উত্তর কলকাতার হাতিবাগানের মোড়। সেখান থেকে শোভাবাজার যাওয়ার পথে একটা ক্যাফে। একটা সাবেক ঘরানার পুরনো বাড়ির মাঝে ইউরোপীয় ধাঁচের আঁকিবুঁকি। ভিতরে ঢুকতেই নকশা, পুরনো টেলিফোন, কাঠের গাড়ির মডেল, প্রাচীন আমলের ঘড়ি। ঠাকুমা-দিদিমার আমলের একটা সুবাস, দেওয়ালে বব ডিলানের ছবি আর সঙ্গে এক কাপ ক্যামোমাইল টি বা ধোঁয়া ওঠা ম্যাজিক কফি। চাইলে রোস্টেড চিকেন কিংবা পর্ক প্ল্যাটার। ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা জ্যাজ। মুখে মাস্কটা অল্প নামিয়ে, ধূমায়িত পানীয়কে সাক্ষী রেখে পুজোয় প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার আদর্শ জায়গাও বটে!
না, এটা কোনও সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়। একেবারে বাস্তব। উত্তর কলকাতার আড্ডার ঠেক ‘ক্যাফে বাই দ্য লেন, নর্থ’-এ তাহলে আসতে হবে আপনাকে। উত্তর কিংবা মধ্য কলকাতার তরুণ প্রজন্মের কথা ভেবেই এই ক্যাফের ভাবনা অর্মিত মুখোপাধ্যায়ের। এ ক্যাফে তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। সঙ্গে রয়েছেন ক্যাফের ম্যানেজার লাবণ্য দত্ত ও তাঁর বন্ধুরা।
আরও পড়ুন: তুলতুলে পাঁঠার মাংসে বাজিমাত, নেহারি খাস কী ভাবে বানায় ‘অওধ ১৫৯০’?
চিকেন, হ্যাম, বেকন পর্কের সঙ্গেই মাটনের নানা সাইড ডিশের আয়োজন করছেন তাঁরা। ক্যাফের শুরু চলতি বছরের জানুয়ারিতেই। তার পর মাসদুয়েক দিব্যি চলছিল। ক্রেতাদের ভিড়ে ছয়লাপ। আচমকাই করোনার হানা। অর্থনৈতিক মন্দা। তবুও হাল ছাড়েননি লাবণ্যরা। অ্যাপের মাধ্যমে খাবারের ডেলিভারির সঙ্গে নিজস্ব ডেলিভারিরও ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। এর ফলে ডেলিভারি কর্মীদের পাশে আরও বেশি করে থাকা যাবে বলেই মনে করেন তিনি।
পুজোর সময় পর্ক চিকেনের স্পেশাল ডিশ থাকছে উত্তর কলকাতার এই ক্যাফেতে।
ক্যাফে মানেই যে শুধু কফি এমনটা কিন্তু নয়, ডান্সিং কফির মতো অভিনব পানীয়ের পাশাপাশি লাগুন মোহিতো, ক্যামোমাইল টি, প্যাশন ফ্রুট টি, দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশের মতো নানারকম চায়ের সম্ভার রয়েছে এই ক্যাফেতে। রয়েছে চিকেনের রোস্ট তবে সঙ্গে মধু-দইয়ের আলতো মিশেল আর মাস্টার্ড বা সর্ষের ড্রেসিং। এ বছর নববর্ষতেই সর্ষে দিয়ে পাঁঠার মাংসের পদ অনেকেই পছন্দ করেছিলেন জানান ক্যাফের ম্যানেজার লাবণ্য দত্ত।
আরও পড়ুন: দেশীয় ফিউশনে ‘এডিবল আর্ট’, পছন্দের নিরামিষ খেতে আসতেই হবে ‘গ্রেস’-এ
তাই পুজোর সময় বিশেষ মাটনের পদ রাখতে চাইছে উত্তর কলকাতার এই ক্যাফে। থাকবে হরেক রকম চিকেন উইংস, বদলে যাবে সঙ্গের সসটিও। কিন্তু এখন তো শহরের সর্বত্র ক্যাফে রয়েছে, কে এই ক্যাফেতেই আসবেন মানুষ। এর উত্তরে লাবণ্য জানালেন, উত্তর এবং মধ্য কলকাতায় এ ধরনের ক্যাফে নেই বললেই চলে, নানা ধরনের চা ও কফির সঙ্গে পর্ক, বেকন, হ্যামের নানা রকম সাইড ডিশও রয়েছে এখানে। শহরের পর্কপ্রেমীদের ঠেক হতে পারে উত্তর কলকাতার এই ক্যাফে। নানা রকম ফিউশন ফুড নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে তাঁদের। এ ছাড়াও পুজোর পরিকল্পনা তো রয়েইছে। সবমিলিয়ে এই ক্যাফে ‘জরা হটকে’এ কথা বলা যেতে পারে নি়ঃসন্দেহে। তাহলে পুজোয় একটু অন্য স্বাদের মাটন কিংবা পছন্দের ধূমায়িত পানীয় আর পাশে মনের মানুষটি। একা নিজের মতো করে সময় কাটাতে চাইলেও এই ক্যাফে একেবারে আদর্শ। বইপ্রেমীদের জন্য বইও রয়েছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রোম হোম’-এ কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়লে ল্যাপটপ নিয়ে এসেও কাজ করতে পারেন। ক্যাফের পরিবেশে কাজ করার এনার্জি খানিকটা হলেও বেড়ে যাবে। এসেই দেখুন, পুজোর প্রেমের অন্য নাম ‘ক্যাফে বাই দ্য লেন-নর্থ’ হয়ে যেতেও পারে!