ট্রেন্ডে যখন ‘গন্ধরাজ’
ঠিক যেন প্রচলিত প্রবাদের মতো — 'ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনং'- অর্থাৎ ভোজন অর্ধেক সম্পন্ন হয় ঘ্রাণেই। সেই নাসিকা পথেই রসনা তৃপ্তির দরবারে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ‘গন্ধরাজ’-এর। বাঙালি হেঁসেলে 'গন্ধরাজ' আগেও ছিল। সে কারণেই তো ‘গন্ধরাজ ভেটকির’ অবতারণা। ‘মেনল্যান্ড চায়না’, ‘ওহ ক্যালকাটা’-সহ শহরের নামী-দামি বেশ কিছু রেস্তরাঁয় ‘গন্ধরাজ ভেটকি’ বিখ্যাত স্বাদের গুণেই। রসিকেরা বলেন, ‘সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস’-এর ‘গন্ধরাজ গ্রিলড ভেটকি’ মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়! বাঙালির রান্নাঘরে তাই গন্ধরাজ যে ছিল, তা বোধহয় আর আলাদা করে প্রমাণ করার দরকার পরে না।
গন্ধরাজ ভেটকি
সম্প্রতি শিরোনামে এসেছে গন্ধরাজ। কারণ লর্ডস-এর মোড়ে ‘লিওনস’-এ পাওয়া যাচ্ছে ‘গন্ধরাজ মোমো’। মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এই মোমোর টানে। প্রসঙ্গ হল এই গন্ধরাজ মোমো আদতে কী? তিব্বতের অতি পরিচিত পদ মোমো। সেই মোমোই যখন পাহাড় পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করল, ভারতীয় পদগুলির সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে গেল সেই রেসিপি। হাজার রকম মোমোর পদ। সেই তালিকাতেই নতুন যোগ হয়েছে ‘গন্ধরাজ মোমো’। কিন্তু হঠাৎ এমন ইচ্ছে হল কার?
গত বছরের শেষের দিকে এই নতুন ফিউশন মোমোর আবির্ভাব হয় অরিজিৎ রায়চৌধুরী ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে। শোনা যাচ্ছে রোজ প্রায় ৪০০০ মোমো বিক্রি হয় 'লিওনস'-এ। সবুজ রঙের এই মোমো পরিবেশন করা হয় ভিনিগ্রেট ও টমেটো-লঙ্কার সস দিয়ে। বলা বাহুল্য, কলকাতার স্ট্রিট ফুডের ভাণ্ডারে ‘হিট’ সংযোজন এটি। এক বারান্দা খোলা হাওয়ার মতো!
গন্ধরাজ মোমো
খাবার নিয়ে নানাবিধ এক্সপেরিমেন্ট ছিল, আছে ও থাকবে। একটা সময় ছিল, যখন বাংলার রসগোল্লার রং ছিল মাত্র দু’টি। সারা বছর সাদা, আর শীতের সময়ে একটু খয়েরি আভা মাখা — নলেন গুড়ের রসগোল্লা। এখন শহর জুড়ে কমপক্ষে দশটি রঙের রসগোল্লা পাওয়া যাবে খুঁজলে। কেশর হলুদ, কমলা ভোগ, লেবু রসগোল্লা, আম রসগোল্লা, আরও কত কী! প্রতিযোগিতার হিড়িকে গা ভাসিয়েই বুঝি হালে লঙ্কার রসগোল্লাও পাওয়া যাচ্ছে শহরে। বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি!
স্পাইসি রসগোল্লা
গন্ধরাজ ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে নতুন দৌড় শুরু করেছে 'গন্ধরাজ রোল'ও। বিজয়গড়ের ‘দেশি ফুডিজ’-এ পাওয়া যাচ্ছে গন্ধরাজ কাঠি রোল। দেখতে সবুজ রঙা। গন্ধরাজ লেবুর স্বাদ এবং নানা রকম পুরের নিখুঁত ভারসাম্যে তৈরি অভূতপূর্ব স্বাদের এই রোল খেতে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
গন্ধরাজ রোল
গন্ধরাজ ঘোল
তবে এই ট্রেন্ডের যুগে অনেকেই হয়তো জানেন না গন্ধরাজ ঘোলের কথা। প্রসঙ্গ ক্রমে আসতেই হবে এই বিশেষ ঘোলের কথায়। ‘সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস’-এর মেনুতে অন্যতম এই গন্ধরাজ ঘোল। এ ছাড়া এখানকার গন্ধরাজ চিকেন তো ইতিমধ্যেই অনেকে চেখে দেখেছেন। যদি মিস করে থাকেন, তবে এই ‘গন্ধরাজ’ ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে একবার ঢুঁ মেরেই আসুন না! নিজেও বুঝবেন রোল থেকে ঘোল, কেমন ভোল বদলাচ্ছে এই গন্ধরাজ!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।