Durga Puja 2020

সতীর তৃতীয় নয়ন থেকে বেরিয়ে এল আগুন, দাম্পত্য কলহে সৃষ্টি হল দশমহাবিদ্যা

পুরাণ-কাহিনি অনুসারে, শিব ও তাঁর স্ত্রী সতীর মধ্যে একটি দাম্পত্যকলহ থেকে দশমহাবিদ্যার সৃষ্টি।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:০০
Share:
০১ ২৩

পুরাণ-কাহিনি অনুসারে, শিব ও তাঁর স্ত্রী সতীর মধ্যে একটি দাম্পত্যকলহ থেকে দশমহাবিদ্যার সৃষ্টি। ওই কাহিনিতে বলা আছে, শিব ও সতীর বিয়েতে মত দেননি সতীর পিতা দক্ষ। তাই তিনি মহাদেবকে অবজ্ঞা করবার জন্য একটি বড় যজ্ঞের আয়োজন করলেন এবং সেখানে নববিবাহিত দম্পতি শিব-সতীকে আমন্ত্রণ জানালেন না।

০২ ২৩

ইতিমধ্যে নারদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সতী বিনা আমন্ত্রণেই পিতৃগৃহে যেতে চাইলেন। কিন্তু শিব তাঁকে নিষেধ করলেন। ক্রুদ্ধ সতী স্বামীর অনুমতি পাওয়ার জন্য তৃতীয় নয়ন থেকে আগুন বের করতে করতে কালী বা শ্যামায় রূপান্তরিত হলেন।

Advertisement
০৩ ২৩

ওই ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে শিব পালাতে গেলে সতী দশ ‘মহাবিদ্যা’-র রূপ ধারণ করে শিবকে দশ দিক দিয়ে ঘিরে ফেললেন। এর পর শিব তাঁকে দক্ষের যজ্ঞে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিলেন। সতীর ওই দশ প্রকার বিভিন্ন রূপ ‘মহাবিদ্যা’ বা ‘দশমহাবিদ্যা’ নামে পরিচিত।

০৪ ২৩

দেবী অর্থাৎ দিব্য জননীর দশটি বিশেষ রূপের সমষ্টিগত নাম দশমহাবিদ্যা। এখানে এক দিকে যেমন রয়েছেন ভয়ঙ্কর দেবীমূর্তি, অন্য দিকে আছেন অপরূপা দেবীপ্রতিমাও। মুণ্ডমালা তন্ত্র অনুসারেদশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাত্মিকা। শাক্ত মতে, প্রত্যেক মহাবিদ্যা প্রকৃতিগত ভাবে তান্ত্রিক।

০৫ ২৩

দশ মহাবিদ্যার প্রথম রূপ কালী। কাল-কে হরণ করেন দেবী। তাই তিনি কালী। ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দেবীর ত্রিনয়ন হল অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতীক।

০৬ ২৩

নরমুণ্ডের মালায় শোভিত দেবীর কোমরবন্ধনী নির্মিত মানুষের ছিন্ন হাতে। চার হাত বিশিষ্ট দেবীবিগ্রহের হাতে শোভা পায় খড়গ এবং ছিন্ন নরমুণ্ড। তিনি কালীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী।

০৭ ২৩

মা কালী যদি ধ্বংসের প্রতিমূর্তি হন, তারা তবে রক্ষক। দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় রূপ তারা-র বিগ্রহের রং নীল। তিনি পথপ্রদর্শক ও রক্ষাকারিণী (তারিণী) দেবী। বিশ্বের উৎস শক্তি এবং মহাশূন্যের প্রতীক।

০৮ ২৩

দেবী কালীর সঙ্গে তাঁর রূপের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দুই-ই আছে। নরমুণ্ডের অলঙ্কারে শোভিত তারাও ত্রিনয়না। অস্ত্রের পাশাপাশি তাঁর হাতে শোভা পায় পদ্ম। বৌদ্ধ তন্ত্রশাস্ত্রেও গুরুত্বপূর্ণ দেবী হলেন তারা।

০৯ ২৩

স্বর্গ মর্ত ও পাতাল। এই তিন লোক বা পুরের সুন্দরী হলেন ত্রিপুরসুন্দরী বা ললিতা-ত্রিপুরসুন্দরী। দশমহাবিদ্যার তৃতীয় রূপ এই দেবীর আর এক নাম ষোড়শী। তাঁর রূপ স্নিগ্ধ।

১০ ২৩

সালঙ্কারা ত্রিপুরসুন্দরী আসীন সিংহাসনে। চার হাতে তিনি ধরে থাকেন অঙ্কুশ, তির, ধনুক এবং পদ্ম। মুকুটে শোভা পায় অর্ধচন্দ্র। তিনি পূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতার স্বরূপ। শ্রীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী। তান্ত্রিক পার্বতী নামে পরিচিতা।

১১ ২৩

সারা বিশ্বের জননী তিনি। তাই দশমহাবিদ্যার চতুর্থ দেবীর আর এক নাম ভুবনেশ্বরী। স্বর্ণাভ এই দেবী পীতাম্বরী। কখনও বা পরনে থাকে রক্তাভ বস্ত্রও।

১২ ২৩

তাঁর সিংহাসনের গড়ন সাধারণ সিংহাসন থেকে আলাদা। দেখলে মনে হবে যেন তিনি আসীন সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। তিনি পার্থিব জগতের শক্তিসমূহের প্রতীক।

