অনেকেই আসল আর নকল সাধকের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেন, পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন।
আমার জীবনে কিছু ঘটনা আছে। বাস্তব ‘আমি’-র সঙ্গে যার মিল নেই। ঘটনাগুলোর জুতসই ব্যাখ্যাও নেই আমার কাছে। তেমনই কিছু ঘটনা আপনাদের সঙ্গে বরং ভাগ করে নিই। ধর্ম নিয়ে আমার গোঁড়ামি নেই। উপোস করে পুজো দিইনি কখনও। অথচ একাধিক বার আমায় পুরাণ চরিত্রে বাছা হয়েছিল। আমার প্রথম অভিনয় ‘এস মা লক্ষ্মী’ ধারাবাহিকে। এর পর ‘মহাভারত’ করি। সেখানে আমি যুধিষ্ঠির। ‘ওম নমঃ শিবায়’-তে বিষ্ণু। গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিক ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ সাধক বামদেবের চরিত্রে অভিনয় করছি।
বামাখ্যাপা বা সাধক বামদেবকে নিজের মধ্যে ধারণ করা অসম্ভব। চরিত্রকে বাস্তব করতে আমায় ১২ কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছে। চুল, দাড়ি, গোঁফ রাখতে হয়েছে। চরিত্রের যখন যে স্তর এসেছে তার মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হয়েছে। তার পর অভিনয়। যেহেতু এটাই আমার পেশা তাই একটা সময়ের পর চরিত্র আমাদের মধ্যে জুড়ে বসে। আমরা তার মতো হয়ে যাই যতক্ষণ ক্যামেরার সামনে থাকি। আমার ক্ষেত্রে এখানেও ব্যতিক্রম। কিছু সময় এমনও হয় অভিনয়ের বাইরেও আমি যেন সাধক চরিত্রে ডুবে থাকি। আমার অজান্তেই আমার হাঁটা-চলা, কথা বলায় নাকি সাধকের ছায়া পড়ে! অনেক বন্ধু সে কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তুই যেন ক্যামেরার বাইরেও বামদেব!’’ সেটে অনেকেই তাই আমায় ডাকেন ‘বামা’!
এই চরিত্রের খাতিরেই আমার লাল বসন পরা। এবং এই পোশাকে আমি সাবলীল ভাবেই চরিত্র হয়ে উঠতে পারি। চিত্রনাট্য মেনে মায়ের আরতি, সংলাপ বলা, অন্য চরিত্রদের নিয়ে অভিনয়--- সবটাই করতে পারি। অথচ, আজও কোনও অলৌকিক দৃশ্য দেখিনি। আমার সঙ্গে কোনও দৈবিক ঘটনাও ঘটেনি। বহু অনুরাগী জানিয়েছেন, আমার আরতির দৃশ্য দেখে তাঁরা নাকি আপ্লুত। কৌশিকী অমাবস্যায় সেটে মায়ের আলাদা করে পুজো হয়। আমি উপস্থিত থাকি। কিন্তু পুজো করি না। কারণ, আমি তো উপোসই করি না। অনেক ছোট-বড় বারোয়ারি কালীপুজোর উদ্বোধনে ডাক পড়ে, যাই। কারওর আবদার, আরতি করার। কেউ বলেন, মাকে নিজের হাতে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে। কেউ অনুরোধ জানান, রান্না করা ভোগ যদি দেবীকে উৎসর্গ করি। সবার সব আবদার রাখার চেষ্টা করি। যা যা সেটে করি সব আপনা থেকেই এসে যায়। আমি আপন মনে মাকে ডাকি, খাওয়াই, আদর করি পুজো মণ্ডপেও। সবাই পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন। প্রথম প্রথম ভয়ানক অস্বস্তি হত। এখন মনে করি, সবই ওই কালজয়ী সাধকের ইচ্ছে। আমার পাওয়া সমস্ত সম্মান আসলে ওঁর উদ্দেশেই নিবেদিত।
চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে অনেক বার শূন্য থেকে মাটিতে ঝাঁপ দিয়েছি। সাঁতার না জেনে গঙ্গার জোয়ারে নেমে অভিনয় করেছি। একটা আঁচড় লাগেনি গায়ে! আমার বিশ্বাস, মায়ের আশীর্বাদ না থাকলে এমন ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক ঘটা একটি ঘটনা আমার এই বিশ্বাসকে আরও জোরালো করেছে। আার বাবা দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথমবার বাবা নিজেই সামলে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার ভাল রকম অসুস্থ হয়ে পড়েন। একাধিক অঙ্গতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সময় আচমকাই ছুটি পাই শ্যুট থেকে। যা আমার পাওয়ার কথাই ছিল না। ফলে, বাবার সেবা করেছি আমিই। আমার বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ। যা দেখে চিকিৎকেরাও সামান্য বিস্মিত হয়েছিলেন।