দুর্গাপুজোর মতো ফেস্টিভ্যাল আর হয় না। সব কিছুই খুব বড় করে হয়। প্যান্ডেল, লাইট থেকে শুরু করে, সবার সাজগোজ, ছুটি, শপিং— সব কিছুই বেশ বড় মাত্রায় হয়।
কলকাতার পুজো সবথেকে ভাল হয়। সে জন্য পুজোতে নরম্যালি আমি কলকাতায় থাকতে পছন্দ করি। বাড়ির লোকজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পুজো কাটাই। কিন্তু এ বছর বাইরে যাওয়ার প্ল্যান করেছি। দুবাইতে আমার বন্ধু আছে, দিদি-জামাইবাবু আছে। আমি আর অঙ্কুশ ওদের সঙ্গে মিট করার পর বাকিটা ডিসাইড হবে। সবাই একসঙ্গে ঘুরতে বেরবো। প্রত্যেক বছর শহরেই থাকি। এ বার তাই একটু অন্য রকম পুজো কাটাবো। কলকাতার পুজো এ বছরও মিস করব না। কারণ ষষ্ঠী অব্দি শহরেই থাকব। পুজো উদ্বোধন, পুজো পরিক্রমা এ সব আছে। এ দিকে আমার ফ্যামিলির সবাই পুরীতে যাচ্ছে। সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যেহেতু আমি থাকছি না, আমাকে ছাড়া কলকাতার পুজো দেখতে বেরবে না। তাই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান।
আমি আসলে সারা বছর শপিং করি। সে জন্য আমার স্পেশাল পুজো শপিং বলে আলাদা করে কিছু হয় না। আমার কিছু কিছু নতুন জামাকাপড় থেকেই যায়। কিন্তু ছোটবেলায় আলাদা করে পুজোর শপিং করা হত। যেহেতু পুজোয় অনেক জায়গায় যেতে হয়, অ্যাপিয়ারেন্স থাকে, তাই আমি কিছু ইন্ডিয়ান পোশাক কিনে রাখি।
আলাদা করে সাজগোজের কোনও প্ল্যানিং নেই। কিন্তু বাঙালি বা ভারতীয় স্টাইলে সাজব। শাড়ি বা এথনিক পোশাক বেছে নেব। টিপ পরব। শাড়ি পরলে আমি ফুল দিয়ে খোঁপা করি। গরমও লাগে। সেটা মাথায় রেখে চুল ছেড়ে বেরনো যায় না।
আরও পড়ুন: আমি, ঐন্দ্রিলা আর বিক্রম হয়তো পুজোয় একসঙ্গে বেরব : অঙ্কুশ
দুবাই ঘুরতে গিয়ে কী খাব এখনও প্ল্যান করিনি। ওখানে গিয়ে ডিসাইড করব। ওখানে ইন্ডিয়ান পোশাক পরার প্রশ্নই নেই। কারণ ইন্ডিয়ান পোশাক পরে ঘোরা খুব ডিফিকাল্ট। সারা দিনই তো ঘুরব। তাই যেটা ইজি আর কমফর্টেবল হবে সেই রকম পোশাক বেছে নেব। জিনস-টপ, জাম্পস্যুট এ সব পরব, যে পোশাকে ঘুরতে গিয়ে যা খুশি করতে পারা যায়। সাজগোজ একেবারেই নয়। হঠাৎ করে কোথাও বেরিয়ে পড়লাম, থিম পার্কে গিয়ে রাইড চড়লাম। এ সব করতে গিয়ে সাজগোজ, পোশাক কোনও ভাবেই যেন বাধা তৈরি না করে সে দিকে খেয়াল রাখব।
এখন তো কাজের মধ্যে এতটাই ইনভলভ যে নিজের থেকে ছুটি নিতে হয়। হয়তো ঠিক করলাম সপ্তমী বা নবমীর দিন কিছু করব না। এটা না করলে চতুর্থী টু দশমী প্রত্যেক দিন ইনভলভ থাকতে হয়।
আরও পড়ুন: পুজোয় অনেক দিন না-দেখা বন্ধুকে দেখার অপেক্ষায় আছি
পুজো বলতে ছোটবেলার অনেক কিছুই মনে পড়ে। ছোটবেলার স্মৃতি যেটা মিস করি, আমাদের পাড়ায় একটা পুজো হত যেটা আনফরচুনেটলি আর হয় না। বেহালার ‘উদয়ন পল্লি’র পুজো এখনও হয়। কিন্তু বেহালায় আমার পাড়ার পুজোটা বন্ধ হয়ে গেছে। যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেছে তো। পাড়ার দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে, দাদারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কারও পক্ষেই সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। সব বন্ধু একসঙ্গে সারা দিন থাকতাম, পুজোর সন্ধ্যেয় কে কী পোশাক পরবে প্ল্যান করতাম। মানে এ রকম হত, ‘আজকে কি তুই জিনস? তা হলে আমিও জিনস পরব’, ‘আজকে কি তুই সালোয়ার? তা হলে আমিও সালোয়ার’। আর বীভৎস খাওয়াদাওয়া হত। আমাদের পাড়ায় প্রচুর ঠাম্মা ছিল। ঠাম্মারা সারা দিন পুজোমণ্ডপে থাকত, বিভিন্ন রকমের রান্না করত। নাড়ু, লুচি, মোহনভোগ কত কিছু বানাত! বিসর্জনের পর প্রচুর খাওয়াদাওয়া হত। পোলাও, মাংস, মাছ, চাটনি, পাঁপড়, পায়েস। আর আমরা এতটাই ছোট ছিলাম যে খাওয়ার জন্য ওয়েট করতে পারতাম না। সবাই ক্লাবে বসে খেতাম। পুজোর সময় মা আমাকে বাড়িতে পেতই না। সারা ক্ষণ আমাদের খাওয়াদাওয়া চলত। আর আমাদের বিশেষ কাজ ছিল চাঁদা তোলা আর প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে প্রসাদ বিতরণ করা।
একটা সিক্রেট কথা বলি, যেটা এখন খুব মনে পড়ে। প্রসাদ দিতে গিয়ে যেখানে দুটো নাড়ু থাকত একটা খেয়ে নিতাম, যেখানে চারটে থাকত সেখানে দুটো নাড়ু খেয়ে নিতাম। আমাদের আট/দশ জনের একটা বড় গ্রুপ ছিল। এটা পাড়ার সব কাকিমা জানত যে যতগুলো নাড়ু পাঠানো হয়েছে তার থেকে কিছু মিসিং। এ সবই খুব মিস করি। এখনও পুজো হলে পাড়ায় থেকে এগুলো এনজয় করতাম!