১৩ ২৩

আগ্নেয়গিরির গলন্ত লাভার মতো গাত্রবর্ণ। দেবী ভৈরবীর ত্রিনয়নের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দেয় তাঁর হাঁটু অবধি বিস্তৃত খোলা চুল। বিষধর সাপ, নরমুণ্ড এবং কাটা হাত তাঁরও সজ্জার অঙ্গ। তাঁর পরনের বস্ত্র সাধারণত লাল বা নীল। তন্ত্রসাধনার এই দেবীর অঙ্গভূষণ বিষধর সাপ। দশ মহাবিদ্যার পঞ্চম দেবীর সালঙ্কারা রূপ কার্যত নেই।

১৪ ২৩

নিজেই নিজের মস্তক ছিন্ন করেছিলেন। তাই তিনি ছিন্নমস্তা। ঘোর রক্তবর্ণ দেবীর বিগ্রহ ভয়ঙ্কর। চার হাতের একটিতে ধরে থাকেন নিজের কাটা মাথা। বিত্রস্ত চুল এবং ভয়ঙ্কর তিনটি চোখ তাঁর রূপের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দেয়।

১৫ ২৩

তিনি স্বহস্তে নিজ মস্তক ছিন্ন করে নিজ রক্ত নিজেই পান করেন। ধ্বংস ও সৃষ্টির চক্রে বহমান এই বিশ্বের শাশ্বত শক্তির প্রতীক তিনি। দশ মহাবিদ্যার এই ষষ্ঠ রূপ একইসঙ্গে মুণ্ডমালিনী ও সালঙ্কারা। ভয়ঙ্কর সিংহ তাঁর বাহন।

১৬ ২৩

কুঞ্চিত ত্বক, সাদা চুল এবং রক্তচক্ষু-সহ দেবী ধূমাবতীর রূপ ভয়ঙ্কর। তিনি বিধবা। সাদা শাড়ি পরে তিনি আসীন বাহনবিহীন রথে। রথের মাথায় দেখা যায় একটি কাকের মূর্তি ও পতাকা। তাঁর ডান হাত থাকে বরাভয়ের মুদ্রায়। বাঁ হাতে তিনি একটি কুলো ধরে থাকেন। দশমহাবিদ্যার সপ্তম রূপ এই দেবী কখনও অলক্ষ্মী বা জ্যেষ্ঠাদেবী নামেও অভিহিতা হন।

১৭ ২৩

অগ্নির দ্বারা জগৎ ধ্বংসের পর ভস্মরাশি থেকে যে ধূম্র বা ধোঁয়া নির্গত হয়, দেবী তার স্বরূপ। তাই তাঁর নাম ধূমাবতী। প্রচলিত বাকি দেবীমূর্তির থেকে তাঁর রূপ সম্পূর্ণ আলাদা। বৈধব্য কাটাচ্ছেন এমন কোনও দেবীর রূপ প্রচলিত সনাতম ধর্মে বিরল। কুরূপা এই দেবীর পুজোও অপ্রচলিত।

১৮ ২৩

দশ মহাবিদ্যার অষ্টম রূপ দেবী বগলামুখী সিংহাসন বা রাজহংসের পিঠে আসীন। ত্রিনয়না এই দেবী পীতাম্বরী। সালঙ্কারা দেবীর এক হাতে ধরা থাকে গদা। অন্য হাতে মন্দাসুর দৈত্যের কাটা মুণ্ড। শত্রুনিষ্ক্রিয়কারিণী এই দেবী ঈর্ষা, ঘৃণা ও নিষ্ঠুরতার মতো মানবচরিত্রের অন্ধকার দিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁকে সারস-মুণ্ড রূপেও কল্পনা করা হয়।

১৯ ২৩

সবুজ পান্নার মতো গায়ের বর্ণ। পরনে রক্তবর্ণ বস্ত্র। সালঙ্কারা দেবী মাতঙ্গী দশ মহাবিদ্যার নবম রূপ। তিনি শান্তির প্রতিমূর্তি। সিংহাসনে আসীন এই দেবীর চার হাত। এক হাতে ধরে থাকেন তলোয়ার। দ্বিতীয় হাতে করোটি এবং তৃতীয় হাতে শোভা পায় বীণা। চতুর্থ হাত প্রশস্ত বরাভয়ে। কর্তৃত্ব শক্তির এই দেবী পরিচিত তান্ত্রিক সরস্বতী নামেও।

২০ ২৩

দশ মহাবিদ্যার শেষ রূপ কমলাত্মিকা। তিনি পদ্মালয়া, অর্থাৎ প্রস্ফুটিত পদ্মে আসীন। তাঁর চার হাতের মধ্যে দু’টিতে ধরা থাকে পদ্ম। বাকি দু’টিতে অভয়মুদ্রা। তিনি তান্ত্রিক লক্ষ্মী নামেও অভিহিতা।

২১ ২৩

মহাবিদ্যা প্রধানত এই দশটি রূপই পরিচিত। কিন্তু মহাবিদ্যার সংখ্যা নিয়ে মতান্তরও রয়েছে। একটি মতে মহাবিদ্যার সংখ্যা সাতাশ। দুর্গা, কামাখ্যা ও অন্নপূর্ণাও মহাবিদ্যা অর্ন্তগত বলে কোথাও বলা হয়েছে।

২২ ২৩

মালিনী বিজয় গ্রন্থের মতে, মহাবিদ্যারা হল— কালী, নীলা, মহাদুর্গা, ত্বরিতা, ছিন্নমস্তিকা, বাগ্বাদিনী, অন্নপূর্ণা, প্রত্যঙ্গিরা,কামাখ্যাবাসিনী, বালা, মাতঙ্গী ও শৈলবাসিনী।

২৩ ২৩

শাক্তধর্মে ‘মহাবিদ্যা’ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মত, এই ধারণা শাক্তধর্মে ভক্তিবাদের সূচনা করেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement