পুজোর আগে আবার খারাপ খবর। মেট্রো রেলের লাইনে ঝাঁপিয়ে আবার আত্মহত্যা! এ ঘটনা বেড়েই চলেছে উত্তরোত্তর। কেন এমন হচ্ছে বার বার? পুজোর আর কতটুকুই বা বাকি! সামনে এত বড় আনন্দের দিন এই মানুষটিকে উদ্দীপনা দিল না?
ইদানীং অনেকেই বড় হতাশায় ভোগেন। এক সময় এমন চরম পথ বেছে নেন। জীবনটা শেষ করে দেন। বহু বাড়িতে এমন মানুষ আছেন। যাঁরা অবসাদে ভোগেন এবং জীবন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত গোপনে নিচ্ছেন, ইঙ্গিত দেন না তেমন। হঠাৎ ঘটে যায় চরম একটা কিছু। এঁদের মতিগতি সত্যি করেই কি আগেভাগে বোঝার উপায় নেই!
কী বলেন ‘মন’ নিয়ে লাগাতার তল্লাশি চালানো মানুষজনরা? তেমনই একজন মনরোগ চিকিৎসক রীমা মুখোপাধ্যায়। এ নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন-কে কী বললেন তিনি, শুনুন।
রীমা বললেন, ‘পুজো মানেই যে আনন্দ এটি কেবল একটা ধারণা মাত্র। যাঁরা অবসাদের মধ্যে থাকেন, তাঁরা এই আনন্দ উপলবদ্ধি করতে পারেন না।’
রীমা জানালেন, অবসাদের কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। কারও হয়তো সম্পর্কে বিচ্ছেদ হয়েছে, কারও হয়তো চাকরি গিয়েছে বা কেউ হয়তো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি বা কারও ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। আরও নানা কারণে অবসাদ ঘিরে ধরতে পারে তাঁকে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আপনার পাশের মানুষটির জীবনে এমন কোনও একটি বিপর্যয় ঘটলেই তাঁকে নিয়ে সতর্ক হয়ে যান। তিনি যদি বেচাল কথা বলেন, অন্য রকম আচরণ করেন, মেজাজ হারাবেন না। ধৈর্য ধরে তাঁর পাশে থাকুন। আগের চেয়ে বেশি সময় দিন।
কী করে বুঝবেন, নিকটজন অবসাদে আছেন কিনা?
রীমা বললেন, ‘যদি দেখেন আপনার আশেপাশে থাকা খুব প্রাণোচ্ছল মানুষটি হঠাৎ খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন, তা কিন্তু হতে পারে অবসাদের কারণ। মুখের ভাব দেখেও বুঝে নিতে পারেন আপনার আপনজনের মনের অবস্থা। খেয়াল রাখুন কথাবার্তার দিকেও।’
সহজে রেগে যাওয়া, সহজে কেঁদে ফেলা, কাজে যেতে অনীহা, এই সব কিন্তু হতে পারে অবসাদের লক্ষণ। অনেক সময় আবার দেখা যায় অবসাদে মানুষ ভালবাসা হারায় নিজের শখ গুলির প্রতিও। কেউ হয়তো গান গাইতে ভালবাসেন বা কেউ খেলাধুলো, অবসাদে আক্রান্ত হলে তিনি এ সব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। রীমা তাই জোর দিচ্ছেন পাশের মানুষের ব্যবহারিক পরিবর্তন একটু অন্য রকম হলে সচেতন হয়ে যাওয়ার প্রতি।
রীমা বললেন, আরেকটি কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ— ‘আমি মরে যতে চাই’ বা ‘আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না’ এই কথাগুলি কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার নয়। আমরা অনেক সময় মনে করি যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা কিছু করবেন না। এটি ভুল ধারণা। দেখা যায়, আত্মহত্যা যাঁরা করেন, তাঁরা তার আগে কাউকে না কাউকে এই কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি হয়তো তা এড়িয়ে গিয়েছেন। নিজের ভাল জিনিসপত্র বা পচ্ছন্দের জিনিসপত্র দান করে দেওয়াও হতে পারে অবসাদের লক্ষণ।
তখন কী করবেন?
এই ধরনের ঘটনা দেখলে অবশ্যই কথা বলুন আপানার কাছের মানুষটির সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করুন তাঁর অসুবিধার কথা। আরও বেশি করে যত্নশীল হোন তাঁর প্রতি। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন। তাঁকে অযথা অন্যের কঠিন জীবনের কথা বলে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন না।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।