কোথায় নামছি আমরা! আমরা বাঙালিরা? অপমান করতে ছাড়ছি না প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিককেও!
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। আগামী ২৪ অক্টোবর তিনি ৯০ বছরে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিনের প্রাক্কালে ফেসবুকের একটি গ্রুপ, সাহিত্যিকের শরীরে কাদা লেপন করল, বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের তরফে।
সঞ্জীব-পুত্র অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইন-কে জানালেন, "এ খানে গ্রুপ বা কোনও মহান ব্যক্তির দ্বারা এই কার্য সাধিত হয়েছে তার উল্লেখ করছি না, কারণ তাদের কোনও ভাবে পাদপ্রদীপের আলোয় আনা উচিত নয়। কুয়োর ব্যাঙকে সমুদ্রে মানায় না, অন্ধকার, বদ্ধ কুয়োই হল তার শ্রেষ্ঠ বাসস্থান।"
এর পরে তিনি বললেন, "সম্প্রতি একটি গ্রুপে একটি পোস্ট নজরে এল। সেটি দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রথমেই নজরে এলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পিছনে তাঁর সিকিউরিটি। নেতার পরনে পাঞ্জাবি, মাথায় গামছা ফেট্টি করে বাঁধা, মাথার পিছন দিকে উঁকি মারছে ময়ূরপুচ্ছ। তাঁর পেটের ওপর লেখা ‘শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়’। এই হল ছবি আর তার ক্যাপশন। সেটা কাকে নিয়ে, না একজন ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত’ সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে!" প্রসঙ্গত বলি, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটি বইয়ের নাম 'শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন'।
অপূর্ব জানিয়েছেন, ‘এই পোস্টটি দেখার পর বহু মানুষ, যাঁরা হয়তো মূল বইটি পড়েননি, তাঁরা নানা রকম উষ্মা ও তীক্ষ্ণ মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। অনেকে লিখছেন, সাহিত্যিকের ওপর থেকে আমার শ্রদ্ধা চলে গেল, শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে দেখে নেবেন। কেউ লিখছেন, "এটা লেখকের মূর্খামি, অনেকে আবার বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বইতে এই রকম ছবি ব্যবহার না করলেই ভাল করতেন তিনি। একজন লিখেছেন, যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করে থাকে, তা হলে বলব, অবশ্যই লেখকের মূর্খামি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ চৌষট্টি কলা-গুণে পূর্ণ, সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের কর্তা যিনি, তাঁর সঙ্গে সাধারণ কলিহত মনুষ্য জীবের তুলনা করাটা তমোগুণের অধিকারী জড় জাগতিক নিকৃষ্ট জীবের কুকর্ম ছাড়া কিছুই নয়!... ইত্যাদি ইত্যাদি।"
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এই ধরনের সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন। তাই ব্যাপারটি সম্পর্কে জানা তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু লেখককে ভালবাসেন, এমন বহু মানুষ ফোন করে তাঁকে ব্যাপারটা জানাতে শুরু করেন। তাঁরা বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেন।
এ দিকে সেই ফেসবুক পেজে শুরু হয়েছে সাহিত্যিকের প্রতি তীব্র আক্রমন। সব দেখে, সব শুনে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে মনস্থ করেছেন। তিনি প্রথমে বরাহনগর থানায় ফেসবুকের তথাকথিত গ্রুপ, যিনি এই পোস্টটি করেছেন ও সল্টলেকের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এর পর কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া লেখক আরও অন্য ভাবে আইনের শরণাপন্ন হবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।