লোভনীয় মুচমুচে কাটলেট ও বাহারি স্যালাড।
আড্ডা ছাড়া পুজো জমে না। আর আড্ডা মানেই গালগল্প-হাসিঠাট্টার ফাঁকে টুকিটাকি খেয়ে পেট ভরানো। মণ্ডপে আড্ডা দিতে বসলে পাশের স্টল থেকে ফুচকা, ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, কবিরাজি, কাটলেট, কুলফি, আইসক্রিমের জোগান আসতে থাকে অবিরাম। কিন্তু ঘরোয়া আড্ডায়? পুজোর সময়ে সারাটা দিন হেঁশেল ঠেলতে ভাল লাগে কি? কিন্তু বন্ধুদের নিয়ে হাউস পার্টি কিংবা পারিবারিক জমায়েতে লোভনীয় খাবারদাবার ছাড়া সব পানসে লাগে। তাই আগে থেকেই যদি পরিকল্পনামাফিক সব ব্যবস্থা করে রাখা যায়, তা হলে ভূরিভোজ সমেত আড্ডা হবে জমাটি।
প্রথমেই আসা যাক স্টার্টার বা ফিঙ্গার ফুডের কথায়। লেবুর রস, আলু সিদ্ধ, হরেক মশলা, কিশমিশ দিয়ে কাঁটা ছাড়ানো ভেটকি, তেলে হালকা নাড়াচাড়া করে নিন। ময়দা, ডিমের গোলা আর বিস্কিটের গুঁড়োয় ডুবিয়ে পছন্দের আকারে গড়ে ফ্রিজে রেখে দিন। পরিবেশনের আগে শুধু লালচে করে ভেজে নিলেই হল। বাজার থেকে ছোট চিংড়ি একেবারে খোসা ছাড়িয়ে আনিয়ে নিন। ভাল করে ধুয়ে কৌটোয় ভরে রাখুন। তেল গরম করতে বসিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা কুচিয়ে নিন। তাতে চিংড়ি, নুন, ময়দা বা বেসন মিশিয়ে চিংড়ির পেঁয়াজি ভেজে ফেলতে পারেন। যে কোনও পানীয়ের সঙ্গে জমবে দারুণ। একই ভাবে কাটলেট, কবিরাজি গড়ে রেখে দিতে পারেন। কেউ নিরামিষ খেতে চাইলে মশলা, গন্ধরাজ লেবু, টক দই দিয়ে পনির অথবা টোফু ম্যারিনেট করে রাখুন। পরে টুথপিকে গেঁথে তাওয়ায় গ্রিল করে নিলেই চলবে। চাইলে টার্টের শেল বানিয়ে রাখতে পারেন বা কিনেও রাখতে পারেন। পরে পছন্দসই পুর ভরে বেক করে নিলেই হল। আবার স্বাস্থ্য সচেতন বন্ধুটির জন্য হরেক রকম বাদাম, ফল দিয়ে স্যালাড বানিয়ে দিতে পারেন। কাবাবও তৈরি করতে পারেন। এখানে আসল কাজ ম্যারিনেশনে। বাকিটা তৈরি করতে বেশি সময় লাগে না।
মেন কোর্সে চালের পদ রাখলে চটপট তৈরি করা যায় বাসন্তী পোলাও। প্রেশার কুকারে মাপ মতো জল দিয়ে বসিয়ে দিলে একেবারে ঝরঝরে পোলাও তৈরি হয়। আবার কুলচা বা পুরভরা পরোটার জন্য সময় থাকতে ময়দা মেখে, লেচি কেটে, পুর ভরে রাখুন। পরে বেলে, ভেজে নিলে সময় কম লাগবে। অথবা পাস্তা সিদ্ধ করে রেখে দিন। অন্য পাত্রে সস তৈরি করে রাখুন। পরিবেশনের আগে সসে পাস্তা টস করে নিলেই খাবার তৈরি। এলাহি সাইড ডিশ, যেমন কোর্মা, কালিয়া, কোফতার মতো পদ রাখতে চাইলে তা আগে থেকে বানিয়ে রাখাই শ্রেয়। তবে পাস্তার সঙ্গে মিটবল ইন সস পরিবেশন করলে আগে থেকে মিটবল ও সস আলাদা করে বানিয়ে রাখুন। পরে মিশিয়ে এক বার ফুটিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। তবে পার্টির আড্ডা টুকটাক মুখরোচকেই জমে।
লোভনীয় কাপকেক
ডেজ়ার্টের জন্য আগে থেকে ব্রাউনি, কাপকেক, মাফিন, কাস্টার্ড, পুডিং বানিয়ে রাখতে পারেন। এগুলি অনেক দিন পর্যন্ত ভাল থাকে। পরিবেশন করার সময়ে তার সঙ্গে আইসক্রিমের স্কুপ দিয়ে দিলেই চলবে। হরেক ধরনের স্টার্টারের সঙ্গে ডিপের ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখা শ্রেয়। ডিপ, সস বা কন্ডিমেন্ট ছাড়া স্টার্টার অসম্পূর্ণ। স্কোয়াশ বা ফলের রসের পপসিকল, মোহিতো পপসিকল বা ক্র্যানবেরির রস আর স্ট্রবেরি মেশানো কুলার মকটেল পরিবেশন করতে পারেন। এগুলি তৈরি করতে সময় বেশি লাগে না। আড্ডার ফাঁকে বন্ধুদেরও মকটেল তৈরিতে হাত লাগাতে বলতে পারেন।
পুরভরা খাস্তা টার্ট
তবে কয়েকটা জিনিস খেয়াল রাখা জরুরি। কোনও ফ্রিজে কিছু রেখে দেওয়ার আগে তা ক্লিং ফিল্ম বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ভাল করে মুড়ে রাখুন। রাত পেরোলেও সেই খাবার টাটকা থাকবে। যথেচ্ছ পরিমাণে টিসু পেপার মজুত রাখুন। প্রতিটি ঘরে বাস্কেট থাকা বাঞ্ছনীয়। আর ইউজ় অ্যান্ড থ্রো অথচ পরিবেশবান্ধব কাপ-প্লেট ব্যবহার করলে বাসন মাজার চাপ থাকে না, পরিবেশেরও খেয়াল রাখা যায়।
তা হলে দেরি না করে পুজোর মেনু ঠিক করে ফেলা যাক!