সৌম্য মুখোপাধ্যায়।
আমারা বেশিরভাগ বন্ধুবান্ধবই অভিনয়পেশায় আছি। একজন তো মুম্বইতে অভিনয় করে। সারা বছর কারও খুব একটা সময় হয় না দেখা করার। এই পুজোতে তাই আমরা সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। সবাই বলতে, বেশিরভাগ বন্ধু।
এছাড়া যেটা হয় সারা বছর ইচ্ছেমতো খেতে পারি না। এই পুজোর সময়টায় যেটুকু ছাড় পেলাম বেশ জমিয়ে খেলাম।দুটো বাফে খেলাম। শহরের এক বিখ্যাত হোটেলের নিজস্ব রেস্তরাঁতে খেলাম। ওদের স্পেশালিটি হচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশের প্রায় সব রকমের খাবার রাখে।একটু একটু করে সবকিছুই খেয়েছি। আর একদিন অন্য একটা জায়গায় গিয়েছিলাম খেতে। অন্য একদিন চায়না টাউন গেলাম বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। অনেকদিন চায়না টাউনে যাওয়া হয়নি। তাই চলে গেলাম।
বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কযেকটা পুজো দেখেছি। যদিও অতটা প্যান্ডেল হপিং আমি আর পারি না করতে। সত্যি বলতে ভালও লাগে না। ওই রাতের দিকে প্যান্ডেল একটু ফাঁকা হয়ে গেলে দু’-তিনটে ঠাকুর দেখেছি। আর হ্যাঁ সিনেমা দেখেছি। ‘গুমনামী’ দেখেছি, ‘জোকার’ দেখলাম। আমিও আমার বন্ধুরা সবাই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত, আগেই বললাম। আমরা সবাই চেয়েছিলাম পুজোর ক’টা দিন আমাদের কাজ, অভিনয় সবকিছু ভুলে যেতে। এসব নিয়ে একেবারে আলোচনা করতে চাইনি। কিন্তু ‘জোকার’ দেখার পর আমাদের প্রতিজ্ঞা ভেঙে গিয়েছে। অ্যাজ আ পারফর্মার এই ফিল্মটা দেখার পর আমরা এত উচ্ছ্বসিত, এত অ্যাফেক্টেড, এত ইন্সপায়ার্ডও মোটিভেটেড হয়েছি যে বলে প্রকাশ করা যাবে না। সিনেমাটা দেখার পর এক বন্ধুর বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। সেখানে যতক্ষণ ছিলাম, এই ফিল্ম নিয়েই আড্ডা হল।
এর মধ্যে এক দিন মা-বাবার সঙ্গেও পাড়ার পুজোয় গেলাম। মানে ছোটবেলায় এখানে ক্যাপ বন্দুক ফাটাতাম, পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, মজা করতাম, খেলাধুলো করতাম। সেখানে এবার অঞ্জলি দিতে গেলাম। পাড়ার সকলের সঙ্গে দেখা হল। এটা বেশ লাগল। কারণ আগের বছর আমি অঞ্জলি দিতে পারিনি। আক্ষেপ রয়ে গিয়েছিল। তো সেখানে পাঞ্জাবি-টাঞ্জাবি পরে সেজেগুজে চলে গেলাম আক্ষেপ কাটাতে।
তবে এই মুহূর্তে সবথেকে সিকিমে ছুটি কাটাচ্ছি। কী শান্ত, কী সুন্দর, কী সবুজ চারপাশ! আমার এই কাঠের রেলিংওয়ালা বারান্দায় চুপচাপ বসে আছি। সামনে সবুজ পাহাড়।ভাবতেই ভাল লাগছে যে আমার ছুটি, আর আমি এই রকম একটা দুর্দান্ত জায়গায় বেড়াতে আসতে পেরেছি। ১৩ তারিখের আগে কলকাতা ফিরছি না।তারপর আবার কাজে ফেরা আছেই। কাজে তো ফিরতেই হয়!
আরও পড়ুন-‘বকুল কথা’ র সেট ভুলে দশমী এলেই জলঙ্গিতে ভেসে বেড়ানো মনে পড়ে: ঊষসী
জীবনে বিসর্জন বলে একটা অধ্যায় থাকেই। কিন্তু এই মুহূর্তে সেসব ভাবতে ইচ্ছে করছে না। তবে অবশ্যই ‘ময়ূরপঙ্খী’ ধারাবাহিকের সহশিল্পী এবং পুরো টিমকেই মিস করছি। অন্যদিকে যদি গভীর করে ভাবি, তা হলেবিসর্জনও জীবনের একটা সূচনা। অনেককিছু বিসর্জন দিতে দিতেই আমরা এগিয়ে চলি। তাই বিসর্জনের পর একটা শূন্যতা তো থাকেই। মনখারাপও হয়। কিন্তু জীবনে কিছুই শূন্য থাকে না। কিছু না কিছু এসে শূন্যস্থান পূরণ করতে থাকে। আমরাও ধীরে ধীরে শোক ভুলে যাই। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলান, ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’। গানটা আমার কাছে নতুনকে বরণ করার আহ্বান হিসেবে আসে। তো বিসর্জনও এক অর্থে আমার কাছে সামনে এগিয়ে চলার একটা ইঙ্গিত। দেখুন না, বিসর্জনে একটা উৎসবের শেষ। কিন্তু ঠিক তার পরে পরেই কত উৎসব!তাই বিসর্জন আমার কাছে চরৈবেতি মন্ত্র।