আপনি দীর্ঘ দিন ধরে ‘গণেশ জননী’-কে বিষয় করে ছবি আঁকছেন। এই ভাবনা কি আপনার মস্তিষ্কপ্রসূত। না কি অন্য কারও?
না না। আমিই ভেবে ছিলাম। তখন আমি কলাভবনে। ১৯৬০-৬১ সাল হবে হয়তো। মানে ওই ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। ফলে বুঝতেই পারছেন আজ থেকে প্রায় তেষট্টি-চৌষট্টি বছর আগের কথা।
বাবা! আপনার এখন বয়েস কত?
আমার বয়েসের কী গাছ-পাথর আছে? ৮০ ছাড়িয়েছে।
মোট কত গুলি গণেশ জননী এঁকেছেন?
হিসেব নেই। ও আমি চোখ বুঁজে আঁকতে পারি।
তা’ও যদি একটা সংখ্যার কথা বলতে হয়? ২০০-৩০০ হবে কি?
তা হতে পারে।
গণেশ জননী মানে তো পার্বতী?
না, গণেশ জননী আর পার্বতী আলাদা।
আচ্ছা! দুটোর ভেতর তফাতটা কোথায়?
পার্বতী হচ্ছে, শিবালয়ে যখন আসেন উমা। গণেশ জননীর সঙ্গে শিবের কোনও যোগ নেই। আসলে কার্তিককে সে ভাবে কখনও পার্বতী নেননি! গণেশ বরং তাঁর কাছে আদরণীয়। সেই একটা গল্প আছে না, কার্তিক-গণেশ, দু’জনকে বলা হয়েছিল, কে আগে পৃথিবীকে ঘুরে আসতে পারবে। কার্তিক ঘুরতে বেরিয়ে পড়ল ময়ুরের পিঠে চড়ে। আর গণেশ মায়ের চারপাশে ঘুরে বসে পড়েছিল!
ভীষণ প্রচলিত গল্প। কার্তিককে পার্বতী নেননি বলছেন, পুত্র হিসেবে?
না নেননি।
গণেশ জননীতে আপনার বিভিন্ন রকম রঙের কাজ আছে।
সে তো আছে। আর বলি, আমাদের মানুষের ভেতরে যা-যা হাবভাব, গণেশকে আমি সে ভাবেই ধরতে চেয়েছি আমার ছবিতে।
মানুষের আদলে আঁকা গণেশ?
হ্যাঁ, পুরো। পুরোটা তাই।
আর বেশির ভাগ দেখেছি, মায়ের কোলে বসানো গণেশ।
হ্যাঁ। আসলে আমার কাছে গণেশ বড় হয় না।
শেষ কবে গণেশ জননী এঁকেছেন?
বলতে পারব না।
আসলে আজ গণেশ চতুর্থী তো? তাই!
ও! তবে আমার কাছে গণেশ চতুর্থীর আলাদা কোনও মানে নেই। আমি তো রোজই ‘চতুর্থী’ করি। দুর্গাপুজোর যেমন আলাদা করে আমার কাছে মানে হয় না। কারণ, সব সময় দুর্গার ছবি আঁকছি। বিশেষ কোনও আলাদা দিনকে ধরতে চাই না।
গণেশ জননী আপনার একদম মৌলিক ভাবনা। এর জন্য আপনাকে জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও প্রশংসাসূচক স্বীকৃতি পেতে দেখিনি!
এ নিয়ে আমি আর কী বলব! তবে এটা প্রশংসা, স্বীকৃতি পাওয়া বা না-পাওয়াটা বড় কথা নয়। আমার মনের প্রকাশ করতে পারছি কি না, সেটাই হচ্ছে আসল ব্যপার।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
-