Srijit Mukherji's Pujo Memories

কে বলল, আমি মানুষ থেকে দূরে! বরং উল্টোটা : সৃজিত মুখোপাধ্যায়

নিজের ছবি, শৈশব, পাড়া, প্রেম সবটা নিয়ে নিপাট আড্ডায় তিনি। সামনে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:১৫
Share:

এ বার পুজোয় আপনার ছবি মুক্তির সূত্র ধরে একটা কথা বলি!

Advertisement

নিশ্চয়ই।

ছেলেবেলায় বা কৈশোরে যখন ভবানীপুরের পাড়ায় থাকতেন, তখন কি পুজোতে আপনার ছবিও এক দিন সাড়ম্বরে মুক্তি পাবে, এ সব স্বপ্ন দেখতেন?

Advertisement

না। সে রকম চিন্তা মাথায় ছিলই না। পুজোর ছবি তো ছেড়ে দিন, আমি যে আদৌ ছবি করব, সিনেমা জগতে আসব, সে সম্পর্কে কোনও সম্যক ধারণাই ছিল না আমার। যদিও আমার জন্ম সিনেমা পাড়ায়। ইন্দ্র রায় রোডে। ইন্দিরা, ভারতী, পূর্ণ, বিজলী এই চারটে সিনেমা হলের মাঝামাঝি। কাছেই ছিল বসুশ্রী, উজ্জ্বলা, কালিকা। মনে আছে, নাইট শো যখন ভাঙত, তখন মানুষের কী ঢল!

আর কী মনে পড়ে?

বাড়ির পাশ দিয়ে সিনেমা নিয়ে আলোচনা করতে করতে চলে যেত মানুষজন। প্রেমিক-প্রেমিকারা যেতেন গলির মধ্যে দিয়ে ঝগড়া করতে করতে বা সোহাগ করতে করতে। মনে পড়ে ইন্দিরায় ‘পরমা’ ছবির প্রিমিয়ার হয়েছিল। ‘ছোটা চেতন’ বলে একটা থ্রি ডি ছবি রিলিজ করেছিল।

এ বছর পুজোয়...

বহু বছর পর একটু ব্রেক নিচ্ছি। ছুটি নিচ্ছি।

পুজোয় ছবি রিলিজ করা মানে অন্য সব ছবির সঙ্গে ধুন্ধুমার প্রতিযোগিতা। ভাল লাগে এ সব?

প্রতিযোগিতা তো ভাল ব্যাপার। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে তো ভাল লাগে না। একটা ব্যাপার অবশ্য ঠিক, এত ছবি রিলিজ করার ফলে ‘রেভিনিউ’য়ের ব্যাপারটা একটু হলেও তো ভাগ হয়ে যায়। চার পাঁচটা ছবি দেখা সব সময় সব মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।

যখন থেকে ছবি করা শুরু করেছেন তখন প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে যেতেন?

হ্যাঁ, অতি অবশ্যই গিয়েছি। একটাই ফারাক। আগে সাধারণ দর্শক হিসেবে যেতাম। পরে বিচারক হয়ে। ফলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখার অভ্যেসটা এখনও রয়ে গিয়েছে।

পুজোর সময় অনেক দর্শক বদ্ধ হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চান না। এই অবস্থায় কী ভাবে আপনার ছবি দেখতে তাঁদের টানবেন, এ ব্যাপারে কিছু আগাম ভাবনা ছিল?

টানাটানির কিছু নেই। পাশে দাঁড়ানোর কিছু নেই। ছবির ট্রেলর দেখে, গান শুনে, পোস্টার দেখে, মানুষের যদি মনে হয়, এই ছবি দেখে আনন্দ পাবেন, মজা পাবেন, তা হলে এমনিই আসেন। আসবেনও। আর যাঁরা ওটিটি পছন্দ করেন, তাঁরা বাড়িতে বসে দেখবেন! আমার যেহেতু দু’টো 'অপশন', প্রেক্ষাগৃহ এবং ওটিটি দু’টোতেই ছবি আছে, প্রথমটায় 'দশম অবতার', দ্বিতীয়টায় 'দুর্গরহস্য'... সেক্ষেত্রে...

আগে যখন সিনেমা করতেন না, পুজোয় সিনেমা দেখতেন?

দেখতাম। পুজোর গান শুনতাম। প্যান্ডেলে আড্ডা মারতাম। ঠাকুর দেখতে যেতাম। বন্ধুদের সঙ্গে বহু দিন পরে দেখা হত। ম্যাডাক্স স্কোয়্যারে যেতাম। দুর্গা বাড়ি যেতাম। দক্ষিণ কলকাতার মানুষ যা যা করে, তাই করতাম।

পুজোয় প্রেম?

হ্যাঁ হ্যাঁ, প্রচুর। অনেক পুজোয় এমন প্রেম হয়েছে যে, পরের বছর অবধি আর টেকেনি। আবার অনেক পুজোয় এমন প্রেম হয়েছে, যা দু'তিনটে পুজো টিকেছে।

অল্প বয়সের পুজোর কিছু নস্টালজিয়া?

অল্প বয়সের পুজোর নস্টালজিয়া প্রধানত যে সরকারি হাউজিঙে আমরা থাকতাম, সেই জায়গাটা জড়িয়ে অনেকটা। সেখানে নানা মানুষের পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব পুজোকে ঘিরে সুন্দর হত। প্যান্ডেলে ভোগ পরিবেশন করা, আড্ডা মারা, ঠাকুর দেখা, প্রেম করা, সিনেমা দেখা প্রচুর নস্টালজিয়া। আমাদের হাউজিং 'সুইস পার্ক হাউজিং' বলে পরিচিত। এফ সি আই গো-ডাউনের পেছনে। আজও যখন ওই হাউজিংয়ের পাশ দিয়ে যাই, সেই পুরনো স্মৃতি ভেসে আসে।

আপনার ছবির সঙ্গে গানের একটা অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আছে। এক সময় খুব ঘটা করে পুজোর গান বেরোত। আপনি তো সে সবও শুনতেন...

প্রচুর শুনতাম। আশা ভোঁশলে আর ডি বর্মণের গান শুনতাম। এ ছাড়া কিছু গান আছে, যার সঙ্গে পুজোর স্মৃতি ভীষণ ভাবে জড়িয়ে। যেমন, ‘হাওয়া মেঘ সরায়ে’ এই গানটি শুনলেই পুজো এসে গিয়েছে মনে হয়। কুমার শানুর 'প্রিয়তমা মনে রেখো' গানটিও পুজো নিয়ে আসে। মনে আছে, ১৯৯২ সালে পুজোয় প্রচণ্ড ভাবে আমরা কবীর সুমনের 'তোমাকে চাই' শুনেছিলাম।

আপনার অনুরাগীর সংখ্যা অগণিত। আবার আপনি একজন বুদ্ধিজীবীও। কিন্তু যদি বলি, আপনি মানুষের থেকে দূরে থাকেন, তাঁদের থেকে বিচ্ছিন্ন। মানবেন?

আমি একদম মানুষের থেকে দূরে থাকি না। বরং উল্টোটাই। প্রায় প্রত্যেক বছর পুজোতেই ছবির প্রচারে যখন যাই, বহু মানুষের সঙ্গে দেখা করি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। হলে হলে গিয়ে মানুষের ‘ফিডব্যাক’ নিই। মানুষকে বাদ দিয়ে কিছু হয় নাকি?

সাক্ষাৎকার: সংযুক্তা বসু

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement