মায়ের সঙ্গে মানালি।
পুজো এসে গেল! কাজের চাপে বুঝতেই পারিনি, উৎসবের দিন এত কাছে এসে গিয়েছে। আগের বছর পুজোর চার দিন ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে কাটিয়েছি। নিভৃতবাসে। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমার স্বামী অভিও (অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়)তখন কোভিড পজিটিভ। পুরো বাড়িতে আমি একাই সুস্থ তখন। এ দিকে কারও সঙ্গে দেখা করতে পারছি না, একটি বারও মণ্ডপে গিয়ে ঠাকুরের সামনে দাঁড়ানোর উপায় নেই। অঞ্জলি দেওয়ার উপায় নেই। প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে উঠে জানলা দিয়ে এক ফালি আকাশ দেখতাম। দূর থেকে ঢাকের আবছা আওয়াজ ভেসে আসত কানে। চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে সেটাই ছিল আমার পুজো।
আমি চাই, এ বছরের পুজো আমাদের খুব ভাল কাটুক। এই মুহূর্তে আমি ধারাবাহিকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু ওই ক'টি দিন ঠিক সময় বার করে নেব। আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া ছাড়া কি পুজো হয়! ওই চার দিন সব ডায়েট ভুলে দেদার পেটপুজো চলে। আমি আবার পুজোর সময় একদম নিরামিষ খাই না। কিন্তু অষ্টমীর সকালের জলখাবারে লুচি চাই-ই চাই! মা যত দিন বেঁচে ছিলেন, নিজের হাতে লুচি করে খাওয়াতেন। মা এখন আর নেই, কিন্তু অভ্যাস রয়ে গিয়েছে। তাই বাড়ির কাজে যে মেয়েটি আমাকে সাহায্য করেন, তাঁকে সেই দিন লুচি করতে বলি।
মানালির কাছে পুজো মানে আড্ডা, প্রেম, খাওয়াদাওয়া।
খাওয়াদাওয়ার সব পরিকল্পনা আগেই সারা। কিন্তু এখনও কেনাকাটাই কিছু করে উঠতে পারলাম না। আমি আসলে সারা বছর ধরেই অল্পবিস্তর কেনাকাটা করতে থাকি। তাই পুজোয় আলাদা করে আর জামাকাপড় কিনতে হয় না। তবে আমার শ্বশুরবাড়ি আর বাপের বাড়ির সবাই একে অন্যের জন্য কেনাকাটা করেন। পুজোতে এটা একটা নিয়মের মতোই!
অভির বাড়ি থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১৫ মিনিটের। পুজোর সময় ম্যাডক্স স্কোয়্যারে বসেই আড্ডা হত আমাদের। আলাদা করে চুপিচুপি প্রেম বা ঘুরতে যাওয়াটা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এর আগের বছর পুজোয় যা যা করতে পারিনি, এ বার তার সবটা সুদে আসলে আদায় করব! ছুটি পেলেই অনেকটা সময় কাটাব ওর সঙ্গে। সেটাই হবে আমাদের পুজোর প্রেম। আসলে বিয়ের আগেও কখনও পুজোর সময় আলাদা করে প্রেমে পড়িনি। মণ্ডপেও কারও সঙ্গে কখনও চোখাচোখি হয়নি। বা হলেও আজ আর মনে নেই।
সব মিলিয়ে পুজো মানে আমার কাছে আড্ডা, প্রেম, খাওয়াদাওয়া! আপাতত দিন গুনছি মায়ের আসার। তাড়াতাড়ি এসো মা…