এ বারের পুজোয় মেয়ে ধানসিড়িকে কী দেবেন?
ধানসিড়িকে এ বারের পুজোয় আমি নিজেকে দেব। ওকে সঙ্গে নিয়ে পুজোয় ঘুরব। মানে, ওকে আমার শো-য়েও নিয়ে যাব।
কিন্তু ওর তো একটা প্রেমের জীবন নিশ্চয়ই থাকে পুজোয়! তাতে ব্যাগড়া দেবেন?
আরে, তা নয়। ওর নিশ্চয়ই একটা আলাদা জীবন আছে। সেখানে প্রেমিক আছে। বন্ধুবান্ধব আছে। সে সবও থাকবে ওর পুজোয়।
আর বাবা হয়ে আপনি গোয়েন্দাগিরি করবেন?
ধ্যাৎ! তা নয়। আসলে পুজোর সময়ে তো বহু কাল বাড়িতেই থাকতাম না। শো করতে বিদেশ চলে যেতাম। কয়েক বছর আগেও তাই হয়েছে। গত কয়েক বছর ওই করোনা-টরোনার চক্কোরে পুজোয় আর বাইরে বেরনো হয়নি। তার পর ভাবলাম, আর যাবই না বিদেশে। ওই বাইশ-চব্বিশ ঘন্টা ফ্লাইটে পা দুমড়ে বসে ঘাড় গুঁজে থাকা, ও সব আর পোষায় না। তবে পুজোয় এখানেও বাইরে আমার বেরনো হয় না। শো-এর পর বা শো না থাকলেও এখানে যে মন্ডপে গিয়ে যে বসব একটু, সেটাও হয় না। মণ্ডপেও ফ্যানেরা চার দিক থেকে তাড়া করে। এক বার তো দৌড়ে পালাতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে পা ভেঙে গেল। তখন ওরাই আমাকে তুলে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল।
প্রেমিকা রুমকি বা স্ত্রী সুমিতা, যে নামেই সম্বোধন করি না কেন, তিনি একজনই মানুষ। আপনার সহধর্মিণী। তাঁর সঙ্গে ১৯৮২ থেকে পাশাপাশি হাঁটছেন। বলা ভাল দৌড়চ্ছেন! প্রেম বেলায় পুজোয় যা দিতেন, এখনও কি তাই-ই দেন?
ওকে কিছু দিতে হয় না। ও নিয়ে নেয়।
একটা চুমু তো নিশ্চয়ই দেবেন? নাকি সেই উষ্ণতা মরে গিয়েছে?
সেটা আছে কি না ও-ই বলতে পারবে। ও-ই মাপতে পারে। হিটোমিটারটা ওর কাছেই আছে।
হাহাহাহা! আপনি এমনিতে ‘ছমকছাল্লু’ ধাঁচের মানুষ, স্টেজে এত রাগ দেখান কেন, বলবেন?
ওটা রাগ নয়, ছদ্ম রাগ!
মানে? নচিকেতার ঢংপনা?
আরে, স্টেজ কন্ট্রোলের একটা ব্যাপার থাকে না! তবে ওটাই আমার ইউএসপি। স্কুলে সেই ড্রিল মাস্টার থাকতেন না, যিনি কথায় কথায় চিৎকার করতেন! এটাও সে রকম।
যাত্তেরি! তার মানে নচিকেতা চক্রবর্তীকে যখন কেউ ‘নচি’ বলে কেউ ডাকে, আর আপনি রাগ দেখান, তখন সেটা একটা ভান বলছেন!
আলবাত।
কেলো করেছে! বাদ দিন। অন্য প্রসঙ্গে যাই। একটা সময় আপনি খুব গজল গাইতেন। শচীন কর্তার গান গাইতেন। পুরনো গান করতেন। এখন সে সব আর গাইতে শুনি না!
