অনিন্দিতা রায়চৌধুরীর জগদ্ধাত্রী পুজো
কেবল উদ্যাপন নয়, পুজো মানেই তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আনুষঙ্গিক একাধিক স্মৃতি। এই যেমন ছোটবেলায় আমার কাছে জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই ছিল স্কুল ছুটি আর বাবা-মায়ের সঙ্গে রাতভর ঠাকুর দেখা। তখন আমার ঠিকানা চুঁচুড়া। জগদ্ধাত্রী পুজোর এই কয়েকটা দিনের স্মৃতি আমার কাছে বড়ই মধুর। পুজোর দিনে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়াটা প্রতি বছর বাধ্যতামূলক ছিল। দুপুরে এক জায়গা থেকে ঠাকুর দেখা শুরু করতাম। তারপর সারা রাত ঠাকুর দেখে পরের দিন সকালে বাড়ি ফেরা।
এ তো গেল ঠাকুর দেখার কথা। আমাদের ওখানে ঠাকুর ভাসানের ঐতিহ্যও ছিল অন্য রকম। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোকসজ্জা নিয়ে যতই বলি, কম বলা হবে। বিসর্জনের সময়ে শোভাযাত্রা করা হতো। এখনও সেই রীতিই বজায় আছে। বরং আরও সুষ্ঠু ভাবে সবটা আয়োজন করা হয় এখন। কত রকমের আলো! কত বৈচিত্রময় দেবীর সাজ! তবে সব কিছুর ভিড়ে আমার পছন্দের ছিল ডাকের সাজের প্রতিমা।
জগদ্ধাত্রী পুজোর আরও একটা স্মৃতি আপনাদের বলি। এটা আমার কাছে খুবই বিশেষ একটা স্মৃতি! কৃষ্ণনগরের ‘বুড়িমা’র কথা কে না জানেন! চাকরি সূত্রে বাবা কৃষ্ণনগরে থাকার সময়ে বুড়িমাকে দেখতে গিয়েছিলাম আমরা। শুনেছিলাম, তিনি নাকি খুবই জাগ্রত। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে যান মানত করতে। সেই সব কিছুই আমার কাছে একটা দ্রষ্টব্য বিষয় ছিল।
জগদ্ধাত্রীপুজো আমার কাছে বরাবরের পছন্দের। শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর, চুঁচুড়া, চন্দননগর কিংবা হুগলিকেন্দ্রিক অঞ্চলগুলোই নয়, বিগত কয়েক বছরে লক্ষ করেছি, জগদ্ধাত্রী পুজোর আমেজ কিন্তু শহর কলকাতাতেও কম কিছু নয়। সাধারণত আমাদের কাছে কালীপুজো শেষ হয়ে যাওয়া মানেই হল উৎসবেরও যেন সমাপ্তি। কিন্তু আমি পুরোপুরি চন্দননগরের মেয়ে না হলেও আমার মতো চুঁচুড়াবাসীর কাছে জগদ্ধাত্রী পুজোটাও একটা অপেক্ষা। পর পর চার দিন ঠাকুর দেখা হয়তো হয়ে উঠত না, কিন্তু যে দিন ছুটি পেতাম, জমিয়ে উদযাপন করতাম। এখন কলকাতায় থাকলেও পুজোর কয়েকটা দিন চুঁচুড়াই টানে আমাকে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।