‘‘ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকেই বোধহয় খুব স্পষ্ট যে, আমি সাজতে খুব ভালবাসি।’’
রবিবার ইউভানের জন্মদিন। দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেল। গত বছর শুভর ছেলে হওয়ার পর থেকে আমার দুই সন্তান। আমার ১৮ বছরের পুত্র অনীশ ও ছোট্ট ইউভান। এই দু’জনকে ঘিরেই আমার পুজো কাটবে। আর তার সঙ্গে তো বোন শুভশ্রী আর ওর স্বামী রাজ চক্রবর্তী আছেই।
আগের বছর থেকে নিজের বাড়িতেই দুর্গাপুজো শুরু করেছি। ঘরোয়া পুজোর এক অন্য আনন্দ। তার আলাদাই স্বাদ। এত দিন মাকে দেখেছি দূর থেকে, অনেক মানুষের ভিড়ে। মনে হত মা মর্তে এলেন বটে, কিন্তু আমার কাছে এলেন কই? এখন বাড়িতেই পুজো শুরু করায় মনে হয় মা অনেক কাছের। আরও আপন।
বাড়িতে ধুমধাম করে পুজোর আর একটা মজা হল, সকলের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। বাবা-মা, বোন, আমাদের সন্তানেরা— সকলকে নিয়ে হুল্লোড়ে মেতে উঠলে মনে হয় পুজো সার্থক হল। উপরি পাওনা হল আমাদের মায়ের হাতের ভোগ। এ বছরও মা-ই ভোগ রাঁধবেন। বলা যায়, এক মা রেঁধে আর এক মাকে খাওয়াবেন। আমার নিজের ক্লাউড কিচেনও আছে। সেখান থেকেও বাকি সব দিনের খাবারের বন্দোবস্ত হবে। ইউভানের জন্মদিনেও খাবার যাচ্ছে সেখান থেকে।
বাড়ির পুজোর অনেকটা দায়িত্ব নেয় আমার পুত্র অনীশ। আমি অবশ্য ওকে ঋষি বলে ডাকি। একাই তো ওকে বড় করেছি। যে সমাজে সন্তানের পরিচয় হয় পিতার নামে, সেখানে একা মা হয়ে ছেলেকে বড় করতে অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলাতে হয়েছে। তবে ওর মুখ দেখে মনে হয়, সার্থক এই লড়াই। সামনের মাসে ১৮-এ পা দেবে ও। এখন পুজো এলেই ঋষি নিজের হাতে হাতে সাজিয়ে তোলে বাড়ি-ঘর। ওর হাতের যত্ন-স্পর্শে সেজে ওঠে আমাদের বাসস্থান।
আমার প্রাক্তন স্বামীর বাড়িতে পুজো হয়। ঋষি যখন ছোট ছিল, তখন ও ওর বাবার কাছে যেত। আমি একটি কথা বিশ্বাস করি, বিবাহবিচ্ছেদ অতীনের সঙ্গে আমার হয়েছে। ঋষির সঙ্গে নয়। তবে সেই সময়গুলি আমার জন্য সহজ ছিল না। ছেলেকে চোখে হারাতাম। এখন অতীনের বিয়ে হয়েছে। নতুন পরিবার হয়েছে। ঋষি আর পুজোয় বাবার কাছে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। সেই জন্যই আরও বাড়িতে পুজো শুরু করলাম।
ঋষি ভীষণ আধ্যাত্মিক। ও ইস্কনের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি রবিবার সেখানে ক্লাস করতে যায়। পুজো-পাঠের ব্যাপারে আমার থেকে অনেক বেশি জানে ঋষি। আমি, বাবা, মা, বোন সকলেই ঋষির থেকে অনেক কিছু শিখি। এ প্রসঙ্গে একটি মজার ঘটনা বলি। গত বছর পুজোয় পুরোহিতের সঙ্গে সাহায্যের জন্য যিনি এসেছিলেন, তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়েছিল ঋষি। তার পর রেগে গিয়ে আমাকে বলল, ‘‘হয় তুমি অন্য কাউকে আসতে বলো, নয়তো ওঁর জায়গায় আমাকে বসাও।’’ ওর নিষ্ঠা দেখে সে দিন চমকে গিয়েছিলাম।
ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকেই বোধহয় খুব স্পষ্ট যে, আমি সাজতে খুব ভালবাসি। এ বারও ইচ্ছে আছে নিজের মন মতো সাজগোজ করার। তবে পাঁচ দিনই পরিবার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বাড়িতে কাটাব। বাড়ির আয়োজন সামলে বেরোনোর ফাঁক পেলে তা বরাদ্দ থাকবে রাতের জন্য। এ বছর আমি ওজন কমানোরও চেষ্টা করছি। এত দিন কোনও চেষ্টা ছিল না আমার। এ ব্যাপারে শুভর অবদান অনেকটাই। সবটা বললেও অত্যুক্তি হবে না। ইউভান হওয়ার পরে ওর ওজন অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৬ মাসে আবার কেমন ওজন কমিয়েও ফেলল। ওকে দেখেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আশা করি পুজোর আগে খানিকটা সাফল্যও পাব।