ওটা শ্রীকান্ত আচার্য, ইন্দ্রনীল সেনরা করে তো! কবীর সুমনও করেন। কিন্তু একটা জিনিস আমার মনে হয়, যেমন, ওদের গলায় হয়তো মৃণাল চক্রবর্তীর গান শ্রোতারা শুনছেন, অথচ মৃণাল চক্রবর্তী মানুষটাকে জানছেন না, এই আর কী!
কী ডিপ্লোম্যাট আপনি!
বলছেন? হবে হয়তো!
আচ্ছা, কবীর সুমনের সঙ্গে তো আপনার সম্পর্ক একটা সময় খুব ভাল ছিল! এখন কি আদায়-কাঁচকলায়?
এ সব কথা আপনাদের আমদানি। আমি বলব, যে কোনও মানুষের সঙ্গে যে কোনও মানুষের সম্পর্ক বদলায়। তাই না? সম্পর্ক একটা নদীর স্রোতের মতো। ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালও নয়, আবার খারাপও নয়। উনি ওঁর মতো আছেন, আমি উদাসীন। আসলে ব্যাপারটা হল, ওঁর ওই পুরনো গান গুলি গাওয়ার কী দরকার ছিল, আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে ঠিক বুঝতে পারি না। ওঁর নিজের গানই যথেষ্ট ছিল।
যাব্বাবা! অখিলবন্ধু ঘোষ থেকে বিমান মুখোপাধ্যায়কে নতুন করে চিনিয়েছেন তো ওই মানুষটাই! এ ব্যাপারে কবীর সুমনের একটা বিরাট অবদান তো আছে! সেটা অস্বীকার করবেন?
সে তো ইন্দ্রনীল-শ্রীকান্ত অনেক বেশি করেছে আমি বলব। শ্রীকান্ত সব চেয়ে বেশি করেছে।
আচ্ছা, কবীর সুমনকে আপনি কখনও পুজোর বিজয়ার প্রণাম জানিয়েছেন?
না, প্রণামে আমি বিশ্বাস করি না।
উনি তো আপনার গুরু! ওঁকে দেখেই তো আপনাদের অনেকেরই অন্য ধারার বাংলা গানে আসা!
উনি তো আমার গুরু নন! কী আশ্চর্য! উনি আমার গুরু হবেন কেন? আমি গান শিখেছি তো অন্য লোকের কাছে। বরঞ্চ পীযূষদাকে (পীযূষকান্তি সরকার) আমার গুরু বলতে পারি। কবীর সুমনের সঙ্গে আমার দেখা বা কথাবার্তা কমই হয়েছে। ওই যা স্টেজে কিছুটা, আর ভিড়ভাট্টায়। আর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে, কখনও সখনও। ব্যস, এই তো। উনি আবার আমার গুরু হলেন কবে!
আরে, উনি তো আপনার চেয়ে বয়সে বড়!
বয়সে বড় হলেই তো গুরু হয়ে যায় না কেউ! তা’হলে তো ডায়নোসরকেও গুরু বলতে হয়!
এই যে আপনি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ওঠেন, এ দিকে ছাত্র বেলায় অতি বাম রাজনীতি করতেন, অস্বস্তি হয় না?
দেখুন, এই বিষয়টা অন্য। আমাকে ডাকেন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তা মুখ্যমন্ত্রী ডাকলে আমার কী করার থাকতে পারে? আমি আদর্শগত ভাবে ওঁর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। ওঁকে বিশ্বাস করি। ওঁকে ভালবাসি। ওঁর সঙ্গে আমার বিশাল একটা রসায়ন আছে। সরকারটা বদলানোর সময়েও আমি ওঁর পাশেই ছিলাম। এখানে আদর্শের বাকতেল্লা মেরে তো লাভ নেই! বিকল্প কোথায়! মমতা ছাড়া? আগে বাম পরে রাম, এই স্লোগানে আমি বিশ্বাসী নই। সুতরাং তথাকথিত বামপন্থীরা নয়। আর ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিলিয়ে দেওয়াতেও আমি বিশ্বাস করি না। তা হলে পড়ে থাকে মমতা। খোলা মনে যদি দেখি এবং ঝান্ডার রং বাদ দিই, আমার মমতাকে কমিউনিস্টই মনে হয়! লেনিন মনে হয়।
একটা সময় আপনারা বন্ধুবান্ধব মিলে 'ক্রান্তিক' বলে একটা গানের দল গড়েছিলেন। তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
না, নেই। অনীশদা, মানে অনীশ দেব বাদে। উনি মারা গেলেন। অনীশদার সঙ্গে আমার বীভৎস ভাল একটা সখ্য ছিল। অনীশ দেব-কে বলা যায় আমার গল্প লেখা জীবনের গুরু।
তার মানে ‘নিখিলেশ প্যারিসে, মইদুল ঢাকাতে...’-র মতো গান আপনার কাছ থেকে আশা করাই যাই!
