পুরাণমতে দক্ষ যজ্ঞের সময়ে মহাদেব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেছিলেন। শ্রী বিষ্ণু ত্রিলোককে সেই রোষের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে খণ্ড বিখণ্ড করে দেন সতীর দেহ।
সেই দেহ খন্ড যখন মর্ত্যে এসে পড়ে, তা পরিণত হয় পাথরে। আর সেই পাথর যেখানে যেখানে পতিত হয়, সেই জায়গাগুলিকে বলা হয় এক একটি ‘পীঠ’। এ রকম একান্ন পীঠ ছড়িয়ে আছে দেশের নানা স্থানে। সেই পুণ্যস্থানগুলিতে পরবর্তী কালে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সব মন্দির। মন্দিরগুলিকে ঘিরে ভক্তদের মধ্যে যত নানা রকম যাকে ছড়িয়েছে, ততই বেড়েছে সেই জায়গাগুলির প্রতি আকর্ষণ ও কৌতূহল।
গলার নলী-নলহাটি সতীপীঠের অন্যতম বীরভূমের নলাটেশ্বরী মন্দির। বলা হয়, দেবীর কণ্ঠনালী পতিত হয়েছিল এই জায়গায়। এখানে মা পূজিতা হন ত্রিনয়নী, কালিকা মাতৃরূপে। নলহাটির এই মন্দিরের জনপ্রিয়তা বরাবরই তুঙ্গে। আর কালীপুজোয় তা বেড়ে যায় অন্য মাত্রায়।
কিরীট-কিরীটকোণা তান্ত্রিক মতে বলা হয়, এই জায়গায় দেবী দাক্ষায়ণী সতীর ‘কিরীট’ বা মুকুটের কণা পতিত হয়েছিল। অনেক তন্ত্রবিদের মতে অবশ্য সতীর কোনও অঙ্গ এখানে পড়েনি। তাই এই জায়গাকে ‘উপপীঠ’ বলা হয়ে থাকে। এখানে দেবী ‘বিমলা’ নামে পূজিতা।
কঙ্কাল-কঙ্কালীতলা বীরভূম জেলায় অন্যতম সতীপীঠ কঙ্কালীতলা নিয়ে জনশ্রুতি বলে, এখানকার কুণ্ডে নাকি দেবীর কঙ্কাল এখনও নিমজ্জিত রয়েছে।
গুম্ফ-বর্গভীমা তমলুকের দেবী বর্গভীমাকে ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি। পুরাণমতে এখ্যানে দেবীর বাম পায়ের গুম্ফ বা গোড়ালি পতিত হয়েছিল। তা থেকে এটি সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম বলে জনপ্রিয়।
স্কন্ধ-খানাকুল সতীর একান্ন পীঠের আর একটি জনপ্রিয় পীঠ হল হুগ্লির খানাকুলের রত্নাবলী কালী। জনশ্রুতি আছে, এখানে শ্বেত পলাশ গাছের নীচে দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধ বা ডান দিকের কাঁধ পতিত হয়েছিল।
অধর-কেতুগ্রাম পুরাণমতে কেতুগ্রামের অট্টহাসে সতীর অধর বা ঠোঁটের নিম্নাংশ পতিত হয়েছিল, তাই এখানে দেবী অধরেশ্বরী নামেও পরিচিত।
কণ্ঠহার-সাঁইথিয়া বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া শহরে দেবী নন্দীকেশ্বরীর মন্দির। শোনা যায়, দেবীর কণ্ঠহার এখানে পড়েছিল। তাই দেবী সতী এখানে পূজিতা হন নন্দিনী রূপে।
বাম বাহু-কেতুগ্রাম পীঠনির্ণয়তন্ত্র অনুযায়ী সতীর বাম বাহু পতিত হয়েছিল বর্ধমানের কেতুগ্রামে এবং এই গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন বহুলা।