দুর্গাপুজো বলতে প্রথম যেটা মনে আসে সেটা হল, নতুন জুতো পরে পায়ে ফোস্কা পড়ে যেত। প্রত্যেক বছর মা-বাবা (কবিতা লাহিড়ী, নীলাদ্রি লাহিড়ী) আমাকে বলত যে ‘নতুন জুতো এখনই পরে ফেল না।’ আমরা খুব ঠাকুর দেখতে পছন্দ করতাম। বাবা দুর্গাপুজোর ওপর ডকুমেন্টারি ফিল্মও করেছেন, ‘দেবী দর্শন’। এ ছাড়াও পুজো, প্যান্ডেল শুট করে টেলিভিশনে দেখানোর একটা ব্যাপার ছিল। পুজোর ডিটেলস নিয়ে আর একটা ডকুমেন্টারিও ছিল। আমি তখন খুবই ছোট। কাজেই খুব ডেডিকেটেডলি প্যান্ডেল হপিং হত। হোল নাইট ঠাকুর দেখার ব্যাপার ছিল। ফলে প্রত্যেক বছর আমার পায়ে ফোস্কা পড়ত। আমার একেবারে আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। তখন যে কেন ফোস্কা পড়ত আর এখন যে কেন পড়ে না জানি না।
আর একটা বিষয়, ছোটবেলায় পুজো মানেই রাত অব্দি বাইরে থাকতে পারতাম, রাত ১০টা-১১টা অব্দি। বছরের অন্য সময় এত রাত অব্দি বাইরে থাকা যেত না। এখন তো সারা বছরই স্বাধীন। কিন্তু তখন একটা ভাল ফিলিং ছিল। পুজো আসছে মানেই আমি স্বাধীন। এইটা খুব মিস করি। মনে পড়ে, উত্তর কলকাতার কিছু পুজোয় ভীষণ বড় বড় ঝাড় লাগানো হত। এখনও হয়। কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্কে। খুব ভিড় হত। বাবা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঠাকুর দেখাতো। খুব কাছে ঝাড় লাইট দেখে একটা অদ্ভুত ফ্যান্টাসি, আমি রাজকুমারী— এই সব ফিলিং হত। এটা আমার কাছে খুব স্ট্রং ভিজুয়াল হয়ে আছে। আমার সৌভাগ্য যে আমার দেশের বাড়ি তারকেশ্বরে কুমারী পুজোয় কুমারী হয়েছিলাম। সবাই তো এটা হতে পারে না। ওইটা খুব স্পেশাল ফিলিং ছিল।
পঞ্চমী থেকে ছুটি। তার পর ষষ্ঠীর দিনটা কিছুটা উপভোগ করব। পুজোর সময় তো আমাদের কিছু প্ল্যান থাকেই। সেগুলো করে সপ্তমীর দিন আমি আসলে কোভালম বেড়াতে চলে যাচ্ছি, বন্ধুদের সঙ্গে। এমনিতে মেগা সিরিয়াল করার দরুন শহরের বাইরে তো খুব একটা বেরতে পারছি না। কাজেই একটু দমবন্ধ লাগছে। রিফ্রেশিং এয়ার চাই। কন্যাকুমারীতে মায়ের একটা মন্দির আছে যেখান থেকে কুমারীপুজো শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। অষ্টমীর দিন ওই মন্দিরে গিয়ে পুজো দেব। তারপর ওখান থেকে অষ্টমুড়ি লেকে যাব। সে দিন লেকেই কাটাব। কোভালমেই বিভিন্ন রকমের ওয়াটার রাইড আছে, আরও অনেক কিছু আছে। পরের দিন সেগুলো করে তার পরের দিন ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন।
সে অর্থে এ বারই পুজোয় প্রথম কলকাতার বাইরে থাকব। পুজোতে জেনারেলি শাড়িই পরি। কিন্তু এ বছর বেড়াতে যাচ্ছি বলে সব কটা দিন শাড়ি পরতে পারব না। কিন্তু ষষ্ঠী অব্দি সেই শাড়ি পরার ট্র্যাডিশনটা মেনটেন করব। শাড়ি কেনা এবং ব্লাউজ বানানো হয়ে গেছে। তৃতীয়া, চতুর্থী থেকেই আমি শাড়ি পরা শুরু করে দেব। কয়েকটা তো পরে নিই। না হলে নতুন শাড়িগুলো নতুনই থেকে যাবে।
