এত দিনে বুঝেছি, যে কারণেই হোক প্রিয়ঙ্কা আর আমার মধ্যে দূরত্বটা আমাদের দু’জনকেই কষ্ট দিয়েছে । প্রায় চারটে বছর আমরা আলাদা আলাদা ভাবে জীবন কাটিয়েছি। এ ক’দিনে আমরা দু’জনেই দুজনের অভাব বুঝতে পেরেছি। আবার আমরা এক সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি।
বহু কাল বাদে আবার সহজ ও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে এক সঙ্গে পুজো কাটাব আমি। সহজ আমাদের একমাত্র সন্তান। পুজোর দিনগুলিতে সকালে পুজো পরিক্রমার শেষে হয়তো এবার রোজই রাতে আমাদের তিনজনের এক সঙ্গে বেরনো হবে। রাতভর মজা করব।
আমাদের ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাতে সেতুর কাজ করেছে সহজ। মাঝের এই চার-পাঁচ বছর আমাদের মধ্যে যে দূরত্বটা ছিল, সেই সময়টাতেও আমার আর প্রিয়ঙ্কার ভিতর যে যোগাযোগ থেকেছে, সেটাও সহজের জন্য। তা না হলে হয়তো রাগারাগির পর্যায়ে গিয়ে সম্পর্কটা শেষ হয়ে যেতেও পারত। কিন্তু সহজের জন্য আমাদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই কথা হত। ভাল কোনও সিনেমা দেখলেও আমাদের মধ্যে সেটা নিয়ে আলোচনা হত।
এবার পুজোর আগে পরিচালক হিসেবে আমি আবারও উঠে পড়ে লেগেছি। আর অভিনেতা হিসেবে আমার হাতে রয়েছে অনীক দত্তের পরবর্তী সিনেমার কাজ। তাছাড়া পুজোর আগে আবারও অজিতের চরিত্রে ফিরছি সৃজিত মুখোপাধ্যায়য পরিচালিত 'দূর্গরহস্য'-য়। এ বারের ব্যোমকেশ হচ্ছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অজিত হচ্ছি আমি। আগের বারের ব্যোমকেশে অজিতকে জায়গা ছাড়াই হয়নি সে ভাবে! কিন্তু সৃজিত অভাবনীয় ভাবে ব্যবহার করেছেন আমাকে। অঞ্জন দত্তের শুরুর দিকের ব্যোমকেশে অজিতকে একটা গুরুত্ব দেওয়া হত। কিন্তু পরে তা কমতে থাকে। এত দিন বাদে সৃজিত আবার অজিতকে সেই গুরুত্ব দিয়েছেন।
আমি যেহেতু নিজে লিখি, তাই লেখক এবং ব্যোমকেশের সহকর্মী অজিত চরিত্রটা আমার কাছে কিছুটা হলেও অন্যরকম গুরুত্ব পাচ্ছে। আসলে লেখক ও অভিনেতার ক্ষেত্রে একটা পরস্পর বিরোধিতা আছে। অন্তত পর্দার অভিনেতার প্রাথমিক দায়িত্ব দূরত্ব তৈরি করে সংযোগ স্থাপন করা। আবার লেখক হয়ে মানুষের মধ্যে মিশে যাওয়াটাই দস্তুর। এই দুটোই এক সঙ্গে চালানো বেশ কঠিন। আমি নিজের লেখক-অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যই নিজেকে যতটা সম্ভব জানালার কাঁচ তোলা গাড়ির বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে মেশানোর চেষ্টা করি। আমি মনে করি, যখন মঞ্চে নাটক করি সেটা লেখক রাহুলের বিস্তার।
আমি সাধারণভাবে কোনও বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামতে দ্বিধা করি না। কারণ, ‘স্টারডম বাবল্’ থেকে বেরিয়ে আমার লেখক সত্ত্বাটাই আমাকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে পা মেলাতে বলে।
আমি দেব নই, দেব হতেও আসিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে দেবের খুব দরকার। কিন্তু আমি ‘দেব’ নই। আমি একজন অভিনেতা হিসেবে নিজের জায়গাটা নিজে নির্ধারণ করতে পারি। বলিউডে শাহরুখ খান আছেন, তেমনই আশিস বিদ্যার্থীও আছেন। আমি আশিস হতে চাই!
অনুলিখন : মেঘদূত
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।