ভাবছি, এ বারের পুজোয় বিশ্রাম নিতে শহর থেকে দূরে চলে যাব।
এ বার পুজোর আগে আমার প্রচুর চাপ। সবে বিয়ে মিটবে। তার ধকলেই অর্ধেক ক্লান্ত। ভাবছি, এ বারের পুজোয় তাই বিশ্রাম নিতে শহর থেকে দূরে চলে যাব। হেঁয়ালি থাক। চলতি বছর ধারাবাহিক ‘মন ফাগুন’-এ আমার ছ’নম্বর বিয়ে হল। আমি ‘ঋষিরাজ’। পিহু ওরফে সৃজলা গুহকে সেখানে বিয়ে করছি। পুজোর আগে সেই বিয়ে পর্ব মিটবে। তার পর সাত দিনের লম্বা ছুটি। এই সময়টা একটু নিজের মতো করে কাটাতে কার না ইচ্ছে করে?
সাধারণত পুজোয় কলকাতায় থাকতেই ভালবাসি। গত বছরও পুজোর আগে আমার প্রচণ্ড কাজের চাপ ছিল। তখন চলছিল ধারাবাহিক ‘এখানে আকাশ নীল’। পুজোর জন্য বাড়তি কিছু পর্বে আগাম অভিনয় করে জমা করতে হয়েছিল আমাদের। গত বারও তাই পুজোর আগেই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম! এ বার যদি বাইরে যাওয়া হয়, ইচ্ছা আছে টানা ঘুমাব। আমি ঘুমোতে খুব ভালবাসি। আর সময় কাটাব পরিবারের সঙ্গে। শুনেছি, পর্দার রোম্যান্টিক শন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নাকি অনুরাগিনীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি। বাস্তবের শনের অবস্থা দেখুন! প্রেমহীন জীবন। পুজোতুতো একটিও প্রেম নেই আমার ঝুলিতে। তার জন্য হতাশ নই। জানি, ঠিক সময়ে ঠিক মানুষ পা রাখবেন আমার জীবনে। বদলে এখন বাড়ির লোকেরা রয়েছেন। বন্ধুরা আছে। আর আছে ভাইপো। গত বছর ওকে কোলে নিয়েই ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছিলাম। এ বারও তেমন ইচ্ছা আছে। সকলে মিলে ঠিক জমে যাবে পুজো।
জানি, ঠিক সময়ে ঠিক মানুষ পা রাখবেন আমার জীবনে।
শহরের বাইরে থাকব বললেই মনে পড়ে যায় বোর্ডিং স্কুল নৈনিতালের কথা। স্কুলে পড়ার সময়ে কোনও বার পুজোয় ছুটি পেতাম না। উল্টে ঘাড়ের কাছে শ্বাস ফেলত বার্ষিক পরীক্ষা। ফলে, পুজোয় পড়াশোনা করে দিন কাটত। খুব যে খারাপ লাগত, এমনটিও নয়। সঙ্গে বন্ধুরা থাকত। এক সময়ে ওতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। নৈনিতাল থেকে ফেরার পর অনেকটা বড় বয়সে পুজোর আনন্দ বুঝেছি। পুজোর একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে কেনাকাটা। আমিও করি তবে অনলাইনে। অনেকেরই এই কেনাকাটা নাপসন্দ। আমার কিন্তু দিব্যি লাগে। সময় বেঁচে যায়। ভিড়ভাট্টায় যেতে হয় না। বাড়ির ছোটদের উপহার দিই। আর দিই আশপাশের কিছু মানুষকে। আমার সাধ্য অনুযায়ী।
মিষ্টি পোলাও, চিংড়ি মাছের মালাইকারি যেমন থাকবে, তেমন শরীরচর্চা করতেও ভুলব না।
পুজোয় খানাপিনাও বেশ বড় ব্যাপার। অনেকে এই ক’দিন ডায়েট ভুলে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন। আমি পারি না। মনে হয়, সংযমে থেকে উপভোগ করাতেই বেশি আনন্দ। তাই মিষ্টি পোলাও, চিংড়ি মাছের মালাইকারি যেমন থাকবে, তেমন শরীরচর্চা করতেও ভুলব না। এক বছর শুধু এই সংযম ভেঙেছিল। সাল ২০১৪। সবে বড় পরীক্ষা দিয়ে স্কুল ছেড়েছি। দাদাদের সঙ্গে সে বার সারা রাত ধরে ঠাকুর দেখেছিলাম। এক রাতে ২০-২৫টি মণ্ডপ দেখা কিন্তু সহজ কথা নয়। অনেকেই জানতে চান ধুনুচি নাচ, ঢাক বাজানো, সিদ্ধি খাওয়া— এই সব অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না? সবাইকে বলি, সব দেখেছি, সব জানি। তবে দূর থেকে। আসলে, আমি দেখতে ভালবাসি। অংশ নিতে ততটাও ভাল লাগে না।