ছোট থেকেই কত যে ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার! বড় হওয়ার পর কর্মজীবনেও আমার পিছু ছাড়েনি ভূত! কলেজ জীবনের একটা ঘটনা মনে আছে। তখন আমি স্নাতকোত্তরের জন্য পড়াশোনা করছি দিল্লিতে। হস্টেলে থাকতাম সেই সময়। আমার ঘরে আমি একাই বাসিন্দা। আর আমার ঘরটাও ছিল একদম উপর তলায় কোণঘেঁষা। এক দিন খাওয়াদাওয়া সেরে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখি ঘরটাই খুলছে না। আধুনিক সময়ের মতো দরজায় লক সিস্টেম ছিল না সেখানে। ছিটকানিই ছিল ভরসা। কাজেই ভিতর থেকে দরজা না দিলে নিজে নিজেই দরজা বন্ধ হওয়া অসম্ভব।
ভাবছেন, হয়তো কোনও ভাবে দরজায় আঘাত লেগে ছিটকানি পড়ে গিয়েছে? তাহলে বলে রাখি, একজন সাধারণ মানুষ যে ভাবে ছিটকানি দেওয়ার পর বেঁকিয়ে দেয়, ঠিক সেই ভাবেই দেওয়া হয়েছিল। তাও ভাবছিলাম ঘরে কেউ হয়তো ঢুকেছিল। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীকে ডেকে ভেন্টিলেশনের জায়গা দিয়ে লাঠি ঢুকিয়ে দরজা খোলার পর দেখতে পাই, ঘরে জীবন্ত মানুষের কোনও অস্তিত্ব নেই। কে দরজা বন্ধ করেছিল সেই দিন? কী ভাবেই বা তা বন্ধ হয়েছিল নিজে থেকে? সেই সব প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা! ওই দিনের পর থেকে আমি আর ওই ঘরে থাকিনি।
এ তো গেল কলেজ জীবনের কথা। শুটিং করতে গিয়েও বহুবার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। প্রায় ৯ বছর আগের কথা। কলকাতার একটি নামী স্টুডিয়োতে ‘খোকাবাবু’ ধারাবাহিকের শুটিং চলছিল। আমার দৃশ্য ছিল না, তাই আমি আমার মেকআপ রুমে বসেছিলাম। নীচে সবাই শুটিং করছিলেন। আমি প্রোডাকশনে বলে এসেছিলাম একটু চা দেওয়ার জন্য। আর আমার পরের দৃশ্যের জন্য কস্টিউমও আসারও কথা ছিল সেখানে। আমি ঘরের সোফায় বসে চিত্রনাট্যে চোখ বোলাচ্ছিলাম। সেই সময় প্রোডাকশনের একটি ছেলে এসে আমার দরজায় টোকা মারে। এখানে বলে রাখি, আমি কোনও দিন মেকআপ রুমের দরজা বন্ধ করি না। ফলে ঘরে আসার অনুমতি পাওয়া সত্বেও ছেলেটি বারবার টোকা মারতে থাকে দরজায়।
ছেলেটি জানায়, ঘরের দরজা নাকি ভিতর থেকে বন্ধ। অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে, অভ্যাস মতো দরজা খোলাই রেখেছিলাম আমি। এখানেই শেষ নয়। আমি যাকে কস্টিউম আনতে বলেছিলাম, তাঁকে অন্য একটি মেকআপ রুমের স্নানঘর থেকে বেরোতে দেখেই জিজ্ঞেস করি কস্টিউমের কথা। সে সাফ জানায়, আমি নাকি তাঁকে কখনও বলিইনি কস্টিউম আনার জন্য! অথচ তাঁর সঙ্গেই আমার কিছুক্ষণ আগের কথোপকথন একেবারে জীবন্ত আমার মস্তিষ্কে। তবে শুধু আমার সঙ্গেই নয়, এমন অনেক ভৌতিক ঘটনার অভিজ্ঞতা আমাদের শুটিং ফ্লোরের অনেকেরই রয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।