আরও পড়ুন: ‘ময়ূরপঙ্ক্ষী’-র শুটিংয়ে এতই ব্যস্ত যে শপিং হয়নি এখনও: সোহিনী
ছোট্টবেলা থেকে শাড়ি আমার খুব ফেভারিট। কারণ মাকে দেখতাম অফিস যাওয়ার সময় খুব সুন্দর করে শাড়ি পরতেন। এখনও পরেন। মাকে সুন্দর করে শাড়ি পরতে দেখেই আমার শাড়ির প্রতি একটা অদ্ভুত ইন্টারেস্ট গ্রো করেছিল। সে জন্য খুব ছোটবেলা থেকেই আমি শাড়ি পরতে পারতাম, কমপ্লিটলি।
সব রকম ফ্যাশনই আমি ফলো করি। কখন কী ধরনের পোশাক চলছে, কী ধরনের মেকআপ, সব ফলো করি। পুজোয় কী মেকআপ করব তা অনেকটা মুডের ওপর ডিপেন্ড করছে।
আমার দুটো ঢাকাই শাড়ি আছে। খুব আনকমন কালার। একটা প্যালেট গ্রিন উইথ পিঙ্ক। আর একটা খুব অদ্ভুত একটা ব্লু।
ঢাকাই শাড়ির সঙ্গে পার্ল জুয়েলারি পরতে পারি। আর একটা ঢাকাইয়ের সঙ্গে সিলভার জুয়েলারি খুব ভাল লাগবে। যেহেতু আমার ঢাকাইগুলো খুব লাইট শেড, খুব সুদিং কালার, আমি একটু মুড মেকআপের দিকেই যাব। মানে খুব ফ্রেশ যাতে লাগে। আর শিফনটার সঙ্গে স্মোকি আইজ। স্মোকিটা ব্ল্যাক দিয়ে না-ও হতে পারে। একটু ব্লু বা গ্রিন দিয়ে হতে পারে। তার সঙ্গে লাইট শেড লিপস্টিক। আমার একটা ব্ল্যাক লিনেন শাড়ি আছে। সেটার সঙ্গে চোখের নীচেও কাজল পরে ভেরি বোল্ড আইজ ভাল যাবে। শাড়িটাও বোল্ড। বোল্ড ইন দ্য সেন্স ব্ল্যাক তো, বোল্ড আইজ ওটার সঙ্গে খুব ভাল যাবে আশা করছি। সঙ্গে ন্যুড লিপ। সিরিয়ালে রোজ ডার্ক লিপ করি। সেটা করতে করতে বোর হয়ে গেছি মনে হচ্ছে। পুরো সাজটা আমি খুব সুদিং রাখতে চাই। হেয়ারেও সেই ব্যাপারটা থাকবে।
আরও পড়ুন: কাটোয়ার বাড়িতে দু’দিন কাজহীন পুজো কাটাব: শ্রুতি দাস
সারা বছরই আমি খুব খেতে ভালবাসি। আর পুজোর সময় মনে হয় এখন তো পুজো, খেতেই পারি। ফলে মনে পাপ থাকে না। অন্য সময় মনে পাপ নিয়ে খাই। আমি অলওয়েজ বিরিয়ানিতে থাকি। ছোটবেলায় ব্রেকফাস্টেও বিরিয়ানি খেয়েছি। বহু বার। এমনও হয়েছে মাটন দিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে বাকিটা রেখে দিয়েছি। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে খেয়েছি। এক বার তো পর পর তিন দিন তিনটে দোকানের বিরিয়ানি খেয়েছি। আলাদা আলাদা টেস্ট বোঝার জন্য। বিরিয়ানি নিয়ে বহু পাগলামো আছে আমার। মানে আমার মন খারাপ, কিছু ভাল লাগছে না, কী করা যায়। বিরিয়ানি অর্ডার করে খেয়ে নিলাম। আমার ডিপ্রেশনেও বিরিয়ানি। আমার কিছু জিনিস আছে ডিপ্রেশন কাটানোর। বিরিয়ানি, উত্তমকুমার আর সলমনের সিনেমা। শেষ দুটো খুব উইয়ার্ড কম্বিনেশন। কিন্তু আমার ডিপ্রেশন কেটে যায়।
অনেক বন্ধুবান্ধব আমার জীবনে নেই। যে ক’জন খুব সিলেক্টিভ বন্ধুবান্ধব আছে তারাও ব্যস্ত, আমি নিজেও ব্যস্ত। আমার অবসর মানে নেটফ্লিক্স দেখা, বই পড়া, একটু রিল্যাক্স করা। রিসেন্টলি দুর্জয় দত্তর গল্প পড়লাম। উনি ইন্ডিয়ান রাইটার। ইংলিশে লেখেন। আর আমার একটা নতুন নেশা হয়েছে রুমির কবিতা পড়া। এক জন বন্ধু রুমি গিফট করেছে। আমার এত ভাললাগে যে মাঝে মাঝেই পড়ি।