এ রকম গান আছে তো আমার! খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। 'কফি হাউস' বলেই আমার একটা গান আছে। বছর পনেরো আগের লেখা।
আচ্ছা, শিলাজিতের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? যা শুনি, তাতে তো মনে হয়, ঝাড়াঝাড়ির!
একদম বাজে কথা। শিলাজিতের সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলা নেই। শিলাজিৎ খুব ভাল ছেলে। খুব বড় হৃদয়ের ছেলে।
বুকে হাত রেখে বলছেন?
একশো বার।
শিলাজিতের কোন গানটা আপনার সবচেয়ে ভাল লাগে?
কোনও গানই নয়। ও ভাল ছেলে। সুস্বাস্থ্যবান!
মানে?
আসলে এটা না, একটা বোকা বোকা প্রশ্ন। কেমন প্রশ্ন বলুন তো, আপনি ধরুন, যদি আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করেন যে, মারাদোনাকে বিজ্ঞানী হিসেবে কেমন লাগে? তো উনি কী বলবেন? এটাও তাই! শিলাজিৎ ভাল। ঈশ্বর ওর মঙ্গল করুন। ওর স্বাস্থ্য ভাল থাকুক।
কী ডিপ্লোম্যাট! আচ্ছা, এই তো সেদিন শিলাজিৎ, আপনার আর অঞ্জন দত্তর সঙ্গে স্টেজে পারফর্ম করলেন। 'নীলাঞ্জনা' গাইলেন শিলাজিৎ! সুরটা ঠিকঠাক ছিল?
এই প্রসঙ্গটা থাক না! ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভাল। কেন সেটাকে ঘেঁটে দিচ্ছেন! বলছি তো সুস্বাস্থ্যবান!
একটা ভিডিয়ো দেখছিলাম, তাতে আপনি বলছেন, আপনার জীবনে প্রচুর প্রেম! এত স্পষ্টবাদী হয়ে নচিকেতা চক্রবর্তী প্রেমিকাকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কথা বলেন না। কেন?
সব বিষয় নিয়ে সব সময় সব কথা প্রকাশ্যে আনার নয়। হল ঘর আর কল ঘর এক জিনিস নয়। দুটোই অবশ্য প্রয়োজনীয়!
একটা সময় রটে গিয়েছিল, আপনার গলায় ক্যানসার হয়েছে!
যত্তো সব বাজে গুজব। ঢ্যামনা বাঙালির কাজ। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। আরে, আমার গলায় ও সব হলে কি আর এত বছর ধরে গান গেয়ে যেতে পারতাম? আমার প্যানক্রিয়াসে একটা অপারেশন হয়েছিল। সেটাও দিনের পর দিন ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া না করে গানের জন্য দৌড়ে বেড়ানোর ফল। এ সব নিয়ে আর কিছু বলতে ভালও লাগে না। একটু চুপ করবেন প্লিজ!
করলাম চুপ।
ভাল থাকবেন। পুজো ভাল কাটুক আপনাদের।
আপনারও। আর পা-টা ভাঙবেন না।
হাহাহাহা!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।