Kali Puja 2020

কালীপুজোয় চুল খুলে সন্ধের পর বাইরে! কখনও না...

প্রতি বছর বিভিন্ন ছাঁচের, বিভিন্ন ঘরানার প্রদীপ কিনে আনি। সব প্রদীপ যখন একসঙ্গে জ্বলে ওঠে, মনে হয় বাড়িটা যেন হেসে উঠল।

Advertisement

স্বস্তিকা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ১২:১৬
Share:

দীপাবলি, দিওয়ালি মানেই আলাদা এক মুঠো খুশি। সেই ছোট্ট থেকে ধনতেরাসের ধুমধাম দেখে বড় হয়েছি। লক্ষ্মী-গণেশের পুজো হচ্ছে। বাড়ির দরজায় রঙ্গোলি। আমার মা পঞ্জাবি। বাবা বাংলাদেশের। মায়ের জন্যেই ধনতেরাসে বরাবর এই বিশেষ পুজো হয়ে আসছে। বাড়িময় পুরি, হালুয়ার খোশবাই। ছোট্ট সংসারে এক টুকরো উৎসব ধরা দেয় প্রতি বছর, অনায়াসে।

Advertisement

ধনতেরাস মানেই ঘরে নতুন কিছু আনা। সেটা গয়না হতে পারে। থালা-বাসন হতে পারে। আমি আমার লক্ষ্মী-গণেশের জন্যে কেনাকাটা করি। কখনও সোনা। কখনও বাসনপত্র। যে বছর যেমন পারি। অনেকেই বলেন, মাকে কিছু দিবি না! আমি বলি, সারা বছর মায়ের জন্য। মা-ও সেটা জানেন। তাই এই দিনে মা জোর দেন ঠাকুরকে কিছু দেওয়ার জন্য। সারা বছর মাকে দিতে পারব। সারা বছর কি ঠাকুরকে দেওয়ার সুযোগ পাব?

ধনতেরাসের হুল্লোড় আমার রক্তে বইছে। সারা বছর আমি খুব কম ছুটি নিই। কিন্তু ধনতেরাস, কালীপুজো, ভাইফোঁটা- নিদেনপক্ষে শুধু ধনতেরাসে আমার ছুটি চাই-ই। কপাল ভাল, গত তিন-চার বছর ধরে কালীপুজো আর ধনতেরাস এক দিনে পড়ছে। ফলে, ওই দিন ছুটি পেয়েই যাই। যদিও কোনও কাজে বেরোতেও হয়, চেষ্টা করি সন্ধের মধ্যে বাড়িতে ঢুকে পড়ার।

Advertisement

এ বছর করোনা। বন্ধু, আত্মীয়েরা কেউ আসবেন না। এ বছরের আলোর উৎসব তাই একান্তই আমার। আমার একটা অভ্যেসের কথা ভাগ করে নিই আপনাদের সঙ্গে। এই সময়টায় সবাই ইলেকট্রিক আলোয় ঘর ঝলমলে করে তোলেন। আমিও একই কাজ করি, তবে মাটির প্রদীপ দিয়ে। প্রতি বছর বিভিন্ন ছাঁচের, বিভিন্ন ঘরানার প্রদীপ কিনে আনি। আর সেইগুলো সারা বাড়িতে ছড়িয়ে দিই বাবার সঙ্গে। সব প্রদীপ যখন একসঙ্গে জ্বলে ওঠে, মনে হয় বাড়িটা যেন হেসে উঠল।

আরও পড়ুন: উৎসবের মরসুমে বাড়িতে ধূপ-ধুনো? কোভিড আবহে ফল হতে পারে মারাত্মক

এখন তো আর বাড়ি নেই, ফ্ল্যাটে উঠে এসেছি। এই নিয়ে দু’বছর দিওয়ালি পালন করব নতুন আবাসনে। এখানে প্রদীপ জ্বালানোর সুযোগ তুলনায় কম। প্রদীপের সঙ্গে তাই কৃত্রিম আলোও থাকবে। যাতে ফ্ল্যাট দেখে সবাই বলে ওঠেন, ‘আলোয় ভুবন ভরা’! আর হ্যাঁ, প্যাস্টেল শেড বা কালো রঙের পঞ্জাবি সালোয়ার-কামিজে ওই দিন আমি পাক্কা পঞ্জাবি কুঁড়ি।

এ বছরে আলোর উৎসব একান্তই আমার।

এতক্ষণ ধরে আমার ভাল লাগার কথাই নাগাড়ে বলে গেলাম। পুজো নিয়ে আমার একটা খারাপ লাগাও আছে কিন্তু। সবাই বলেন, কালী পুজো বাজির পুজো। মন বলে, কেন শুধুই আলোর পুজো নয়? যত দিন ছোট ছিলাম, কিছু বুঝতাম না, বাজি পুড়িয়েছি। যেদিন থেকে বড় হয়েছি, টাকার মর্ম বুঝতে শিখেছি, রোজগার করছি, বাজি পোড়ানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মনে হয়, অকারণে যেন খানিক টাকা পুড়িয়ে ফেললাম! আমি কারও কোনও বিশ্বাসে আঘাত দিচ্ছি না। কাউকে বাজি পোড়াতে বারণও করছি না। আমার আর আসে না ব্যপারটা। বন্ধুরা কত ডাকে, একটা ফানুস ওড়া অন্তত! আমি যেন কাঠের পুতুল। না নড়েচড়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখি।

তার চেয়ে বেঁচে থাক মায়ের হাতের গাওয়া ঘি বা মাখনের হালুয়া। মা রাঁধেন, সুবাস ছোটে পাড়াময়। মায়ের হাতের ওই হালুয়া, পুরি খেতে প্রায় পাড়া চলে আসে ফ্ল্যাটে। আর কাজু বরফি, লাড্ডু। একসঙ্গে পাঁচ-ছটা বরফি কোনও ব্যাপারই না আমার কাছে। পুজোর পরেও প্রায় এক সপ্তাহ আমার টিফিনে বাক্স ভরে বরফি আর লাড্ডু থাকে। আর একটা ব্যাপার মানা হয় আমাদের বাড়িতে। বাঙালিদের মতো পঞ্জাবিরাও কালীপুজোর দিন চুল খুলে সন্ধের পর রাস্তায় বেরোন না। এটা আজও ভীষণ মানি। কোনও উদ্বোধনে যেতে হলে ভাল করে চুল বেঁধে তবে রাস্তায় পা রাখি।

আরও পড়ুন: উৎসবের মরসুমে সঙ্গীর মনে আলো জ্বালতে কী কী করতেই হবে

বাকি রইল ভাইফোঁটা। এ বছর এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি দারুণ এক্সাইটেড। কেন? এ বছর ডবল ভাইফোঁটা আমার। আর সাত বছর পরে আমি আবার ভাই ফোঁটা দেব। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কেন সাত বছর বন্ধ ছিল ফোঁটা? আমার তো ভাই নেই। দাদুকেই তাই ফোঁটা দিতাম। সাত বছর আগে দাদু চোখ বুজতে ওঁর জায়গায় কাউকে বসাতে পারিনি। তাই এতগুলো বছর দাদুর ছবিতেই ফোঁটা দিয়েছি। এ বছর ডিজাইনার অভিষেক রায়কে ভাইফোঁটা দেব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement