বসতবাড়িতে গণেশ মূর্তি স্থাপন করা অথবা গণেশের ছবি রাখা-- দুয়েরই উদ্দেশ্য একটাই। বাধা দূর করা এবং সংসারে সুখ-সমৃদ্ধির দেবতা হিসেবে গণেশের আশীর্বাদ প্রার্থনা। দিন কয়েক পরেই গণেশ পুজো। আসুন, জেনে নেওয়া যাক, বাড়িতে গণেশ মূর্তি স্থাপনের ভাল-মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে। বাস্তু মতের খোঁজ দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রথমেই জানা যাক, বাস্তু কী।
স্থাপত্যের অতি প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান বাস্তু একটি কাঠামোতে শক্তির সুরেলা ক্ষেত্র তৈরি করে। ইতিবাচক-নেতিবাচক, দুই শক্তিরই পাশাপাশি প্রকৃতির পাঁচ উপাদানের একটি ভারসাম্য গড়ে দেয় এটি। যার কাজ কোথায় কোন জিনিস স্থাপিত হবে তা নির্দিষ্ট করা এবং তার সঙ্গে গৃহবাসীদের মুখোমুখি হওয়াটা ঠিক কী ভাবে হবে তা বলে দেওয়া।
বাড়িতে গণেশ মূর্তি স্থাপন নিয়ে তা হলে কী বলছে বাস্তু?
১. গণেশ মূর্তির রঙ - সাদা রঙের গণেশ মূর্তি বাড়িতে শান্তি-সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। সিঁদুরে গণেশ আনে বিলাসিতা। আর সোনার গণেশ সৌভাগ্য বৃদ্ধি করে সংসারের।
২. বামমুখী শুঁড় - গণেশের শুঁড় বাঁ দিকে ঘোরানো থাকাটা শুভ ইঙ্গিত। দেবতা নমনীয় থাকেন, তাঁকে খুশি রাখা সহজ। একে দক্ষিণমুখী গণেশ বলা হয়। ডান দিকে ঘোরানো শুঁড়ের গণেশ কঠোর ও রাগান্বিত মেজাজের হন।
৩. গণেশ মূর্তির ধরনটা গুরুত্বপূর্ণ তাঁকে গৃহস্থের বাড়িতে স্থাপন করার প্রশ্নে। গণেশের পরিবেশবান্ধব মূর্তি উৎসবের মাত্রা বৃদ্ধি করে। রুপোর গণেশ সেই সংসারের খ্যাতি বাড়ায়। কাঠের গণেশ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু আনে। স্ফটিকের গণেশ বাস্তুদোষ কাটায়। নিম-আম গাছের কাঠের গণেশ মূর্তি সৌভাগ্য বাড়ায়। এমনকী গোবরে তৈরি গণেশ মূর্তি স্থাপন করলে বাড়ির নেতিবাচকতা দূর হয়।
৪. বাড়ির প্রধান প্রবেশ দ্বারে গণেশ মূর্তি স্থাপন করুন, সৌভাগ্য বৃদ্ধি পাবে। তবে সেই গণেশ মূর্তির মুখ যেন প্রধান প্রবেশ দ্বারের পিছন ঘুরে থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ গণেশের মুখ যেন বাড়ির ভিতর দিকে হয়।
৫. বাড়ির শৌচাগার এবং ভাঁড়ারঘরের কাছাকাছি জায়গায় গণেশ মূর্তি রাখা নৈব নৈব চ। এতে নেতিবাচকতা বেড়ে যায়। বরং বাড়ির সবচেয়ে বাসযোগ্য ও ভিড়ভাট্টা বহুল জায়গায় স্থাপিত হলে ভাল হয়।
৬. গণেশের উপবিষ্ট বা হেলান দিয়ে বসা মূর্তিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি সংসারের বিলাসিতার প্রতীক। আর একটি ধরন আছে গণেশ মূর্তির। সোজা হয়ে বসা। এই রকম গণেশ মূর্তি শান্ত ভাব ও সমৃদ্ধি আনে সংসারে।
৭. বাড়ির দক্ষিণ দিকে গণেশের মুখ ঘোরানো মূর্তি একদম রাখা চলবে না। নেতিবাচক পরিবেশ বাড়তে পারে এতে। আদর্শগত ভাবে গণেশের মুখ ঘোরানোর সঠিক দিক হল উত্তর দিক। শিবের পুত্র বলা হয় গণেশকে। আর শিব থাকেন উত্তরে। তাই গণেশের মুখ উত্তরমুখী হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
৮. বাড়িতে একাধিক গণেশ মূর্তি না রাখাই ভাল। একক গণেশ মূর্তি স্থাপন করা বেশি ঠিক। কাছাকাছি একাধিক মূর্তি ঋদ্ধি সিদ্ধিকে বিব্রত করে।
৯. সিদ্ধিদাতা গণেশকে সব সময়ে মাটি থেকে উঁচুতে, অর্থাৎ কোনও প্ল্যাটফর্মের উপরে রাখা উচিত। গণপতি সরাসরি মাটির সংস্পর্শে এলে বাধা দূর করার ক্ষমতা কমে যায়।
১০. গণেশ ঠাকুরের প্রিয় রঙ লাল। তাই বাড়িতে স্থাপিত গণেশ মূর্তির চারপাশটা লাল রঙ থাকলে ভাল। নিদেনপক্ষে একটা লাল কাপড়ের উপরে গণেশকে বসালেও ভাল বাস্তু ফল পাওয়া যেতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।