Durga Puja Nostalgia

‘পুজোয় এক সুন্দরীকে দেখে গান লিখে ফেলেছিলাম’, রূপম ইসলাম

কে সেই নারী? গোপন কথা স্বীকার করলেন আনন্দবাজার অনলাইন-এর সামনে।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৯
Share:

পুজোর কথা উঠতে একটা ঘটনা মনে এল। ‘তোমার চোখের কালো চাই’— আমার এই গানটি লেখা হয়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দানের পুজোর মেলাতেই একটি মেয়েকে দেখে। আমার থেকে একটু দূরে, হেঁটে চলে যাচ্ছিল সে। পরনে কালো পোশাক, সুন্দর খোলা চুল।

Advertisement

আমিও হাঁটছিলাম পিছু পিছু, জনস্রোতের মধ্যেই একজন হয়ে। এক সময় দৃষ্টিপথ থেকে মেয়েটি কোথায় যেন হারিয়ে গেল! যে হেতু মেয়েটির সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হল না বা আলাপ হল না, জানা হল না তার নাম, তাই গানটি শেষ করেছিলাম এই লিখে, ‘অনামিকা বলে ডাকতে পারি কি তোমায়?’

ভাব জগতে আমি সব সময়ই প্রেমে থাকতে পারি। প্রেম তো গান লেখায়, তাই প্রেমের অনুসন্ধান জরুরি। পুজো প্যান্ডেলে মেয়েরা সুন্দর সাজে আত্মপ্রকাশ করে। সে সব দৃশ্য ভোলবার নয়। মনে রাখবার মতোই সুন্দর।

Advertisement

পুজোয় অনেক সময়ই গানের অনুষ্ঠান থাকে। কখনও এই দেশের নানা শহরে, কখনও বা বিদেশে। সঠিক চুক্তি অনুযায়ী অনুষ্ঠান সংগঠিত না হলে বা আয়োজন করা না গেলে কলকাতায় থাকি। বিভিন্ন সংস্থা বা পত্র-পত্রিকার হয়ে পুজো পরিক্রমায় যাই। এটা আমার খুব প্রিয় কাজ।

অনেক সময় এই যাত্রায় আমার ছেলে এবং স্ত্রীকে সঙ্গে নিই। ওরা খুব উপভোগ করে পূজামণ্ডপ দেখা। আমি মানুষের আনন্দের আঁচে নিজেকে সেঁকে নিই, বলতে পারেন!

এ বার পুজোতেও বেশ কিছু অনুষ্ঠানের কথা চলছে। যদি গানের অনুষ্ঠান না হয়, তো বেরিয়ে পড়ব গাড়ি নিয়ে। এমন একটা-দু’টো পুজো মণ্ডপ, যেখানে একটু লোকজন কম, সেখানে ঢুকে পড়ে অল্প সময় কাটাব। আমার ছোটবেলার পাড়া পার্কসার্কাস এলাকায় মৃগেন্দ্রলাল মিত্র রোডের পুজো, সেখানে একবার ঢুঁ মারবই। ঢুঁ মারব পার্কসার্কাস ময়দানের পুজোতেও। আর এখন যেখানে থাকি, সেই সাউথ এন্ড পার্কের পুজোয় যাব। অনুষ্ঠান না থাকলে বলা যায় না, পুজোর সময় সবাই মিলে বাইরে কোথাও বেড়াতে চলে গেলাম, তা-ও হতে পারে।

এক সময় পুজোর গান ব্যাপারটা খুব আনন্দের ছিল। আমার তো প্রথম মিউজিক অ্যালবাম বেরোনোই ১৯৯৮ সালের এইচএমভি শারদ অর্ঘ্যের অন্যতম অ্যালবাম হিসেবে। আমিই তো বোধহয় শেষ প্রজন্ম, যার এইচএমভি অ্যালবাম রয়েছে— পরে এই কোম্পানির নাম পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা একটা পারিবারিক উত্তরাধিকারের ব্যাপার— কারণ আমার বাবারও এইচএমভি অ্যালবাম ছিল। তারপর আমাদের ব্যান্ড, 'ফসিলস' -এরও অ্যালবাম বেরিয়েছে পুজোয়, অনেক বারই।

নতুন অ্যালবামের রেকর্ডিং যদিও শুরু হয়ে গেছে— তবে পুজোর মধ্যে কাজ শেষ হবে না। কাজেই 'ফসিলস' এর কোনও নতুন গান বেরোচ্ছে না এ বারের পুজোয়।

তবে 'হইচই' প্রযোজিত ‘নিখোঁজ’ ওয়েব সিরিজে আমার লেখা, সুর করা এবং গাওয়া দু’টি গান প্রকাশিত হয়েছে। ‘নিখোঁজ তুই’ আর ‘আসবে বলে’। ধরে নিন, এই দুই গান শ্রোতাদের জন্য আমার তরফে পুজো উপহার। এ ছাড়া সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত পুজোর ছবি ‘দশমাবতার’-এ অনুপম রায়ের লেখা ও সুর দেওয়া একটি গান আমি গেয়েছি। দেব প্রোডাকশনসের ছবি ‘বাঘা যতীন’ -এ আমার গান আছে। বাংলা হিন্দি দুটো ভার্সানেই। এই রকম আরও বেশ কিছু প্লে-ব্যাক গান আছে পুজোয়।

শুনেছি, পুজো প্যান্ডেলে নাকি আমার গান বাজে। কিন্তু আমি নিজে কখনও শুনিনি। হয়তো শুনতে পাব কোনও দিন। জীবনে এখনও অনেক কাজই বাকি আছে। পুজো প্যান্ডেলে সলিল চৌধুরি, বাপ্পী লাহিড়ি আর রাহুল দেব বর্মনের গান শুনেছি। ভাল লাগে সে সব গান। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায় আমার খুব প্রিয়। ওঁর ছবির গান প্যান্ডেলে খুব একটা শুনি না। শুনতে ইচ্ছে করে।

আর হ্যাঁ, পুজোকে কেন্দ্র করে আরও একটা ঘটনা মনে পড়ছে। ছোটবেলা থেকেই পুজোর সময় লাল কাপড় দিয়ে ঘেরা বামপন্থী দোকানে যে সমস্ত বই বিক্রি হত, সেগু লি নাড়াচাড়া করা আমার অভ্যেস ছিল। আমাদের পার্কসার্কাসের পুজোয় এই রকম বড় স্টল হত। একবার পুজোর এই রকমই এক স্টল থেকে কিনেছিলাম লুইজি বার্তোলিনির লেখা ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ নামের বইটি। এর পরেই আমি যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত সমাজের ভাবনায় নিজের সময়কে মিশিয়ে ‘বাইসাইকেল চোর’ গানটি বেঁধেছিলাম। আসলে সব গানেরই নেপথ্যে একটা না একটা তৈরি হওয়ার গল্প তো থাকবেই!

পুরনো পুজোর কিছু স্মৃতি বললাম বটে, কিন্তু আমি নিজে ফেলে আসা দিন নিয়ে নস্টালজিয়ায় খুব একটা আপ্লুত হই না। একেবারে এই সময়েই বাঁচি। তাই এ বছরের বা আগামীর পুজোটা কেমন কাটবে সেটাই ভাবব। নতুন গান বা গল্প লেখা চলছে। পরিকল্পনা রয়েছে অনেক। আগামী সেগুলির বাস্তবায়ন ঘটাক।

অনুলিখন: সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement