পাঁঠার মাংস শুনলেই জিভে জল আসে বাঙালির। বিশেষ এক ধরনের পাঁঠার মাংস রয়েছে যার প্রচলন সেই মোঘল আমলে। আরবি শব্দ নাহারের মানে হল সকাল। কথিত আছে, নবাবরা সকালের প্রার্থনার পর সূর্য উঠলে তার পর নাকি এই রান্নাটি খেতেন। তাই রান্নার নাম নেহারি খাস। মোঘল আমলে নাকি এই রান্না করতে সময় লাগত প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। ঢিমে আঁচে রান্নার স্বাদ মুখে লেগে থাকত নবাবদের। দিল্লির নবাবি রাঁধুনিদের হাতে তৈরি এই পদ কলকাতার রেস্তরাঁ ‘অওধ ১৫৯০’-এর অন্যতম বৈশিষ্ট। অতি যত্ন নিয়ে এই রেস্তরাঁবেশ কয়েক বছর ধরে নবাবি পদ পরিবেশন করছে। রেস্তরাঁর সর্বাধিনায়ক শিলাদিত্য চৌধুরী আনন্দবাজার ডিজিটালের পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন এই পদের রহস্য।
প্রণালী: মাংস পরিষ্কার করে ধুয়ে রেখে দিতে হবে। ইয়াখনির জন্য পেঁয়াজ কাটতে হবে। প্রেশার কুকারে বা বড় পাত্রে পেঁয়াজ-সহ সব উপকরণ দিয়ে, তিন তাপ জল দিতে হবে। আধ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। যতক্ষণ না ইয়াখনির মাংসটা তুলতুলে হয়ে যায়।
এ দিকে পেঁয়াজ ছাড়াতে হবে রান্নার জন্য।আদা বেটে নিতে হবে।রসুনের রস নিতে হবে। বাকি সব মশলা শুকনো তাওয়ায় রোস্ট করে নিতে হবে। এর পর সর্ষের তেল গরম করতে দিতে হবে। এ পর পাত্রটা থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে গেলে পাত্রটা নামিয়ে তার মধ্যে রসুনের রস দিতে হবে। খুব সাবধানে এই কাজ করতে হবে। এর পর আবারও পাত্রটা আঁচে বসিয়ে পেঁয়াজগুলি সোনালি-বাদামী রং হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। এর পর পেঁয়াজগুলিকে আলতো করে তুলে নিয়ে গুঁড়িয়ে নিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিতে হবে। এ পর তেল অর্ধেকটা কমিয়ে রেখে তার মধ্যে পাঁঠার মাংসের বড় টুকরো, আদা বাটা, হলুদ, ধনে পাতা, লঙ্কা গুঁড়ো, দই, গুঁড়ো কর বাকি মশলা, নুন যোগ করতে হবে প্রয়োজন মতো।
আরও পড়ুন: কেকে’স ফিউশনের প্যান রোস্টেড চিকেন উইদ সতে ভেজিটেবল
এর পর মাঝারি আঁচে পাত্রটি রেখেউপকরণগুলি নেড়ে যেতে হবে। মাংসটা অর্ধেক সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত এটা করে যেতে হবে। তেল ছেড়ে এলেই বোঝা যাবে। এর পর ভাজা পেঁয়াজের গুঁড়ো যোগ করতে হবে। এর পর ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে।
এর পর ইয়াখনি প্রস্তুত করার পালা। ইয়াখনির মাংসটাকে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। স্টক বের করেত হবে এর থেকে। মাংসের সম্পূর্ণ অংশটি থেকে রস বেরিয়ে গেলে ইয়াখনি প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: চারগ্রিলড পমফ্রেট উইদ লেডিস ফিঙ্গার অ্যান্ড বেল পেপারস, এ বার বাড়িতেই
যে পরিমাণ তেল তুলে রাখা হয়েছিল, সে পরিমাণ তেল গরম করতে হবে একটি ভিন্ন পাত্রে। এরপর তার মধ্যে শুকনো তাওয়ায় রোস্ট করা ছোলার গুঁড়ো বা ছোলার ছাতু এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়দা যোগ করে নেড়ে যেতে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত হালকা বাদামী রং ধরছে। এরপর ইয়াখনি রসটা অল্প অল্প করে যোগ করতে হবে ওই পাত্রে, তার পর একটানা নেড়ে যেতে হবে।
এর পর ময়দাটা ইয়াখনির সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে মিশে গেলে তার পর অর্ধেক সেদ্ধ হওয়া পাঁঠার মাংস যোগ করে পাঁচ মিনিট নেড়ে যেতে হবে খুন্তি দিয়ে। এর পর পাত্রটি ঢাকা দেওয়ার পালা। ঢিমে আঁচে রান্না হবে এই মাংস। একেবারে তুলতুলে হয়ে আসবে। সিমে গ্যাস রেখে দিতে হবে ১৫ মিনিট। তৈরি ‘অওধ ১৫৯০’-এর নেহারি খাস।
গ্রাফিক চিত্র :তিয়াসা দাস