পুজোর বেড়ানো আলাদাই আনন্দের। সে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন!
এক কালে পুজো মানেই ছিল জঙ্গলে বেড়াতে যাওয়া। এখন কলকাতায় থাকি পুজোর সময়ে। নিজের বিধানসভা এলাকায় কয়েকটি পুজোয় যাই। আর অপেক্ষা করি, পুজো মিটলে তবে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যাব। করোনার এই সময়ে অবশ্য বেড়ানো মানেও সেই শান্তিনিকেতন। তার বেশি দূরে যাচ্ছি না। আগে অনেক দূরে যেতাম। তবু পুজোর বেড়ানো আলাদাই আনন্দের। সে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন!
ছোটবেলায় পুজো কাটত পাড়ায়। তখন কলকাতা ছেড়ে কোথাও যেতাম না। শৈশবে মণ্ডপের পাশে আইসক্রিম, ফুচকা আর বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাপ ফাটানো। সকলে যেমন করে। তার পরে কৈশোরে পাড়ার পুজোয় সুন্দরীর ভিড় টানত। স্বাভাবিক ভাবে সেখানেই আনন্দ। সে সময়ে নতুন জামা পরার শখও ছিল বেশি। কোন দিন কোন জামা পরব, আগে থেকে ঠিক করে রাখতাম।
অন্য বিভিন্ন বাড়িতে যেমন পুজোর চার দিন খুব রান্নাবান্না হত, আমাদের সে রকম কোনও রীতি ছিল না। চারটি দিন সকলে হাল্কা মনে থাকার চেষ্টা করতাম।
আর একটু বড় হতেই থিয়েটার হয়ে উঠল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুজোর সময়েও নাটকের শো থাকত। তাই কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া ঠেলতে হত নবমীর দিনে। সপ্তমী-অষ্টমী শো করে, নবমীর দিন ট্রেনে উঠতাম। পুজোর ভিড় তখন আর ভাল লাগত না। তখন থেকে পুজোর জামার টান কমেছে। পুজো অন্য ধরনের হয়ে উঠল। মূলত কাজের মধ্যেই কাটত। এখনও সে ভাবেই কাটে। আজকাল পুজোর সময়ে পুরনো জামাও পরি। কাজই প্রাধান্য পায়।
নিজের এলাকার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে অনেকটা সময় কাটে এখন। তবে উদ্বোধনের দায়িত্ব আর নিচ্ছি না। গিয়ে পুজো দেখে আসি। সকলের সঙ্গে থাকি। আমার পরিবারে বিশেষ পুজো দেখার উৎসাহ নেই। তাই এই ক’টা দিন বাড়িতে কম সময় দিতে পারলেও কেউ মান করেন না। সুযোগ পেলে বেরোই। আর একসঙ্গে ভোগ খাওয়া হয়। ওই পর্যন্ত।
পুজোর থিয়েটারের অনন্দ আলাদা। এখন সে ভাবে থিয়েটার করা হচ্ছে না ঠিকই, তবু সে সব কথা মনে পড়ে।
মা চাকরি করতেন বলে পুজোর সময়ে আমাদের মতো মায়েরও ছুটি। অন্য বিভিন্ন বাড়িতে যেমন পুজোর চার দিন খুব রান্নাবান্না হত, আমাদের সে রকম কোনও রীতি ছিল না। এখনও নেই। বরং চারটি দিন সকলে হাল্কা মনে থাকার চেষ্টা করতাম। নিজের মতো করে আনন্দ করা হত। তবে খাওয়াদাওয়া তো পুজোর সময়ে সকলেরই ভাল লাগে। এক বন্ধুর বাড়িতে প্রতি বছর ষষ্ঠীর দিন অনেকে মিলিত হই। এ বারও আশা করি সেখানে সকলের সঙ্গে দেখা হবে। ওই দিনটা বেশ ভাল-মন্দ খাওয়াদাওয়াও হয়। আর বাকি সব দিনের বেশিটা ব্যস্ততায় কাটে।
পুজোর সময়ে কাজ করা আমার জন্য নতুন নয়। আমি যে প্রথম ছবি বানাই, ‘রাস্তা’, তার শ্যুটিংও হয়েছিল সপ্তমীর দিন। আরও বহু সময়ে বহু কাজ করেছি পুজোর দিনেই। পুজোয় কাজ করলে যে অন্য অনেক কিছু বাদ পড়ে যাবে, এমন কখনও মনে হয় না। বরং পুজোর থিয়েটারের অনন্দ আলাদা। এখন সে ভাবে থিয়েটার করা হচ্ছে না ঠিকই, তবু সে সব কথা মনে পড়ে।