Durga Puja 2023 Plan

ঈশ্বর আছেন কি না এখনও আমি জানি না: ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়

পুজোয় অঞ্জলি থেকে ফিতে কাটা থেকে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন! অকপট ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। সামনে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৬
Share:

ঠাকুর দেবতায় বিশ্বাস করেন?

Advertisement

আমাদের বাড়িতে কতগুলি হিন্দু ধর্মের রীতি মানা হত, কিন্তু ধর্ম নিয়ে বিশেষ কোনও আড়ম্বর ছিল না। আমি ঈশ্বরকে বাদ দিচ্ছি না, কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে ঈশ্বর আছেন কি না আমি এখনও জানি না। সে ক্ষেত্রে আমাকে নিরিশ্বরবাদী বলা চলে।

পুজোয় অঞ্জলি দিয়েছেন কোনও দিন?

Advertisement

হ্যাঁ। আমাদের ছোট বেলায় পুজো ব্যাপারটা অন্য রকম ছিল। তখন যেখানে থাকতাম, তার কাছের পুজো ম্যাডক্স স্কোয়ার। স্কুল জীবনে একটা উন্মাদনা ছিল, সেজেগুজে বাড়ির সবাই গিয়ে অঞ্জলি দিতে যেতাম। কলেজ জীবনে বন্ধুরা কলকাতার পুজো মন্ডপও ঘুরতাম। এখনও কলকাতায় থাকলে পাড়ার পুজোয় যাই, মানুষজনের সঙ্গে দেখা করতে। পুজো মানে তো ‘উদ্‌যাপন’।

ফিতে কাটতে গিয়েছেন?

না না... ও সবে যাই না। বছর কয়েক আগে শুনলাম খুঁটি পুজো। এই বিষয়টা কী আমার জানা ছিল না। ও সব ডাক এলে আমি একদমই যাই না। এখনকার পুজোর আড়ম্বর যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, ব্যক্তিগত ভাবে সেটা আমার ভাল লাগে না।

পুজোর সময় এখন কী করেন?

এখন পুজোর সময় আমি সব সময় কলকাতায় থাকিও না। আমাদের আরেক বাসস্থান গোয়াতে, সেখানে থাকি। ওখানে একটা ছিমছাম পুজো হয়। গোয়াতে থাকলে সেখানে যাই। কলকাতায় থাকলে ওই সময় চেনা মানুষদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, শারদীয়গুলি উল্টেপাল্টে দেখা হয়! এই আর কি! প্যান্ডেল ভ্রমণ হয় না।

এখন কী পড়ছেন?

সানিয়া রুশদির ‘হসপিটাল’ উপন্যাসটা পড়ছি।

আড়ালে-আবডালে আপনাকে তো লোকে প্রচণ্ড ‘আঁতেল’ বলে! তাতে আপনার কী মনে হয়?

ও তাই বুঝি! (হাসি) প্রকাশ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি একদমই অসাধারণ মানুষ নই। ‘সেলিব্রিটি’ বিষয়টাতে আমার আপত্তি আছে। আমার সেই অর্থে ‘সেলিব্রিটি’ ছাপ্পা মারা বন্ধু কম। আমি খুশি, অন্তত আমাকে কেউ ‘সেলিব্রিটি’ বলে না।

আপনি তো প্রেসিডেন্সির ছাত্র। সুদর্শন রায়চৌধুরী, অসীম চট্টোপাধ্যায় তো আপনার কলেজের বন্ধু। আপনারা কি কফি হাউসে আড্ডা দিতেন?

আরও অনেকেই বন্ধু ছিল... (হাসি).... আর হ্যাঁ, শুধু কফি হাউস কেন? কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় কফি হাউস, প্যারামাউন্ট সব জায়গাতেই আড্ডা মেরেছি। তখন অনেক সময় সৌমিত্রদাও (চট্টোপাধ্যায়) থাকতেন। তার পর দক্ষিণ কলকাতাতেও আড্ডা দিতাম। গড়িয়াহাটের মোড়ে কসমোপলিটান কফি হাউস, রাসবিহারীর কাছে মাই ক্লাব বলেও একটা জায়গা ছিল... । পরে কলকাতা ছেড়ে দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাবার পর বাঁধন শিথিল হয়, কিন্তু যোগাযোগ ছিল।

সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেন। দু’জনের সঙ্গেই কাজ করেছেন আপনি। এঁদের মধ্যে ফারাকটা কোথায়?

