হবে টিন এজ রুমে। ওদের এমন একটা বয়স যেখানে বাচ্চাদের মতোও হবে না আবার বড়দের মতোও হবে না। একটা স্বপ্ন, কিছুটা উচ্চাকাঙ্খা, ভালবাসা, গান, খেলা, সিনেমা— এ রকম নানা বিষয়ে ওদের আগ্রহ, এ সব মাথায় রেখেই টিনএজ বেড রুম সাজিয়ে তোলা হয়।
আবার ইন জেনারেল থিম-নির্ভর ঘর বানিয়ে নেওয়া যায়। ধরুন, আপনি আপনার বাড়ির বসবার ঘরকে একটা ট্র্যাডিশনাল লুক দিতে চান, তখন বসার ঘরের আসবাবপত্রগুলিকে একটু পুরনো স্টাইলে বানিয়ে নিতে হবে। সোফায় থাকবে বাটালির কাজ। মেহগনি কাঠ হলেই ভাল। খুব উজ্জ্বল পালিশ থাকবে না। ন্যাচরাল পালিশ হলেই হবে। বাড়ির পুরনো সাইড টেবিল, কিম্বা সেন্টার টেবিল ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে পারেন ঘরে। ব্যবহার না করা পুরনো টিনের হ্যারিকেন, কলের গান বা রেকর্ড প্লেয়ার, খুব পুরনো রেডিও সেট, হুঁকো, কিম্বা পুরনো দিনের থেকে যাওয়া কিছু, সেগুলোকে যত্ন করে সাজিয়ে রাখতে হবে। বসবার ঘরে একটা কনসোল বসাবেন। পুরনো একটা বড় ফ্রেম করা আয়না এবং সামনে একটা সরু টেবিলের মতো, যার উপরের দিকে ড্রয়ার থাকবে। ট্র্যাডিশনাল ঘর সাজানোয় ক্যানভাসে আঁকা কয়েকটা অয়েল পেন্টিং হলে খুব ভাল হয়। ট্র্যাডিশনাল ডিজাইনে ঘর সাজালে একটা কথা মনে রাখতে হবে, কোথাও যেন রংয়ের উজ্জ্বলতা এতটুকুও বেশি না হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নকশাদার সোফায় জমুক পুজোর আড্ডা, সোফা কেনার আগে দেখে নিন এ সব টিপ্স
থিম-নির্ভর অন্দরসজ্জায় কয়েকটা নেগেটিভ ব্যাপারস্যাপারও আছে। যেমন, থিমের ভাবনা কিছু দিন খুব নতুন মনে হলেও তার পর একটা একঘেয়েমি চলে আসবে। একই ব্যাপার হবে থিম ভাবনায় ঘরের রঙে। থিম ভাবনায় সাধারণত ঘরের কালার স্কিম হয় মনোক্রমিক। কিন্তু মনোক্রমে একঘেয়েমি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে।
নেগেটিভ কিছু ভাবনার পরেও থিমেটিক অন্দরসজ্জা একটা অন্য আবহ তৈরি করে। আর তাই অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে থিম নির্ভরতা সে দিনও যেমন ছিল আজও তেমনই প্রাসঙ্গিক।
(লেখক অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ)
ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।