ছবি: সংগৃহীত
উত্তর কলকাতার ছেলে আমি। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া– পুরোটাই কেটেছে শ্যামবাজার, বাগবাজার, মহম্মদ আলি পার্কের মতো পুজোয়। তখনও থিম পুজোর চল আসেনি। তবে বরাবরই দুর্গাপুজার যে সাবেক চেহারা, সেটা আমার বড় প্রিয়। ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখার শখ কোনও দিনই ছিল না। বন্ধুরা মিলে আমাদের পার্কের পুজোয় বসে আড্ডা মারতাম।
পুজোয় প্রেম হয়নি সে ভাবে। তবে পুজোর মধ্যে প্রচুর বন্ধুত্ব হয়েছে। বান্ধবীও এসেছে প্রচুর। দীর্ঘদিন পেরিয়ে সে সব গভীর বন্ধুত্ব এখনও টিকে আছে। তারা নিজের নিজের জীবনে থিতু হয়ে যাওয়ার পরেও। তবে হ্যাঁ, যৌবনে বহু বার পুজোয় বন্ধুবান্ধব সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে বেসামাল হয়ে বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে সব কলেজ জীবনের কথা। বাড়ি ফিরে বমি আর তার পর মার না খেলেও মা-বাবার বকাবকির পর্ব চলত অনেক ক্ষণ ধরে!
পুজোর মঞ্চে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতাও প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছরের। তাই শারদীয়ার স্মৃতির তালিকায় দেশ-বিদেশে গান গাওয়ার অসংখ্য মুহূর্ত। রিহার্সাল না করেই হিন্দি গান গেয়ে ইছাপুরে পুজোর মঞ্চ মাতিয়ে দিয়েছিলাম এক বার। সেখানে সবাই হিন্দিভাষী শ্রোতা। কিন্তু আমি তো বাংলা গান গাই। অগত্যা তাৎক্ষণিক ভরসা হয়েছিল আমার হিন্দি গানের ডালি।
এ বছর শারদীয়ার আমেজ অনেকটাই ফিকে। আমরা বড্ড দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। পুজো হলেও এটা উৎসব করার মরসুম একেবারেই নয় বলে আমার মনে হয়। একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। শহর কলকাতার এমন প্রতিবাদ মিছিল আমি এর আগে কখনও দেখিনি। সকলের মতো ন্যায় বিচারের দাবিতে আমিও সোচ্চার। তিলোত্তমা বিচার পাক। তবে বিচার ব্যাবস্থা আমাদের দেশে খুব দীর্ঘ। তাই ধৈর্য ধরতে হবে। তবে এ সবের পাশাপাশি, আরও একটা কথা। যাত্রা বা সঙ্গীতশিল্পীদের একটা বড় অংশ উৎসবের মরসুমে উপার্জনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। তাই পুজো তাঁদের কাছেও অর্থবহ হোক, এটাও চাই সর্বান্তঃকরণে।
এই প্রতিবেদনটি আনন্দ উৎসব ফিচারের একটি অংশ।