এটা তো একটা বিরাট প্রশ্ন! ছোট করে বললে, দু’জনে দু’ভাবে কাজ করতেন। সত্যজিৎ রায় খুব সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করতেন। মানে, শুটিং শুরুর অনেক আগে থেকেই ছকে বেঁধে নিতেন বিষয়টা। ওঁর মাথায় সব সময় থাকত, স্বল্প বাজেটে কাজ করতে হবে। ছবি শুরুর আগেই ওঁর দিনক্ষণ সব ঠিক থাকত, ‘প্ল্যান বি’টাও। মৃণালদা সেই জায়গায় অনেকটা খোলামেলা ছিলেন, ‘ইম্প্রোভাইস’ করতেন। কোনও একটা হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া মুহূর্তকে ধরতে চেষ্টা করতেন। এটা মূলগত পার্থক্য বলতে পারি। কিন্তু কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, সেটা আমি বলতে পারব না। দু’জনে দু’ধরনের কাজ করতেন।

আপনি তো ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে কাজ করেননি। আফসোস?

অবশ্যই। শুধু ঋত্বিক ঘটক কেন ওই সময়ে তপন সিংহ, অজয় কর, অসিত সেনের মতো পরিচালকরাও ছিলেন। এঁদের কথা কেন জানি না আমরা সে ভাবে আলোচনায় আনি না। ভুলে যাই। এঁদের আমরা সমগোত্রীয় মনেই করি না। এঁদের সঙ্গেই নাম করা যায় তরুণ মজুমদারের। আমার মতে ‘ব্রিলিয়ান্ট’ পরিচালক। এঁদের সঙ্গে কাজ না করতে পারাতে তো অবশ্যই একটা আক্ষেপ আছে।

আচ্ছা তা হলে জানতে ইচ্ছে হয় এঁদের কোনও একটা সিনেমার কোনও চরিত্র, আপনি যদি করতে চান বলি, কোনটা বলবেন?

এই রে! অনেকগুলিই। তবে একটা বলতে হলে, তপন সিংহর ‘ঝিন্দের বন্দী’ সিনেমার ‘ময়ূরবাহন’ চরিত্রটা করতে পারলে ভাল হত (হাসি)... যদিও যখন ‘ঝিন্দের বন্দী’ হয়, তখন ‘ময়ূরবাহন’ করার মতো বয়সে আমি পৌঁছতে পারিনি। সালটা খেয়াল করুন, ১৯৬১। আমি তখন সবে স্কুল পাশ করব-করব।

উত্তম কুমারের সঙ্গেও তো কাজ করেননি?

করেছি। বলা যেতে পারে, অতিথি শিল্পী হিসেবে একটি ছবিতে। পার্থপ্রতিম চৌধুরীর ‘যদুবংশ’ সিনেমায়।

এখনকার ‘ওয়েব সিরিজ’ আপনার কেমন লাগে?

দেখুন, ‘ওয়েব সিরিজ়’ আমি দেখি। আমি অবশ্য বাংলা বা হিন্দির থেকে ইংরেজি ‘সিরিজ়’ বেশি দেখি। বাংলা ‘সিরিজ়’ দেখার ইচ্ছে থাকলেও হয়ে ওঠেনি। তবে এই বিষয়ে আরও একটা কথা, এক সময় আমরা কিছু সিনেমাকে সমাজ সচেতন সিনেমা বা রাজনৈতিক সিনেমা বলতাম, এখনকার অনেক সিরিজ়েই এই বিষয়গুলি উঠে আসে। ইদানীং আরও অনেকগুলির মধ্যে রিমা কাগতি, জোয়া আখতারের কাজ ভাল লাগে। ‘দাহাদ’ সিরিজ়টা দারুণ হচ্ছে। রণদীপ ঝায়ের ‘কোহরা’ সিরিজটা খুব শক্তিধর। অভিনেতা সভিন্দরপাল ভিকি দুর্দান্ত।

একটা কথা। আপনার বহির্গামী জীবন আছে?

না। আমার দুর্ভাগ্য, আমার সেই রকম গোপন জীবন নেই (হাসি)...। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়েই ঘুরতে যাই। অনেক সময় পুত্রও যোগদান করে।

এ বার পুজোয় কোথায় যাচ্ছেন?

আমরা ভ্রমণবিলাসী ঠিক, কিন্তু পুজোর ভিড়ে কোথাও যাই না। হয় কলকাতা বা গোয়ার বাড়িতে থাকব।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement