দেবী বরণ করার সময় সিঁদুর না খেললে চলে না। এ দিকে এর প্রভাবে অনেকেরই ত্বকে র্যাশ-সহ নানা সমস্যা হতে পারে। শুধু ত্বকের সমস্যাই নয়, করোনা আবহে সিঁদুর খেলার ফল হতে পারে বিপজ্জনক। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে সিঁদুর খেলার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কখনওই সম্ভব নয়, এমনই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এক দিন অল্পস্বল্প সিঁদুর লাগালে সচরাচর কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একসঙ্গে অনেক বেশি পরিমাণে সিঁদুর ঘষে লাগালে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে সিঁদুর খেলা মানে পরস্পরের কাছে আসা, কপালে সিঁদুর ঠেকানো, হাত দিয়ে সেই সিঁদুর ছোঁয়া। যেখানে ভিড়ে যেতেই মানা করছেন চিকিৎসকরা। সেখানে সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ কি করা উচিত?
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, কোনওরকম ভিড়েই যাওয়া উচিত না। বয়স্ক মানুষরা একেবারেই যাবেন না। তুলনামূলক কমবয়সিদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি রয়েছে। বাড়িতেই প্রয়োজনে প্রথা পালন করুন। এ বছরে যে কোনও রকম ভিড় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে সিঁদুরখেলা কি আদৌ সম্ভব প্রশ্ন তুলেছেন অরিন্দম। এ ছাড়াও তাঁর পরামর্শ, অনেকেরই কোনও উপসর্গ নেই। সুস্থ রয়েছেন। তবে তিনি করোনা বাহক হিসেবে কাজ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকেই যাবে। তাই মাস্ক পরুন। সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখুন। সাময়িক আনন্দ করতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না, অনুরোধ চিকিৎসকের।
আরও পড়ুন: করোনা থেকে সেরে উঠেছেন? পুজোর সময় কী কী খেয়াল রাখবেন?
দেবী বরণ করার সময় সিঁদুর না খেললে চলে না, তবে এই বছর তাতে লাগাম টানুন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, সিঁদুর হাতে ছোঁয়ানো সেখান থেকে অন্য কারও হাতে ছোঁয়া কিংবা গালে লাগানো এগুলোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না এ বছরে। যতটা সম্ভব সাবধানে প্রথা পালন করতে হবে। ডায়াবিটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বাড়ি থেকে একেবারেই বেরনো উচিত নয়, এ বছরের পুজোটা যে অন্য রকম, সেটা বোঝাতে হবে প্রবীণদের। যাঁরা একা থাকেন, শরীর সুস্থ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রিয়জন কিংবা প্রতিবেশীদেরই দায়িত্ব নিতে হবে বোঝানোর, জানালেন সুবর্ণ।
বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রে কী হবে?
নির্দিষ্ট কেউ বরণের দায়িত্ব নিয়ে সাবধানে দুর্গাবরণের প্রথা পালনের পরামর্শই দিচ্ছেন দুই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন: অন্য রকম শারদীয়ায় এই সব মানলেই মন ভাল, নিরাপদে কাটবে পুজো
মুখে-গালে সিঁদুর লাগিয়ে এ বছর দেবীবরণ না করাই ভাল, পরামর্শ চিকিৎসকদের।
সিঁদুর খেলায় ক্ষতি ত্বকেও
১. যাঁরা নিয়মিত সিঁদুর ব্যবহার করেন তাঁদের ঝুঁকি আরও বেশি। ত্বক চিকিসক অরিত্র সরকারের কথায়, ‘‘কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস অর্থাৎ কোনও কিছুর সংস্পর্শে সংবেদনশীল ত্বক জ্বালা করে ও র্যাশ হতে পারে।’’ বেশি সিঁদুর ঘষে ত্বকে মাখালে এর থেকে র্যাশ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
২. ত্বকের সিঁদুর লাগা অংশের মেলানিন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এর ফলে ত্বকের সেই নির্দিষ্ট অংশ দুধ সাদা হয়ে যায়, যার ডাক্তারি নাম ‘কেমিক্যাল লিউকোডার্মা’, সাধারণ মানুষ একে শ্বেতী বলেন।
৩. ত্বক সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিঁদুর তোলার সময়। সাবান ঘষে সিঁদুর তুলতে গিয়ে ত্বকের উপরের স্তর নষ্ট হয়ে গিয়ে র্যাশ হয় এবং জ্বালা করে।